কানাডাপ্রবাসী নাগরিক নাট্যদলের নাট্যশিল্পী মাহমুদুল ইসলাম সেলিম ২৯ নভেম্বর সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট দিয়েছেন শিল্পকলা একাডেমির বর্তমান মহাপরিচালক সৈয়দ জামিল আহমেদ ও তাঁর নাটকের দল স্পর্ধার বেশ কিছু কার্যক্রম নিয়ে। তিনি লিখেছেন, বাংলাদেশ শিল্পকলা একডেমির মহাপরিচালক হওয়ার আগে বেশ কয়েকটি প্রযোজনার জন্য অনুদান পেয়েছে সৈয়দ জামিল আহমেদের দল স্পর্ধা, যা সাধারণত দেশের অন্য নাট্যদলগুলো পায় না। এই সূত্র ধরে তিনি দাবি করেছেন, বিগত সরকারের ১৫ বছরে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি থেকে সবচেয়ে বেশি সুবিধা ভোগ করেছেন সৈয়দ জামিল আহমেদ। তিনি ছিলেন সাবেক মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর ঘনিষ্ঠজন এবং একচেটিয়া সুবিধাভোগী। তাঁর এই পোস্টকে ঘিরে নাট্যশিল্পীরা নানা মন্তব্য করছেন, আলোচনা-সমালোচনায় মুখর হয়েছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল স্পর্ধা নাট্যদল প্রতিবাদ জানিয়ে পোস্ট দেয় ফেসবুকে, জানায় অনুদানপ্রাপ্ত প্রযোজনাগুলো নিয়েও।
মাহমুদুল ইসলাম সেলিম তাঁর পোস্টে লিখেছেন, ‘রিজওয়ান’ নাটক করার সময় সৈয়দ জামিল আহমেদ সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে অনুদান নেন ১৫ লাখ টাকা এবং লিয়াকত আলী লাকীর সহযোগিতায় শিল্পকলা একাডেমির মহড়া কক্ষ ও হল ব্যবহার করেন প্রায় এক মাস বিনা ভাড়ায়। ‘রাজনৈতিক বাস্তবতা’ নাটক করার জন্য মন্ত্রণালয়ের অনুদান নেন ১৫ লাখ টাকা এবং শিল্পকলা একাডেমি থেকে নেন ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা। নীলিমা ইব্রাহিমের গল্প থেকে ‘বীরাঙ্গনা’ নাটক করার সময় মন্ত্রণালয় থেকে নেন ১২ লাখ টাকা এবং শিল্পকলা একাডেমি থেকে নেন সাড়ে ৪ লাখ টাকা।
মাহমুদুল ইসলাম সেলিম আরও লিখেছেন, ‘সৈয়দ জামিল আওয়ামী লীগ শাসনামলের বিগত ১৫ বছরে শিল্পকলা একাডেমি ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় থেকে যে বিপুল পরিমাণ সুবিধা নিয়েছেন, বাংলাদেশের কোনো নাট্যদল বা কোনো নাট্যজন তার শতভাগের এক ভাগও কখনো নেয়নি।’
সেলিমের এহেন বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছে স্পর্ধা নাট্যদল। তারা জানিয়েছে, মাহমুদুল ইসলাম সেলিমের এমন বক্তব্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। স্পর্ধা প্রযোজিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বিশেষ আবেদন সৃষ্টি করা নাটকের বিষয়ে তিনি মিথ্যাচার করেছেন। স্পর্ধা বিশ্বাস করে, রাষ্ট্রের দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে তারা সমাজে যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে, তার কারণে এই অনুদান পাওয়া এই দলের অধিকার এবং স্পর্ধা সব সময়ই প্রযোজনা শেষে আয়-ব্যয়ের হিসাব জনসমক্ষে প্রকাশ করেছে।
এ বিষয়ে স্পর্ধার মুখপাত্র তানভীর আহমেদ বলেন, ‘এই অসাধু ব্যক্তি (মাহমুদুল ইসলাম সেলিম) অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে নির্লজ্জভাবে স্পর্ধার সাবেক প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং গবেষণা ও নাট্যনির্দেশনার জন্য আন্তর্জাতিকভাবে সুখ্যাত ব্যক্তিত্ব প্রফেসর ড. সৈয়দ জামিল আহমেদকে নিয়ে মিথ্যাচার করছেন। প্রফেসর সৈয়দ জামিল আহমেদ স্পর্ধার সাংগঠনিক ও আর্টিস্টিক কাজের জন্য গত ৬ বছরে একটি টাকাও নেননি, বরং তাঁর ব্যক্তিগত টাকা অনেকবার ঋণ করেছে স্পর্ধা। তিনি (সেলিম) এই বানোয়াট মিথ্যাচারে স্পর্ধার যে মানহানি করেছেন, তার জবাবদিহি করতে হবে।’ শুধু তা-ই নয়, এই পোস্টের প্রতিবাদ না জানিয়ে যাঁরা সমর্থন দিচ্ছেন, তাঁদের উদ্দেশ্য নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন তানভীর। সেই সঙ্গে সামাজিক গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা নিয়ে থিয়েটারের ভাষায় কাজ করে চলা তারুণ্য ও তাঁদের আত্মনিবেদিত কাজকে হেয় করায় নিন্দা জানিয়েছেন তানভীর।
স্পর্ধার প্রযোজনাগুলোর অর্থপ্রাপ্তি ও ব্যয়ের যে হিসাব সেলিম দিয়েছেন, সেই হিসাবের পরিপ্রেক্ষিতে সৈয়দ জামিল আহমেদ নির্দেশিত স্পর্ধা ও নাটবাংলা প্রযোজিত তিনটি নাটকের হিসাব দিয়েছেন তানভীর। তিনি জানিয়েছেন, ‘রিজওয়ান’ নাটকের জন্য সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ১০ লাখ টাকা নাটবাংলাকে বরাদ্দ দেয়। ভ্যাট-ট্যাক্স কেটে যার পরিমাণ দাঁড়ায় ৯ লাখ ২৯ হাজার ৭০৪ টাকা। মোট ব্যয় ১৮ লাখ ৩৬ হাজার ২৫০ টাকা। অনুদান ও টিকিট থেকে আয় করা টাকা সব অভিনেতা ও কলাকুশলীর সম্মানী প্রদানের পর উদ্বৃত্ত ৪ লাখ ১৭ হাজার টাকা রাষ্ট্রকে ফেরত দেওয়া হয়, যা সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় বন্যার্তদের তহবিলে দান করে।
সৈয়দ জামিল আহমেদ ও মাহমুদুল ইসলাম সেলিম। ছবি: সংগৃহীত
‘জীবন ও রাজনৈতিক বাস্তবতার’ জন্য সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ১০ লাখ টাকা দেয় ২০১৯ সালে। ভ্যাট-ট্যাক্স বাদ দিয়ে দলের জন্য ব্যবহারযোগ্য টাকার পরিমাণ দাঁড়ায় ৯ লাখ ২৯ হাজার ৭০৪ টাকা। এই নাটকে ব্যয় হয় ১৮ লাখ ৮৮ হাজার ৪২৬ টাকা। কিন্তু আওয়ামীপন্থী কিছু নাট্যকর্মীর বাধার কারণে ঠিকভাবে প্রদর্শনী করতে না পারায় দল ব্যাপকভাবে অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। কয়েক লাখ টাকা ধার করে অভিনেতাদের বিল পরিশোধ করতে হয়।
‘আমি বীরাঙ্গনা বলছি’ নাটক শিল্পকলার সহযোগিতা পায় ৫ লাখ টাকার। নাটকের কলাকুশলীর সম্মানী বাবদ এই টাকা খরচ হয়। কলাকুশলীর সম্মানীসহ নাটকে ব্যয় হয় ১৩ লাখ ২৮ হাজার ৩৬০ টাকা। স্পর্ধা আয়োজিত বাহাস অনুষ্ঠানে এই সব হিসাব জনসমক্ষে প্রকাশ করেছে দলটি।
তানভীর আহমেদ জানিয়েছেন, শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকের দায়িত্ব গ্রহণ করায় সৈয়দ জামিল আহমেদ আগামী দুই বছরের জন্য স্পর্ধার কর্মকাণ্ড থেকে বিরতি নিয়েছেন। তাই তাঁকে ছাড়াই দলটি তাদের ‘বিস্ময়কর সবকিছু’ প্রযোজনা নিয়ে মঞ্চে আসছে এই মাসেই।