শাহরুখ খানের ব্লকবাস্টার সিনেমা ‘পাঠান’ নিয়ে এবার অভিনেত্রী কঙ্গনা রনৌত এবং অভিনেত্রী ও সোশ্যাল ইনফ্লুয়েন্সার উরফি জাভেদের মধ্যকার কথোপকথন টুইটারে ভাইরাল হয়েছে।
মূলত শাহরুখ খানের প্রশংসা করে কঙ্গনার করা পোস্টের মন্তব্যের ঘরে এই কথোপকথন হয়। কঙ্গনা সেই টুইটে বলেছিলেন, ‘হিন্দু মুসলমানেরা শাহরুখকে সমানভাবে ভালোবাসে’ এবং ‘ভারত অত্যন্ত ধর্মনিরপেক্ষ’।
বলিউডের প্রযোজক প্রিয়া গুপ্তের করা একটি টুইট শেয়ার করে এমন মন্তব্য করেন কঙ্গনা। ২৮ জানুয়ারি প্রিয়া টুইটে বলেন, ‘পাঠান–এর সাফল্যে শাহরুখ ও দীপিকাকে অভিনন্দন! এটি প্রমাণ করেছে ১. হিন্দু মুসলিম শাহরুখকে সমানভাবে ভালোবাসে। ২. বয়কট বিতর্ক সিনেমার ক্ষতি নয় বরং সহায়তাই করে। ৩. যৌনতা এবং ভালো সংগীত কাজে দেয়। ৪. ভারত অত্যন্ত ধর্মনিরপেক্ষ।’
বলিউড প্রযোজকের এই পোস্টে মন্তব্যের ঘরে কঙ্গনা লিখেছেন, ‘খুব ভালো বিশ্লেষণ…এই দেশটি শুধু এবং শুধুই খানদের ভালোবেসেছে এবং মাঝে মাঝে শুধু খানদেরই…এবং এরা মুসলিম অভিনেত্রীদের প্রতি বাড়াবাড়ি রকমের আচ্ছন্ন। তাই ভারতকে ঘৃণা ও ফ্যাসিবাদের জন্য অভিযুক্ত করা খুবই অন্যায়…সারা বিশ্বে ভারতের মতো কোনো দেশ নেই।’
সোশ্যাল ইনফ্লুয়েন্সার উরফি জাভেদ ‘মণিকর্ণিকা’ অভিনেত্রীর দুই দিনের পুরোনো এই টুইটের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। মন্তব্যের ঘরে লিখেছেন, ‘ওহ মাই গড! এইটা কেমন বিভাজন—মুসলিম অভিনেতা, হিন্দু অভিনেতা! শিল্পকে ধর্ম দিয়ে বিভক্ত করা যায় না। এখানে তাঁরা শুধুই অভিনেতা।’
অভিনেত্রী কঙ্গনা রনৌত প্রকাশ্যেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে সমর্থন জানিয়ে আসছেন। উরফি জাভেদের টুইটের প্রতিক্রিয়ায় তিনি লিখেছেন, ‘হ্যাঁ, প্রিয় উরফি, সেটি হবে একটি আদর্শ বিশ্ব। তবে এটি সম্ভব নয়, যদি না আমাদের অভিন্ন দেওয়ানি বিধি (ইউনিফর্ম সিভিল কোড) থাকে। যতক্ষণ এই দেশটির সংবিধানের মধ্যেই বিভক্তি থাকবে, ততক্ষণ জাতি হিসেবে বিভক্তই থেকে যাবে। আসুন, আমরা সবাই ২০২৪ সালের ইশতেহারে নরেন্দ্র মোদিজির কাছ থেকে অভিন্ন দেওয়ানি বিধির দাবি জানাই। আমরা করব কি?’
তবে এ ব্যাপারে কঙ্গনার সঙ্গে দ্বিমত করে টুইট করেছেন উরফি। তিনি লিখেছেন, ‘ইউনিফর্মের ধারণাটি আমার জন্য খারাপ হতে পারে ম্যাম! আমি তো শুধু আমার পোশাকের কারণেই জনপ্রিয়।’ উরফি জাভেদ অবশ্য তাঁর খোলামেলা পোশাকের কারণেই ইনস্টাগ্রাম ও টিকটকে বেশি জনপ্রিয়।
পরের টুইটে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করে উরফি লেখেন, ‘আমি কতটা বোকা—লোকজন এই মন্তব্য শুরু করার আগে (বলে নিই), বন্ধুরা আমি মজা করছিলাম! ব্যঙ্গ, হাস্যরস মজার জিনিস!’
বলিউডে খানদের আধিপত্য এবং স্বজনপ্রীতির অভিযোগ তুলে কয়েক বছর ধরে বিশেষ গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করে আসছেন কঙ্গনা। যদিও সাম্প্রতিক বয়কট প্রবণতা এবং বলিউডের সিনেমাগুলো একের পর এক ফ্লপ হওয়ার ঘটনা নিয়ে তেমন মন্তব্য করেননি। তবে উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের নানা সমালোচনা ও বয়কটের ডাকের পরও শাহরুখের ‘পাঠান’ বক্স অফিস দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এ নিয়ে কঙ্গনাও আর চুপ থাকতে পারেননি।
অবশ্য ‘পাঠান’ নিয়ে ইতিবাচক কথা বলতে গিয়েও বিতর্ক উসকে দিয়েছেন কুইন। ‘মণিকর্ণিকা’ অভিনেত্রী টুইটে লেখেন, ‘আমি বিশ্বাস করি ভারতীয় মুসলমানেরা দেশপ্রেমিক এবং আফগান পাঠানদের থেকে খুব আলাদা…মূল বিষয় হলো, ভারত কখনোই আফগানিস্তান হবে না। আমরা সবাই জানি, আফগানিস্তানে কী ঘটছে, এই দেশ তো নরকেরও বাড়! তাই গল্পের ধরন হিসেবে সিনেমাটির জন্য উপযুক্ত নাম—ভারতীয় পাঠান।’
সাম্প্রদায়িক ও উসকানিমূলক বক্তব্য দেওয়ার কারণে প্রায় দুই বছর টুইটারে নিষিদ্ধ ছিলেন কঙ্গনা রনৌত। অবশেষে নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে সম্প্রতি টুইটারে ফিরেছেন। মাইক্রোব্লগিং ওয়েবসাইটটি ২০২১ সালের মে মাসে তাঁকে নিষিদ্ধ করে। পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতা নিয়ে বিতর্কিত পোস্ট করার পরই তাঁর বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেয় টুইটার কর্তৃপক্ষ।