করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে সংক্রমণ বেশি তীব্র। এর প্রভাব পড়ছে শোবিজেও। এর মধ্যে আগামী ১৪ এপ্রিল থেকে ‘সর্বাত্মক’ লকডাউনের কথা ভাবছে সরকার। এমন পরিস্থিতিতে চলচ্চিত্রের কাজ আস্তে ধীরে করলেও খুব সমস্যা হবে না। কিন্তু লকডাউনের ফলে বেশি ক্ষতির মুখে পড়বে নাটক ইন্ডাস্ট্রি। কারণ সামনে পহেলা বৈশাখ ও ঈদের মতো বড় দুটি উৎসব। এই দুই উৎসবের জন্য যে নাটকগুলো নির্মিত হয় তা মূলত এই সময়েই শ্যুটিং হয়। এমন সময়ে এক-দুই সপ্তাহ কাজ বন্ধ থাকা মানে বিশাল ক্ষতি। তাই চলতি লকডাউনে শ্যুটিং বন্ধের ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা না পাওয়ায় নাটকের শ্যুটিং চলছে। নাটক-সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো সিদ্ধান্ত নেয় সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে শ্যুটিং শেষ করার। কিন্তু ১৪ এপ্রিল থেকে সর্বাত্মক লকডাউনে তারা শ্যুটিংয়ের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নিয়েছে জানতে চাইলে ছোটপর্দার শিল্পী সংঘের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রওনক হাসান বলেন, ‘গত বছরও সরকার লকডাউন ঘোষণা করার আগে থেকেই আমরা শ্যুটিং বন্ধ করে দিয়েছিলাম। এবারও যেহেতু সেভাবেই লকডাউন হচ্ছে, ফলে আমরা সরকারের সিদ্ধান্তই মেনে নেব। এমনিতেই শ্যুটিং বন্ধ রাখার কোনো ঘোষণা না পেয়েও আমরা করোনা সচেতনতার জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যারা জরুরি শ্যুটিং শেষ করতে চান তারাই কেবল কাজ করবেন। তা ছাড়া কোনো শিল্পী কাজ করতে না চাইলে জোর করা যাবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘লকডাউন মানেই দেশের সর্বত্র স্থবির হয়ে যাওয়া। ফলে শুধু নাটকের কী পরিমাণ ক্ষতি হবে সেটি দেখার বিষয় নয়। একসঙ্গে সবাই করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারলে আমরা আবারও ঘুরে দাঁড়াতে পারব।’
অন্যদিকে, শ্যুটিং বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পরিচালক সমিতির সদ্য নির্বাচিত মহাসচিব শাহীন সুমন। গতকাল সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। শাহীন সুমন বলেন, ‘সরকার যদি সর্বাত্মক লকডাউন দেয়, তাহলে তো গাড়ি চলাচল একেবারেই বন্ধ থাকবে। তাছাড়া করোনাও ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। তাই আমরা কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করি এবং শ্যুটিং বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিই। লকডাউন তোলার পর আবার পরবর্তী সিদ্ধান্ত জানাব।’ শাহীন সুমন জানান, লকডাউন শুরুর প্রথম দিন থেকে তাদের সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।
লকডাউনের কারণে বেশ কিছু ছবির কাজ স্থগিত হয়ে পড়েছে। মাহিয়া মাহি ও সাইমন সাদিক অভিনীত এই পরিচালকের ‘গ্যাংস্টার’ ছবির কাজ বন্ধ রেখেছেন তিনি। ‘অমানুষ’ নামে নতুন সিনেমার শ্যুটিং করছিলেন পরিচালক অনন্য মামুন। গত ৪ এপ্রিল থেকে পুরো ইউনিট নিয়ে পরিচালকের যাওয়ার কথা ছিল বান্দরবানে। সেখানে টানা ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত ছবির শ্যুটিং শিডিউল নেওয়া ছিল। কিন্তু করোনার প্রকোপে পরিচালক-প্রযোজক ছবির কাজ পিছিয়ে দেন। মামুন বলেন, ‘ছবির শ্যুটিংয়ে অনেক লোকের অংশগ্রহণ থাকে। এতে সংক্রমণ আরও বেশি হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। তাই সবার সুরক্ষার কথা ভেবে শ্যুটিং পিছিয়েছি। আর এখন তো জরুরি লকডাউন দেওয়া হচ্ছে। তাই এখন শ্যুটিং নিয়ে ভাবছি না।’ ছবিটিতে অভিনয় করছেন নিরব, মিথিলাসহ অনেকেই।
পাবনায় ‘অন্তরাত্মা’ ছবির টানা এক মাসের শ্যুটিং শেষে ঢাকায় ফিরেছেন শাকিব খান। চলতি সপ্তাহে নতুন ছবির শ্যুটিং শুরু হওয়ার কথা। চিত্রনায়িকা বুবলীও তার ছবি ও বিজ্ঞাপনচিত্রের শ্যুটিং শেষে পুরোপুরি প্রস্তুত। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী সব ঠিক থাকলে এক বছর পর ক্যামেরার সামনে দেখা যেত ঢালিউডের আলোচিত এই জুটিকে। তা আর হলো না। দুজনের একসঙ্গে ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে লকডাউন শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। ‘লিডার : আমিই বাংলাদেশ’-এর পরিচালক তপু খান এমনটি জানান। প্রথমবারের মতো সিনেমায় হাত দিয়ে শুরুতেই ধাক্কা খেলেন তিনি। তপু বলেন, ‘এই সময়ে আমাদের হাতে কিছুই নেই। সব প্রস্তুতি ছিল। এতসব গুণী শিল্পী নিয়ে কাজ, তাদের সবার স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যাপারটাও দেখতে হবে। তা ছাড়া শাকিব খান শ্যুটিংয়ে থাকলে অনেক ভক্ত দেখতে আসেন। তাতে সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা আছে। লকডাউনে এমনটা করতে চাইনি।’
‘বুবুজান’ ছবির ১৭ দিনের শ্যুটিং শেষ করে রেখেছিলেন শামীম আহমেদ। আরও ১২ দিনের শ্যুটিং বাকি। এ মাসেই শ্যুটিং করার পরিকল্পনা করেছিলেন পরিচালক। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত পাল্টেছেন তিনি। শ্যুটিং স্থগিত করেছেন। তবে লকডাউনের সময়টা কাজে লাগাতে ভারতে অন্য ছবির পোস্ট প্রোডাকশনের কাজ এগিয়ে নিচ্ছেন। বাপ্পী চৌধুরী অভিনীত অপূর্ব রানার ‘যন্ত্রণা’সহ ১২টি ছবির শ্যুটিং পিছিয়ে গেছে। পরিস্থিতি দেখে তারপরই এসব ছবির শ্যুটিং নিয়ে ভাববেন পরিচালক ও প্রযোজকরা।
শুধু শ্যুটিং নয়, লকডাউনে বন্ধ হচ্ছে সব সিনেমা হল। হল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির পক্ষ থেকে মিয়া আলাউদ্দিন জানান, সংগঠনের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে সব হল বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।