সোহানুর রহমান সোহানের মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ শোবিজ
বিনোদন

সোহানুর রহমান সোহানের মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ শোবিজ

ঢাকাই সিনেমার জনপ্রিয় নির্মাতা সোহানুর রহমান সোহান মারা গেছেন। আজ বুধবার সন্ধ্যায় রাজধানীর উত্তরার একটি বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। সোহানুর রহমানের মৃত্যুতে শোবিজে শোক নেমেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তারকারা স্মরণ করছেন তাঁর সঙ্গে নানান স্মৃতি। সোহানুর রহমানকে নিয়ে আজকের পত্রিকার কথা হয় তারকাদের সঙ্গে। তারকারা জানিয়েছেন সোহানুর রহমান সোহানের সঙ্গে সম্পর্ক ও তাঁর সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা।

অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন। ছবি: সংগৃহীত বুঝতে পারিনি জীবনের শেষ দোয়া চেয়ে নিল সে

—ইলিয়াস কাঞ্চন, অভিনেতা

সোহান ও আমার ক্যারিয়ার শুরু একসঙ্গে। একই বছর, ১৯৭৭ সালে আমি অভিনয় শুরু করি, আর সোহান কাজ শুরু করে শিবলি সাদিকের সঙ্গে। তাঁর প্রথম সিনেমাতেও আমি অভিনয় করেছি। আমার নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনেও সে আমার পাশে ছিল সব সময়। নিরাপদ সড়ক চাই-এর কার্যকরী পরিষদের সদস্যও ছিল সে। সব মিলিয়ে আমার জীবনের একটা বড় অংশ ছিল সোহান। সেদিন এফডিসির কমপ্লেক্স উদ্বোধনের দিন তাঁর সঙ্গে আমার শেষ দেখা। বরাবরই যা হয়, দেখা হলেই দোয়া চায়, এবারও চেয়েছে। বুঝতে পারিনি জীবনের শেষ দোয়া চেয়ে নিল সে। ভালো মানুষ ছিলেন বলেই হয়তো আল্লাহ তাঁকে শান্তির মৃত্যু দিয়েছেন। ঘুমের মধ্যেই চলে গেল আমার প্রিয় মানুষটি। তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করছি।

অভিনেত্রী মৌসুমী। ছবি: সংগৃহীত খুব কষ্ট লাগছে, তিনি ট্রিটমেন্টটা নিতে পারলেন না

—মৌসুমী, অভিনেত্রী

কী বলব এই সময়ে! বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। সোহান ভাই তো আমার জীবনের অংশ। তাঁর ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমা দিয়েই আমি চলচ্চিত্র জগতে এসেছি। তাঁর যত সৃষ্টি, যত সিনেমা, যত ভালো কাজ সব স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে। তিনি অনেক দিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন। তাঁর ট্রিটমেন্ট হওয়ার কথা ছিল। খুব কষ্ট লাগছে, তিনি ট্রিটমেন্টটা নিতে পারলেন না। তার আগেই চলে গেলেন। অনেক দোয়া করি সোহান ভাই, আল্লাহ যেন আপনাকে ভালো রাখেন।

অভিনেতা ওমর সানি। ছবি: সংগৃহীত তাঁর মতো জ্ঞানী আর গুণী নির্মাতা দেশের সম্পদ
—ওমর সানি, অভিনেতা

এমন মৃত্যুর সংবাদ থমকে দেয় সবাইকে। স্ত্রী চলে যাওয়ার একদিন পরেই চলে গেলেন গুণী নির্মাতা সোহানুর রহমান সোহান। কী বেদনাদায়ক ঘটনা। তাঁর সঙ্গে তো আমার পিতা-পুত্রের সম্পর্ক। মান-অভিমানও ছিল আমাদের মাঝে। আমি মনে করি, তিনি মৌসুমীকে সিনেমায় এনেছিলেন বলেই আজ তাঁকে আমি জীবনসঙ্গী হিসেবে পেয়েছি। মৌসুমীর কাছেও তো তিনি পিতার সমান। আমি নিজেও তাঁর সিনেমায় অভিনয় করেছি। তাঁর মতো জ্ঞানী আর গুণী নির্মাতা দেশের সম্পদ। দোয়া করি আল্লাহ তাঁকে ভালো রাখুন।

অভিনেত্রী অপু বিশ্বাস। ছবি: সংগৃহীত বাংলা চলচ্চিত্রে অমর হয়ে থাকবেন তিনি

—অপু বিশ্বাস, অভিনেত্রী 

সোহান ভাইয়ের মৃত্যুর সংবাদটা শোনার পর বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। গতকাল তাঁর স্ত্রী মারা গেছেন। ভেবেছিলাম সেই খবরটাই মনে হয় ছড়িয়েছে। যখন শুনলাম সত্যি তিনি আর নেই তখন আমার মধ্যে একটা শূন্যতা কাজ করছিল। ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না এটা কত কষ্টের। আমার সৌভাগ্য হয়েছে তাঁর মতো গুণী নির্মাতার সঙ্গে কাজ করার। সোহান ভাইয়ের সঙ্গে প্রথম কাজ করেছি ‘কথা দাও সাথী হবে’ সিনেমায়। তাঁর সঙ্গে আমার খুব মিষ্টি মধুর সম্পর্ক ছিল। আমার মনে আছে কথা দাও সাথী হবে সিনেমার শুটিং হওয়ার কথা ছিল গুলশানে। ব্যস্ত এলাকা হওয়ার কারণে আমি শুটিং করতে রাজি হচ্ছিলাম না। তখন ওনার সঙ্গে আমার চুক্তি হয়েছিল প্রত্যেকটা শটের পর আমাকে কিটক্যাট চকলেট দিতে হবে। পরে তিনি পকেটে ২০ টির মতো চকলেট রেখে দিয়েছিল। সবগুলো চকলেট নেওয়ার জন্য অল্প করে শট দিচ্ছিলাম। এ কারণে পরে আমি তাকে সরি বলেছিলাম। তিনি হেসে দিয়ে বলল ‘আরে পাগল তুমি তো আমার মেয়ের মতো। আমি জানতাম তুমি সব চকলেট খাবে। এ জন্য আমিও অল্প করে শট নেওয়ার পর ওকে ওকে বলছিলাম। যাতে তুমি সব নিতে পারো।’

আরও কত কথা যে আছে তাঁকে নিয়ে। এই মুহূর্তে একটি কথা খুব মনে পড়ছে। একবার চ্যানেল আইতে জন্মদিনের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন সোহান ভাই। সেখানে তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল আপনার হাত ধরে অনেক জনপ্রিয় শিল্পী তৈরি হয়েছে। বিশেষ এ দিনে এখানে আরেকজন অতিথি থাকলে আপনার পাশে কোন শিল্পীকে রাখতে চান। তিনি বলেছিলেন, আমি অপু বিশ্বাসকে আমার পাশে দেখতে চাইতাম। এটা আমার জীবনের অন্যতম বড় কমপ্লিমেন্ট। তাঁর কাছ থেকে এ রকম মন্তব্য শোনা সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার। এ ছাড়া আমার প্রযোজিত প্রথম সিনেমা লাল শাড়ির প্রিমিয়ারে তিনি উপস্থিত ছিলেন। তাঁকে কাছে পেয়ে নিজেকে ভাগ্যবান মনে হচ্ছিল। সোহান ভাই বাংলা চলচ্চিত্রে অমর হয়ে থাকবেন। একটাই চাওয়া সৃষ্টি তিনি যেখানেই থাকুক ভালো থাকুক। তাঁর পরিবার যেন এই কঠিন সময়ে শক্ত থাকতে পারে।

দীর্ঘদিন ধরেই স্নায়বিক সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। টাঙ্গাইলে স্ত্রীর দাফন শেষে উত্তরার বাসভবনে ফিরে আসেন সোহান। আজ দুপুরে ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লে সন্ধ্যা নাগাদ তাঁর সাড়া মিলছিল না। এ অবস্থায় তাঁকে দ্রুত উত্তরার ক্রিসেন্ট হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। তকাল রাতেই মারা গেছেন সোহানের স্ত্রী প্রিয়া। স্ত্রীর মৃত্যুর ২৪ ঘণ্টা পার না হতেই তিনিও চলে গেলেন না ফেরার দেশে।

সোহানুর রহমান সোহান ক্যারিয়ার শুরু করেন নির্মাতা শিবলী সাদিকের সহকারী পরিচালক হিসেবে। নির্মাতা হিসেবে তাঁর আত্মপ্রকাশ ১৯৮৮ সালে ‘বিশ্বাস অবিশ্বাস’ সিনেমা দিয়ে। ১৯৯৩ সালে মুক্তি পাওয়া ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমা দিয়ে নির্মাতা হিসেবে জনপ্রিয়তা পান তিনি। সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত আলোচিত সিনেমাগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’, ‘আমার দেশ আমার প্রেম’, ‘স্বজন’, ‘আমার ঘর আমার বেহেশত’, ‘অনন্ত ভালোবাসা’, ‘স্বামী ছিনতাই’, ‘আমার জান আমার প্রাণ’, ‘পরান যায় জ্বলিয়া রে’ ইত্যাদি।

Source link

Related posts

‘ব্যাংক-গোডাউনের জন্য ভাড়া হবে’ গৌরীপুরের প্রিয়া সিনেমা হল

News Desk

নিজের সিনেমাকে বিতর্কিত করছেন আমির

News Desk

ওটিটির এসব অশ্লীলতা, নগ্নতা বন্ধ করা দরকার: সালমান খান

News Desk

Leave a Comment