চলে গেলেন খ্যাতিমান গজলশিল্পী ভুপিন্দর সিং। সোমবার রাত পোনে আটটায় মুম্বাইতে মারা যান তিনি। তাঁর স্ত্রী সংগীতশিল্পী মিতালি মুখার্জী খবরটি নিশ্চত করেন। ভুপিন্দর সিংয়ের স্মরণে এই বিশেষ প্রতিবেদন
১. ১৯৪০ সালে পাঞ্জাবের অমৃতসরে জন্ম ভূপিন্দরের। বাবা ছিলেন শিক্ষক। প্রথম দিকে গান ভালো না লাগলেও পরিবারের চাপের গান শিখতে হত।
২. ভূপিন্দর সিংয়ের সঙ্গীতজীবনের শুরু ‘অল ইন্ডিয়া রেডিও’ দিল্লিতে। গিটার বাজাতেন সেখানে। মাঝেমধ্যে গানও গাইতেন। ক্যারিয়ারের প্রথম দিকে তিনি যন্ত্রসঙ্গীত শিল্পী হিসাবেই পরিচিত ছিলেন।
৩. ১৯৬০ সালে খ্যাতিমনা কবি বাহাদুর শাহ জাফরের জন্মবার্ষিকীতে কবির লেখা একটি গান গাওয়ার সুযোগ হয় ভূপিন্দরের। সেই গান শুনে সঙ্গীত পরিচালক মদনমোহন তাঁকে ডেকে পাঠান মুম্বইতে। ১৯৬৪ সালে চেতন আনন্দ পরিচালিত ‘হাকিকত’ সিনেমার গানে কণ্ঠ দেন ভুপিন্দর। সিনেমাটি জাতীয় পুরস্কার পায় এবং ‘হো কে মজবুর মুঝে উসনে ভুলা হোগা’ গানটি জনপ্রিয় হলে বেশ পরিচিতি মেলে ভুপিন্দরের।
৪. সংগীতের জীবনে নৌসাদ, সলিল চৌধুরী, খৈয়ম, জয়দেব, স্বপন জগমোহন, আরডি বর্মণ, রবীন্দ্র জৈন, রাজেশ রোশন, বনরাজ ভাটিয়া, বাপ্পি লাহিড়িসহ কালজয়ী অনেক সংগীতজ্ঞের সঙ্গে কাজ করেছেন ভুপিন্দর।
৫. গানের পাশাপাশি গিটার বাজাতেও ভালোবাসতেন ভুপিন্দর সিং। রাহুল দেব বর্মণের একাধিক গানে গিটার বাজিয়েছেন তিনি। ‘চুরালিয়া হ্যায় তুমনে যো দিল কো’ গানের পুরোটা গিটার বাজিয়েছেন তিনি।
৬. সিনেমার জন্য গান গাইলেও গজলকে কণ্ঠছাড়া হতে দেননি কখনো। গজলের প্রতি তাঁর ভালেবাসা ছোটবেলা থেকেই। পত্রিকায় প্রকাশিত বিভিন্ন কবিতা খাতায় টুকে তাতে সুর দিয়ে বন্ধুদের শোনাতেন। সিনেমায়া নিয়মিত গাওয়ার সময়ও গজলের এলপি প্রকাশ হতো তাঁর। শিল্পী পঙ্কজ উদাস জানিয়েছেন, তাঁরা দুজন একত্রে ২১ বছর ধরে ‘খাজানা’ নামে একটি গজল উৎসব পরিচালনা করতেন।
৭. ভুপিন্দরের গাওয়া কয়েকটি জনপ্রিয় গান হলো ‘দিল ঢুনডতা হ্যায়’(কিনারা), ‘নাম গুম যায়ে গা (কিনারা), ‘থোড়ি সি জমিন থোড়া আসমান’ (সিতারা), ‘এক আকেলা ইস শহর মে’ (ঘরোন্দা), ‘কবে যে কোথায় কী যে হল ভুল’(ত্রয়ী) ইত্যাদি।
৮. ভুপিন্দর সিংয়ের স্ত্রী মিতালি মুখার্জী বাংলাদেশের ময়মনসিংহের সন্তান। তিনিও সংগীতের এক উজ্জ্বল নাম। ১৯৮২ সালে বাংলাদেশের ‘দুই পয়সার আলতা’ সিনেমায় ‘এই দুনিয়া এখন তো আর সেই দুনিয়া নাই’ গানটি গেয়ে জাতীয় পুরস্কার জিতেছেন। ভুপিন্দরেরর সঙ্গে বিয়ের পর দুজনে একসঙ্গে অসংখ্যা অনুষ্ঠান করেছেন, অ্যালবাম বের করেছেন।
৯. সোমবার (১৮ জুলাই) মুম্বাইয়ের এক হাসপাতালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান ভুপিন্দর সিং। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। কোলন ক্যান্সার ও কোভিড-সম্পর্কিত জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি। তাঁর স্ত্রী সংগীতশিল্পী মিতালী মুখার্জী জানিয়েছেন, ইউরিন ইনফেকশনের কারনে সপ্তাহ দেড়েক আগে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল তাঁকে। পরে কোভিড টেস্ট করালে ফলাফল পজিটিভ আসে।