ন্যায্য পারিশ্রমিকের দাবিতে গত মে মাস থেকে আন্দোলন করছেন রাইটার্স গিল্ড অব আমেরিকার (ডব্লিউজিএ) প্রায় সাড়ে ১১ হাজার সদস্য। তাঁদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন ‘স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ড—আমেরিকান ফেডারেশন অব টেলিভিশন অ্যান্ড রেডিও আর্টিস্টের (এসএজি–এএফটিআরএ) প্রায় দেড় লাখ সদস্য।
শুধু তা-ই নয়, সিনেমা বা টিভি সিরিজ অথবা যেকোনো সৃজনশীল কাজের ক্ষেত্রে শিল্পীদের বিকল্প হিসেবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের বিরুদ্ধেও সরব তাঁরা। শিল্পীরা শুটিং বন্ধ রাখার পাশাপাশি সিনেমার প্রিমিয়ার শো, প্রচার এবং অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানের মতো আয়োজনও বর্জন করেছেন।
আন্দোলনের ১০০ দিন পার হলেও কোনো সমাধান আসেনি। অ্যালায়েন্স অব মোশন পিকচার অ্যান্ড টেলিভিশন প্রডিউসারসের প্রতিনিধিরা ডব্লিউজিএর সঙ্গে কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে পারেননি।
শঙ্কার কথা হলো, এই আন্দোলনের কারণে ক্যালিফোর্নিয়ার অর্থনীতিতে এরই মধ্যে কমপক্ষে ৩০০ কোটি ডলারের ক্ষতি হয়ে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অনুমানটি করেছেন ক্যালিফোর্নিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির বিনোদন শিল্প ব্যবস্থাপনার অধ্যাপক টড হোমস। সর্বশেষ ২০০৭ সালে সংঘটিত রাইটার্স গিল্ডের ধর্মঘটের আর্থিক ক্ষতির সঙ্গে তুলনা করে এই অনুমান করেছেন তিনি। অর্থনীতি বিষয়ক থিংক ট্যাংক মিলকেন ইনস্টিটিউটের হিসাবে, ২০০৭ সালের ওই ধর্মঘটের কারণে ৩৭ হাজার ৭০০ জন চাকরি হারান এবং ক্যালিফোর্নিয়ার অর্থনীতিতে ক্ষতি হয় ২১০ কোটি ডলার।
অধ্যাপক টড হোমস তাঁর হিসাবে এই ২১০ কোটিকে বিবেচনায় নিয়েছেন। এর সঙ্গে যুক্ত করেছেন বর্তমান মুদ্রাস্ফীতি এবং বিদ্যমান অন্যান্য বিষয়। এতে তিনি ক্ষতির পরিমাণ পেয়েছেন ৩০০ কোটি ডলার।
তিনি বলছেন, প্রকৃত ক্ষতির পরিমাণ আরও বেশিই হবে। কারণ এখানে স্ক্রিন অ্যাক্টরস গিল্ড আমেরিকান ফেডারেশন অব টেলিভিশন এবং রেডিও আর্টিস্টস ইউনিয়নের সদস্যদের হিসাবে ধরতে হবে। এই দুই সংগঠনের বহু সদস্য গত জুলাইয়ে আন্দোলনে শরিক হয়েছেন।
এই ধর্মঘটের ক্ষতি শুধু লেখক ও অভিনেতাদের ওপর পড়ছে না। হলিউডে প্রযোজনা বন্ধের ফলে এর সঙ্গে সম্পর্কিত অনেক কিছুর ওপরই প্রভাব পড়ছে। এর মধ্যে শুটিংয়ে খাবার সরবরাহকারী, স্টুডিওর কাছাকাছি রেস্টুরেন্ট, প্রপস হাউস, সেট প্রস্তুতকারী, ড্রাই ক্লিনার, পেশাদার ড্রাইভার, ফুল বিক্রেতা এবং আরও অনেক কিছুর ওপর ধর্মঘটের মারাত্মক প্রভাব পড়ছে।
অধ্যাপক হোমসের মতে, এখানে বিনোদন শিল্পের আশপাশে থাকা প্রচুর মানুষ এই ধর্মঘটের দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে। এটি তাঁদের জন্য এখন অনেক কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
লস অ্যাঞ্জেলেসের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক লি ওহানিয়ান বলেন, লস অ্যাঞ্জেলেসের আয়ের প্রায় ২০ শতাংশ আসে বিনোদন শিল্পে চাকরি এবং বিনোদনের সঙ্গে জড়িত পেশা থেকে। এখানে অর্থনীতিতে বিনোদন শিল্পের প্রভাব অনেক বেশি। কারণ এই শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা গড় চাকরি বা পেশার চেয়ে বেশি উপার্জন করেন।
ওহানিয়ান বলেন, ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যে প্রায় ৭ লাখ মানুষ বিনোদন শিল্পে কাজ করেন। এটি এই অঙ্গরাজ্যের মোট জনশক্তির প্রায় ৫ শতাংশ।
কিছু বিশেষজ্ঞ বলছেন, এই ধর্মঘট হলিউডের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী ধর্মঘট হতে যাচ্ছে। ১৯৬০ সালে লেখকদের এ ধরনের ধর্মঘট ২১ সপ্তাহ এবং ১৯৮৮ সালে ২২ সপ্তাহ স্থায়ী হয়েছিল। আর বর্তমান ধর্মঘট ১৫তম সপ্তাহে প্রবেশ করেছে। এটি আগের সব রেকর্ড ভাঙনে যদি মধ্য অক্টোবরের আগে কোনো সমাধান না হয়।
অধ্যাপক টড হোমস মনে করছেন এই ধর্মঘট অক্টোবর পর্যন্ত চললে ক্ষতির পরিমাণ ৪ বিলিয়ন থেকে ৫ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাবে। আর যদি এটি নভেম্বর পর্যন্ত স্থায়ী হয় তবে তা ৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে।
অধ্যাপক হোমস বলছেন, এই ধর্মঘট অক্টোবর পর্যন্ত চললে অর্থনীতির ক্ষতি দাঁড়াবে ৪০০–৫০০ কোটি ডলার।
এদিকে গত শুক্রবার ডব্লিউজিএর নেতারা অ্যালায়েন্স অব মোশন পিকচার অ্যান্ড টেলিভিশন প্রডিউসারসের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বসেছিলেন। গত ২ মে থেকে ধর্মঘট শুরুর পর এটাই তাদের প্রথম বৈঠক। তবে টিভি সিরিয়ালের জন্য ন্যূনতম সংখ্যক স্টাফ নেওয়া এবং ন্যূনতম সংখ্যক সপ্তাহ কাজের নিশ্চয়তার দাবিতে তাদের আলোচনা আটকে আছে।
এদিকে ডব্লিউজিএর সঙ্গে সমঝোতা হলেও অন্যান্য ইউনিয়নের কিছু দাবি–দাওয়া নিয়ে আন্দোলনের ঘোষণা এসেছে। তার মানে ডব্লিউজিএ তাদের আন্দোলনে যোগ দেওয়া এসএজি সদস্যদের অধিকারও চায়। তার মানে দুই ইউনিয়নের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কেউ কাজে ফিরছে না। যেখানে ডব্লিউজিএর সদস্য সংখ্যা ১১ হাজার ৫০০ আর এসএজি–এএফটিআরএর সদস্য প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার।