ঘড়ির কাঁটায় তখন সন্ধ্যা ৬টা। পৌষের শীতে সংগীত পিপাসু অনেকেই এসেছেন রাজধানীর ছায়ানট মিলনায়তনে। সেখানে বাজছে তানপুরা। পাশে ঠিক করা হচ্ছে তবলার স্কেল। শুরু হবে দুই দিনব্যাপী ছায়ানটের শুদ্ধসংগীত উৎসব। এ দুই দিনে কখনো কণ্ঠে আবার কখনো বাদ্যযন্ত্রে রাগ সংগীতের সুর ছড়িয়ে দেবেন শিল্পীরা। এ দুই দিন তাঁরা শাস্ত্রীয় সংগীতের সুরের মুগ্ধতায় আবিষ্ট করে রাখবেন দর্শকদের।
প্রতি বছরের মতো এবারও পৌষের সন্ধ্যায় সংগীত পিপাসুদের শাস্ত্রী সংগীতের আবেশে ভরিয়ে দিতে ছায়ানট এ শুদ্ধসংগীত উৎসবের আয়োজন করেছে। তিনটি অধিবেশনে সাজানো হয়েছে এ উৎসব। একক ও বৃন্দ কণ্ঠ এবং যন্ত্রসংগীতে সাজানো এবারের উৎসবটি সংগীতগুরু মিথুন দে-কে উৎসর্গ করা হয়েছে।
ত্রিশ দশকের শেষের দিকে যেসব তরুণ সংগীত শিল্পী উচ্চাঙ্গ সংগীতে সুপ্রতিষ্ঠিত ছিলেন, তাঁদের মধ্যে মিথুন দে ছিলেন অন্যতম। তিনি বাংলাদেশের উচ্চাঙ্গ সংগীতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিক্ষক ছিলেন। ঢাকার শিল্পকলা একাডেমি এবং ছায়ানট সংগীত বিদ্যায়তনের শাস্ত্রীয় সংগীতের শিক্ষক ছিলেন তিনি।
শুদ্ধসংগীত উৎসবের উদ্বোধন পর্ব ছিল আজ। এর দ্বিতীয় অধিবেশন ছায়ানট অডিটোরিয়ামে শুরু হবে আগামীকাল শুক্রবার সকাল ৯টায়। চলবে বেলা ১২টা পর্যন্ত। আর তৃতীয় অধিবেশন শুরু হবে সন্ধ্যা ৬টায়। চলবে ভোর পর্যন্ত।
জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া এই আয়োজনে স্বাগত কথন ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ছায়ানটের সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমদ লিসা। এরপর প্রথম আসরের মূল অনুষ্ঠান শুরু হয় ছায়ানটের শিল্পীদের মূলতানী রাগে বৃন্দ পরিবেশনার মধ্য দিয়ে। এ পরিবেশনা দর্শকদের মুগ্ধতায় ভরিয়ে রাখে। এরপর দীপ্তি সমদ্দার দীপু পুরিয়া রাগে দর্শকদের সুরের মূর্ছনায় আবিষ্ট করে রাখেন। পুরিয়া রাগের পর সেতারবাদন শুরু করেন এবাদুল হক সৈকত। তাঁর মনোমুগ্ধকর সেতারবাদনের সময় অডিটোরিয়ামে ছিল পিন পতন নিস্তব্ধতা। সৈকতের পর মারবা রাগ পরিবেশন করেন সৌমিতা বোস। মারবা রাগের মায়া শেষ হতেই তবলাবাদন নিয়ে আসেন ঢাকার কুমার প্রতিবিম্ব। রাত বাড়তে থাকে। কিন্তু মিলনায়তনে দর্শক কমে না। সংগীত প্রেমীরা সুরের ঝংকারে উদ্বেলিত হন। একপর্যায়ে প্রথম দিনের সর্বশেষ পরিবেশনায় নিয়ে আসেন সিলেটের পারমিতা মুমু।
ছায়ানট বিদ্যায়তনের সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমদ লিসা বলেন, ‘এ সংগীত উৎসবে আমরা দুদিন সুরের ভুবনে থাকি। সংগীতের মাধ্যমে শুভবুদ্ধির পাশাপাশি মানুষে মানুষে সম্প্রীতি বাড়ানো চেষ্টা করি। আমরা চাই একটি মানবিক সমাজ গড়ে উঠুক। প্রতি বছর এই সংগীত আসরে তরুণদের ব্যাপক উপস্থিতি দেখা যায়। এটা আমাদের জন্য আশার জায়গা। নতুন প্রজন্ম আনন্দের সঙ্গে এই উৎসবে আসছে, রাগ সংগীত শুনছে। এটা আমাদের জন্য অনেক বড় অর্জন। গত ১৪ বছর ধরে এই শুদ্ধসংগীতের উৎসবের আয়োজন হচ্ছে।’
শুদ্ধসংগীত উৎসবের দ্বিতীয় দিনের অধিবেশনে শুক্রবার সকালে থাকবে ছায়ানটের শিল্পীদের বৃন্দ বা দলীয় পরিবেশনা। এরপর বাঁশিবাদনে থাকবেন ঢাকার মর্তুজা কবীর মুরাদ, কণ্ঠসংগীতের পরিবেশনা নিয়ে থাকবেন শেখর মণ্ডল, প্রিয়াঙ্কা গোপ, সুস্মিতা দেবনাথ শুচি ও ধ্রুব সরকার। তৃতীয় অধিবেশনের শুরুতে থাকবে ছায়ানটের দলীয় কণ্ঠসংগীতের পরিবেশনা। এরপর থাকবে দলীয় তবলা ও বেহালাবাদন। এরপর বাঁশিবাদনের পরিবেশনা নিয়ে থাকবেন ঢাকার মো. মনিরুজ্জামান, কণ্ঠসংগীতের পরিবেশনায় থাকবেন ঢাকা থেকে খায়রুল আনাম শাকিল, রেজোয়ান আলী, অসিত দে, লতিফুন জুলিও, সুপ্রিয়া দাশ, কানিজ হুসনা আহম্মাদী সিম্পী, মিরাজুল জান্নাত সোনিয়া, মৌমিতা হক সেঁজুতি, সুপ্রিয়া দাশ, আফরোজা রুপা, প্রিয়ন্ত দেব, সিতার তাহমিদ, শৌণক দেবনাথ এবং নওগাঁর বিপুল কুমার। এ ছাড়া সংগতে থাকবেন সুরাজ নিরওয়ান, বাদল চৌধুরী, বিজন চন্দ্র মিস্ত্রী, গৌতম সরকার, ইফতেখার আলম ডলার, স্বরূপ হোসেন, শুষেণ কুমার রায়, সবুজ আহমেদ, প্রশান্ত ভৌমিক, টিংকু শীল, অভিজিৎ কুণ্ড, ধ্রুব সরকার, মোহসিইউ জৌভিয়াল জিসাস ভুবন ও শৌণক দেবনাথ।