ঈদ কেমন কাটছে?
ঈদের দ্বিতীয় দিন চলছে। আমি এডিটিং প্যানেলে। ঈদের ষষ্ঠ দিন পর্যন্ত আমার প্যানেলেই থাকতে হবে। পরিবার এখন আর আমার ওপর রাগ করে থাকে না। আমার ব্যাপারে তাদের এটা অভ্যাস হয়ে গেছে। প্রথমদিকে তাঁদের কষ্ট হতো মেনে নিতে যে, সবাই মিলে বাসায় ঈদ করে আর আমার কোনো খোঁজ থাকে না। গত ১০ বছর এভাবেই চলছে। এডিটিং প্যানেলে না থেকে বরং বাসায় থাকলে মানসিকভাবে আমার জন্য তা বেশি কষ্টকর হতো। আমার ঈদ শুরু হয় সাধারণত ঈদের ষষ্ঠ বা সপ্তম দিনে, এডিটগুলো যখন শেষ হয়ে যায় তখন। এবারও আমি দশটির বেশি কাজ করেছি, তাই স্বাভাবিকভাবেই দিনরাত এক করে ব্যস্ততায় আছি।
এবার কী কী প্রচার হবে?
মুশফিক আর ফারহান ও কেয়া পায়েলকে নিয়ে নির্মাণ করলাম নাটক ‘একজন মধ্যবিত্ত বলছি’। ক্লাব ইলেভেন ইউটিউব চ্যানেলে নাটকটি প্রচার হবে। এনটিভিতে প্রচার হবে ‘মানুষ টোকাই’, ‘ড্রেস অব সেন্স নাই’। দীপ্ত টিভির জন্য আছে ‘আদব বেয়াদব’। এমন বেশ কয়েকটি সিঙ্গেল নাটক করা হয়েছে। এবার ওটিটি প্ল্যাটফর্ম বঙ্গতে ঈদের দিন ‘ট্রিপল এস’ নামে একটি কাজ এসেছে। এর পুরো নাম ‘সিঙ্গেল সিন স্টোরি’। ১৪টি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র আছে এখানে। এ ছাড়া সাতটি থটফিল্ম করেছি। বিভিন্ন বিষয়বস্তুকে কেন্দ্র করে তৈরি, তাই থটফিল্ম নাম দেওয়া। এটা ২০১৬ সালে প্রথমবার আমি করেছিলাম। ওই সিরিজটাই নতুনভাবে শুরু করেছি। এই থটফিল্মগুলো আসছে এমকে প্রডাকশনের ইউটিউব চ্যানেলে। অভিনয়শিল্পীদের মধ্যে ফজলুর রহমান বাবু, মনিরা মিঠু, আব্দুন নূর সজল, নিলয় আলমগীর, ফারহান আহমেদ জোভান, মুশফিক আর ফারহান, সামিরা মাহি, কেয়া পায়েল, শামীম হাসান সরকার, মৌসুমী মৌ, জহির আলভীসহ অনেকেই প্রডাকশনগুলোতে অভিনয় করেছেন।
ঈদে পরিচালিত আপনার বেশির ভাগ প্রডাকশনই তুলনামূলক নতুনদের নিয়ে। এর বিশেষ কোনো কারণ আছে কি?
জোভান কিংবা ফারহানদের আমি নতুন হিসেবে ধরছি না। ওরা অনেক পরিণত হয়েছে। এই সময়ে এসে ওরা ম্যাচিউরড স্টোরি ডিজার্ভ করে। এ ধরনের স্টোরিগুলো হয়তো আগে আমি অন্যদের নিয়ে করতাম। টিভি ইন্ডাস্ট্রিতে প্রায় সব প্রথম সারির অভিনয়শিল্পীদের নিয়েই তো আমার কাজ হয়েছে। তবে একদম নতুন মুখদের নিয়ে কাজ করাটা আমি বেশ উপভোগ করি। একজন নির্মাতা বা গল্পকারের একেক সময় একেক রকম মুড থাকে। আমি সব সময় একই বয়সীদের নিয়ে গল্প বলতে চাই না। সে ক্ষেত্রে ওদের নিয়েও আমি যথেষ্ট সন্তুষ্ট। বিশ্বাসের জায়গাটা তৈরি হয়েছে।
এই ঈদেও অনেক নতুন মুখ আপনার হাত ধরে অভিনয় শুরু করেছেন…
জয়, রাফি, রাশেদ এমরান, আলভী রুনি আলভীর মতো নতুনরা এবার আমার পরিচালনায় কাজ করেছে। অনামিকা ঐশী গত ঈদে ‘ও আমার বোন না’ নামের একটা কাজের মাধ্যমে নাটকে এসেছে। ওই কাজটা যারা দেখেছেন তারা আমাকে সার্থক বলেছেন। প্রথম কাজেই ওর অভিনয়ের আমি বেশ প্রশংসা পেয়েছি। তাঁর এবারও বেশ কয়েকটি কাজ আছে। এই ঈদেও নতুন যারা কাজ করেছেন, আশা করছি তাঁদের প্রশংসা করবে মানুষ।
বড় তারকার ডেট যার হাতে যত বেশি, সে তত বড় পরিচালক—এমন কথা এখন প্রচলিত। আপনার কী মনে হয়?
শিল্পীদের ডেট নিয়েই এখন পরিচালক বনে যাচ্ছেন অনেকে। প্রতিটি পরিচালকের নিজস্ব কিছু চিন্তাধারা থাকা উচিত। ব্যাপক অর্থে বললে, পরিচালকের অবশ্যই নিজস্ব দর্শন থাকা উচিত। আমি আসলে কিসের জন্য একটা গল্প বলছি? সেই আদর্শের জায়গাটা থাকা উচিত। কিন্তু এখন পরিচালকেরা গল্প বলার চেয়ে ম্যানেজার বেশি হয়ে উঠতে চাইছে। বড় একজন তারকার ডেট এক বছর ধরে ঘুরে ম্যানেজ করতে পারলেই তিনি পরিচালক হয়ে যাচ্ছেন। এটাও বলব, এভাবে যাঁরা পরিচালক হচ্ছেন, তাঁদের দৌড়টা বেশি দূরের হয় না। এটা নিয়ে আমি খুব একটা ভাবি না। আগেও এই ধারা ছিল, এখন ব্যাপক হারে আছে। এখন ভিউয়ের যুগে নাটকটা পুরোপুরি আর্টিস্ট বেজই হয়ে গেছে। আগে পরিচালক বা চ্যানেল নির্ধারণ করত নাটকের মান কী হবে। এখন অনেক ক্ষেত্রেই তারকা অভিনয়শিল্পীরা ইন্ডাস্ট্রিতে কি গল্প চলবে, তা নির্ধারণ করে। আমি এটাও জানি, দু–তিন বছর পর এই ধারাটারও পরিবর্তন হবে।
বর্তমানে নাটকের বাজেট নিয়ে কি বলবেন?
বাজেটের অবস্থা আগের চেয়ে ভালো। একেকজন পরিচালক বা প্রযোজকের ভিন্ন অবস্থা। তবে আমি বাজেট নিয়ে সন্তুষ্ট। এনটিভির জন্য আমি ‘ড্রেস আপ সেন্স নাই’ নামের যে কাজটি করলাম, সেখানে অভিনয় করেছেন ফজলুর রহমান বাবু ভাই ও সাব্বির অর্ণব। সেই কাজে এনটিভি বেশ ভালো বাজেট দিয়েছে। সেখানে তথাকথিত বড় তারকা নেই। কিন্তু আমি বাজেট নিয়ে খুশি। ইউটিউবের জন্যও যে কাজ করেছি, আমি ভালো বাজেট পেয়েছি। আমি ভালো বাজেট পাচ্ছি, বিষয়টা যে কাস্টিংয়ের জন্য দিচ্ছে—এমন না। ভালো গল্প বানানোর জন্যই দিচ্ছে। আমি একদম নবাগত নিয়েছি বা পুরোনো, সবাইকে দিয়ে একটা গল্প বলতে চেয়েছি। বড় তারকার শো অফ নেই আমার নাটকে। ট্রেন্ডি স্টোরি দিয়ে ভালো বাজেট পেয়েছি ,এমনও না। চ্যানেল ও প্রডিউসারও আমাকে ওই দৌড়ানি দেয়নি যে অমুক তমুককেই আপনার নিতে হবে।
সবাই ওটিটিতে কাজের জন্য মুখিয়ে আছে। আপনার ব্যস্ততা বেশি টিভি চ্যানেলেই…
আমার কোনো তাড়াহুড়ো নেই। ওটিটির এই দৌড়ে আমি অংশ নিতে আগ্রহী না। অনেকগুলো কাজের কমিটমেন্ট করা আছে। সেগুলো শেষ করেই ওটিটিতে কাজ করতে চাই। ঈদের পরেও ত্রিশটির বেশি নাটকের কমিটমেন্ট আমার আছে। এর সবগুলো না করলেও বেশির ভাগ শেষ করতে হবে। আমি কমিটমেন্ট নষ্ট করে অন্য জায়গায় যেতে পারব না। আমি ওটিটিতে গেলে এমন কিছুই করার চেষ্টা করব, যেটা আগে হয়নি। সেই সময় ও সুযোগটা এই মুহূর্তে আমি পাচ্ছি না। ওটিটি তো শেষ হয়ে যাচ্ছে না, প্রতিদিন নতুন নতুন বিকল্প তৈরি হচ্ছে।
চলচ্চিত্র নিয়ে অনেক দিন ধরেই পরিকল্পনা করছিলেন…
অনেক দূর এগিয়েছি সিনেমা নিয়ে। ঘোষণা দেওয়ার সময়টা এখনো আসেনি। তবে এটা অবশ্যই বলতে পারি যে, এ বছরই সিনেমার ঘোষণা দেব ইনশা আল্লাহ।