দুই দিনের দুনিয়া টিকবে কয় দিন? 
বিনোদন

দুই দিনের দুনিয়া টিকবে কয় দিন? 

দুনিয়াটা দুই দিনের—এটা আসলে পুরোটাই ভাববাদী আলোচনার বিষয়। এ দিয়ে জীবনের অনেক কাজকেই অর্থহীন প্রমাণ করা যায়। আমাদের ক্রমশ দৌড়ে যাওয়া বা যেভাবে বর্তমানে আমরা ছুটতে ছুটতে জীবন ধারণ করি, সেই সবকিছুই এই ভাবধারায় প্রকৃত অর্থে কিছুটা অনর্থক প্রমাণিত হয়। আসলেই তো, দুই দিনের দুনিয়ায় আমরা টিকি কয় দিন?

তবে বাংলা ওটিটি প্ল্যাটফর্ম চরকি যখন পর্দায় ‘দুই দিনের দুনিয়া’ নিয়ে আসার ঘোষণা দিয়েছিল, পোস্টার বা ট্রেলার মুক্তি দিয়েছিল, তখন দর্শকমনে অর্থপূর্ণ আগ্রহ সৃষ্টি করেছিলেন মূলত দুজন অভিনেতা। ফজলুর রহমান বাবু ও চঞ্চল চৌধুরী। অনেক দিন পর দুই অসাধারণ অভিনেতার যুগলবন্দী কেমন হয়, সেটি অবলোকনের অভিজ্ঞতা থেকে নিজেকে সামলে রাখা কঠিন। তাও আবার দুজন এই প্রথম কোনো ওটিটি প্ল্যাটফর্মে একসঙ্গে কাজ করলেন। সঙ্গে মেধাবী পরিচালক অনম বিশ্বাসের সৃষ্টিশীলতার প্রতি আস্থা তো ছিলই।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে মুক্তি পেয়েছে অরিজিনাল ফিল্ম ‘দুই দিনের দুনিয়া’, চরকিতে। ওটিটি প্ল্যাটফর্মে উল্লেখ করা গল্পের সারাংশ হলো, ‘ট্রাকড্রাইভার সামাদের সঙ্গে হাইওয়েতে দেখা হয় জামশেদ নামের এক অদ্ভুত ও রহস্যময় লোকের। জামশেদ দাবি করে, সে নাকি ভবিষ্যৎ থেকে এসেছে। সামাদ বুঝে উঠতে পারে না জামশেদ আসলে কী? পীর, সাধক বা গণক, নাকি একজন বাটপার! জামশেদের সঙ্গে সামাদের শুরু হয় দুই দিনের এক যাত্রা। এর পরই সামাদের জীবনের সবকিছু ধীরে ধীরে তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে থাকে।’

‘দুই দিনের দুনিয়া’ ওয়েব ফিল্মের একটি দৃশ্যে ফজলুর রহমান বাবু ও চঞ্চল চৌধুরী। ছবি: চরকির সৌজন্যে ছবির শুরুটা বেশ চিত্তাকর্ষক। সাসপেন্স ও থ্রিলার ঘরানাকে প্রতিনিধিত্ব করার মতোই বলা যায়। এ ধরনের রূপক দৃশ্য দিয়ে সূচনা রচনা একজন দর্শককে আগ্রহী করে তোলে আরও বেশিক্ষণ পর্দায় চোখ রাখতে। সেই হিসাব মেনেই চোখ রাখতে হলো বটে; কিন্তু শুরুর সঙ্গে শেষটার কী সেতুবন্ধ হলো শেষমেশ? সেই জায়গায় অতৃপ্তি হয়তো রয়েই গেল, শেষ হইয়াও হইল না শেষ!

ছোট গল্প রচনার এই মূলমন্ত্রকেই পুরো ছবিটির গল্প ও চিত্রনাট্য রচনায় বেশ খানিকটা অনুসরণ করা হয়েছে। সাসপেন্স ও থ্রিল বজায় রাখতে গেলে কিছুটা অযৌক্তিক হতেই হয় বটে। কিন্তু তাই বলে স্টোরিটেলিংয়ের আঁকাবাঁকা সুতাকে ছিঁড়ে ফেলা যায় না। বর্তমান ওটিটি দুনিয়ার কনটেন্টের দর্শক চাহিদার ধরনে মিস্ট্রি, সাসপেন্স ও থ্রিলার হয়তো এক নম্বরেই থাকবে। সাধারণ দর্শক তা পছন্দ করে বলে কাটতি বেশিই। আবার মিস্ট্রির সরু দড়িতে পা রেখে সার্কাসের সেই কসরতের মতো খুব সাবধানে পা রাখতে হয়, একটু ভারসাম্য হারালেই কিন্তু ধপাস!

ট্রাক ড্রাইভার সামাদ চরিত্রে ছিলেন চঞ্চল চৌধুরী। ছবি: চরকির সৌজন্যে ফলে গল্পে রহস্যের জাল ছড়ানোর সময়, সেটি গুটিয়ে আনার পথও আগে থেকেই জানা থাকতে হয়। নইলে রহস্যের কারণে মূল গল্পের ধারাবাহিকতায় যে শূন্যস্থান তৈরি হয়, সেটি পূরণ করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। ‘দুই দিনের দুনিয়া’ ঠিক সেই দোষেই দুষ্ট। রহস্য মানেই যে কার্যকারণ চূড়ান্তভাবে অনুপস্থিত থাকবে, তা কিন্তু নয়। যুক্তিকে এড়িয়ে যাওয়া মানেই সেটি একেবারে ছন্দহীন হবে, তাও নয়। যদিও এ দুই জায়গাতেই ‘দুই দিনের দুনিয়া’র গল্প ও চিত্রনাট্যে ঘাটতি। নইলে আর ট্রাকড্রাইভারের মেয়ে হুট করে এমন চোস্ত ভাষায় বাতচিত কেন করবে? কেন একজনের পা হঠাৎ করে কার্যকারণ ছাড়াই প্রায় চলৎশক্তিহীন হবে? কেনই-বা একজন রহস্যময় ব্যক্তিকে রহস্য বজায় রাখার শর্তে শুধু হাওয়া হয়েই যেতে হবে? যদিও রহস্য আরোপিত না হয়ে স্বয়ংক্রিয় ও আরেকটু ঠাসবুনোটের হলে এসব কিছুই চোখে লাগত না।

অথচ যেভাবে শুরু হয়েছিল, মনে হচ্ছিল দুই ক্ষুরধার অভিনেতার টক্কর এই শুরু হলো বলে! সামাদ চরিত্রে ছিলেন চঞ্চল চৌধুরী। জামশেদ ছিলেন ফজলুর রহমান বাবু। ‘অদ্ভুত ও রহস্যময়’ চরিত্রে নিজেকে ভালোভাবেই প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছেন তিনি। ট্রাকড্রাইভার হিসেবে চঞ্চল চৌধুরীও বিশ্বাসযোগ্য। তবে চরিত্রের বৈশিষ্ট্য বিচারেই এগিয়ে থাকবেন ফজলুর রহমান বাবু। পর্দায় তাঁর কাজটি কঠিন ছিল, যদিও তিনি পরীক্ষায় উতরে গেছেন লেটার মার্কস পেয়ে। অন্যান্য অভিনয়শিল্পীর মধ্যে তানভীন সুইটি ও মৌসুমি হামিদও নামের প্রতি সুবিচার করেছেন।

রহস্যময় জামশেদ চরিত্রে ছিলেন ফজলুর রহমান বাবু। ছবি: চরকির সৌজন্যে ‘দুই দিনের দুনিয়া’র সিনেমাটোগ্রাফি এবং সামগ্রিক ক্যামেরার কাজ চোখের জন্য আরামদায়ক। ভালোই লাগে দেখতে। উল্লেখ করা প্রয়োজন ছবির আবহ সংগীতের বিষয়টিও। বেশ সুচিন্তিত ব্যবহার হয়েছে মিউজিকের। ‘গন্ধম’ গানটির লিরিকসের জন্য অনম বিশ্বাসকে ধন্যবাদ। সেই সঙ্গে গায়কির জন্য ধন্যবাদ পাওয়া উচিত সুপরিচিত মমতাজ বেগমের। ছবির অন্তে গানটির ব্যবহার সত্যিই দারুণ।

‘গন্ধম’ শীর্ষক গানেরই এক লাইনে বলা হয়েছে, ‘…সবকিছু যাক তবু তোমার জানটা হাতে থাক, নাইলে হইবা চিচিং ফাঁক…।’ ঠিক সেভাবেই ‘দুই দিনের দুনিয়া’র সবকিছুই ঠিক ছিল, শুধু জান; অর্থাৎ, চিত্রনাট্যই যেন ছন্দে ছিল না। নইলে ওটিটির দুনিয়ায় দীর্ঘদিনই উল্লেখযোগ্য কাজ হিসেবে টিকে থাকার যোগ্যতা ছিল ‘দুই দিনের দুনিয়া’র।

তার পরও প্রত্যাশা বুকে চেপে না রেখে দেখাই যায় ‘দুই দিনের দুনিয়া’। খাদ মেনে নিয়েই তো সোনার গয়না তৈরি হয়, তাই না?

Source link

Related posts

নেটিজেনদের পাশে পেলেন কার্তিক

News Desk

মারা গেছেন গায়ক আকবর 

News Desk

করোনায় মারা গেলেন বলিউড অভিনেত্রী শ্রীপদা

News Desk

Leave a Comment