সদ্য প্রয়াত বাবা রাধা গোবিন্দ চৌধুরীকে নিয়ে স্মৃতিচারণা করেছেন অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী। বাবার পারলৌকিক ক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর আজ শুক্রবার সকালে বাবার স্মরণে ফেসবুকে এক পোস্ট দিয়েছেন এই অভিনেতা।
ছোটবেলার স্মৃতি স্মরণ করতে গিয়ে চঞ্চল লেখেন, ‘প্রত্যেকটা সন্তান ছোটবেলা থেকেই মায়ের গলায় ঝুলে থাকে। মানে, কারণে-অকারণে মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে থাকে। যেটা আমিও করেছি, এখনো সুযোগ পেলেই মায়ের গলা জড়িয়ে ধরি। কারণ, একটাই…ভালো লাগে, শান্তি লাগে…ঐশ্বরিক সুখ পাই। বাবার ব্যাপারটা একটু ভিন্ন ছিল শুরু থেকেই…অন্যদের কথা বলতে পারব না, আমারটা বলি… বাবার গলা জড়িয়ে ধরাতে আমি ছোটবেলায় কখনোই সাবলীল ছিলাম না। বেশ ভয়ই পেতাম ছোটবেলায়, যদি থাপ্পড়-টাপ্পড় মারেন। বাবার মধ্যে একটা গুরুগম্ভীর ব্যাপার দেখতাম, সেই সাথে মনে হয় অর্থনৈতিক টানাপোড়েনের কারণেও তাঁর মেজাজটা প্রায়শই উচ্চে অবস্থান করত। সে কারণেই গলা জড়িয়ে ধরা তো দূরের কথা, পারতপক্ষে সামনে খুব কম যেতাম। আর পড়ালেখায় ফাঁকি দেওয়ার কারণে, কপালে প্রায়ই পাতলা জোড়া বেতের হালকা/ভারী প্রহার তো ছিলই। শিক্ষক মানুষ তো, বাবার কালেকশনে প্রচুর জোড়া বেত থাকত।’
বাবার স্মৃতি স্মরণ করে তিনি আরও লেখেন, ‘যা-ই হোক, সময় বদলায়, মানুষও বদলায়। আমরা বড় হবার সাথে সাথে অন্য এক বাবাকে পেলাম…বেশ হাসিখুশি, মাঝেমধ্যে মজা ফুর্তিও করেন নাতি-পুতিদের সাথে। অবশ্য তত দিন অর্থনৈতিক সংকট কেটে গেছে অনেকটা। মনে হয় এটা নিয়েই একটা বিরাট প্রেশার ছিল ভদ্রলোকের মাথায়। যাহোক, কবে কোন ফাঁকতালে, কোন সুযোগে, আনন্দের আতিশয্যায় অথবা অপ্রাপ্তিতে বাবার গলা জড়িয়ে ধরেছিলাম, মনে নেই। সম্ভবত আমার ঢাকার ফ্ল্যাটে গৃহপ্রবেশের দিন, সে কারণেই বোধ হয় ভদ্রলোক গলা জড়িয়ে ধরার প্রতিবাদ করেননি। এরপর থেকে আমি বাড়িতে গেলে, কিংবা ভদ্রলোক ঢাকা এলে, সুযোগ পেলেই গলা জড়িয়ে ধরতাম। এভাবেই চলছিল অনেকগুলো বছর। দৃশ্যটা ভাবা যায়? সুযোগ পেলেই প্রায় ৫০ বছরের বয়স্ক ছেলেটা, তার ৯০ বছরের বাবার গলা জড়িয়ে ধরে আছে…!! আমার খুব ভালো লাগত বাবাকে জড়িয়ে ধরে…বাবার বুকের ধুকধুক আওয়াজটা আমার বুক দিয়ে অনুভব করতাম আর ভাবতাম, ওই প্রাণ থেকেই এই প্রাণের জন্ম!! কী যে ভালো লাগা…! কী যে ভালো লাগা… …!!’
বাবার সঙ্গে শেষ দিনগুলোর স্মৃতি স্মরণ করে চঞ্চল আরও লেখেন, ‘বাবাকে শেষ জড়িয়ে ধরেছিলাম মাস দুয়েক আগে, আমার বাসায়। তারপর বাবা বাড়ি ফিরে গেল। ৩০ দিন আগে ঢাকা ফিরল অসুস্থ অচেতন অবস্থায়…হাসপাতালে বিছানায় অচেতন অবস্থায় ১৫ দিন থেকে, হারিয়ে গেল কোথায় যেন! আর আমাদের গলা জড়িয়ে ধরা হলো না…জানি না আবার কবে দেখা হবে, গলা জড়িয়ে ধরব, আর চোখ বন্ধ করে অনুভব করব, এক প্রাণ থেকে আরেক প্রাণের জন্ম কীভাবে হয়েছিল! গতকাল বাবার পারলৌকিক ক্রিয়া সম্পন্ন হলো। কত কত মানুষ এলো বাবার অনুষ্ঠানে! সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা। আমার বাবাকে আপনাদের প্রার্থনায় রাখবেন…বাবা, তুমি ভালো থেকো।’
দুই সপ্তাহ ধরে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসা থাকার পর গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় তাঁর মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হলে অবস্থার অবনতি ঘটে। চঞ্চল চৌধুরীর বাবা রাধা গোবিন্দ চৌধুরী এলাকায় দুলাল মাস্টার বলে পরিচিত।