আত্মহত্যা হল কেনো ব্যাক্তির নিজের জীবন স্বেচ্ছায় বিসর্জন দিয়ে দেয়ার প্রচেষ্টা। পৃথিবীর দুঃখ-কষ্ট যখন ব্যাক্তির সহ্যের চরমসীমা অতিক্রম করে তখন সে নিজেকে পৃথিবী থেকে দূরে সরিয়ে দিতে চায় অথবা যাদের কাছ থেকে কষ্ট পেয়েছে তাদেরকে তার অস্তিত্বহীনতা বুঝাতে এমন পদক্ষেপ নেয়। অনেক সময় ব্যক্তি পৃথিবীতে নিজের বেঁচে থাকার প্রয়োজনীয়তা নেই মনে করে আত্মহত্যার পদক্ষেপ নেয়। বর্তমান সমাজের একটি বড় সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে আত্মহত্যা। চলুন, জেনে নেয়া যাক ইতিহাসে আলোচিত-সমালোচিত পাঁচটি আত্মহত্যার রহস্য।
১. জোন্স টাউন আত্মহত্যা
পৃথিবীর ইতিহাসে ভয়ানক এই আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে জিম জোন্স নামক এক কাল্ট গুরুর আহ্বানে। ১৯৭৮ সালের ১৮ নভেম্বর একসাথে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় প্রায় নয় শতাধিক মানুষ। জোন্স ছিলেন বেশ প্রবভাবশালী ধর্মযাজক। তার অক্লান্ত প্রচেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিপোলিস শহরে পিপলস টেম্পল নামের একটি গির্জা প্রতিষ্ঠিত করা হয়। বেশ ভালোভাবেই চলছিল গির্জার কাজ। এটি ছিল সকলের জন্য ছিল উন্মুক্ত। গির্জাকে ঘিরে জোন্সের চিন্তভাবনা আরও বড় হতে লাগলো। সে নিজের ইচ্ছেমতো একটি বৈষম্যহীন সমাজ গঠন করতে চাইলো। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে তখন বর্ণবৈষম্য ছিল তুঙ্গে। তাই শেতাঙ্গদের সাথে দ্বন্দ্ব শুরু হয় তার।
অবশেষে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণে গায়নার গহীন জঙ্গলে একটি এলাকা খুঁজে পান যেখানে সরকার বা কোনো গোষ্ঠীর আধিপত্য নেই। যা ছিল জোন্সের চাহিদা মেটাতে পুরোপুরি উপযোগী। জোন্স এলাকাটির নাম দেন জোন্স টাউন। কিন্তু এলাকার তাপমাত্রা ছিল জীবনধারণের প্রতিকূলে। খাদ্যদ্রব্যের প্রচন্ড অভাব, পর্যাপ্ত থাকার জায়গার অভাব, জীবিকার অভাবে জোন্সের অনুসারীদের জীবনে আর কিছু বাকি থাকে না। অনুসারীদের দিনে টানা ১০-১১ ঘন্টা কাজ করতে হতো। উপরন্তু অনুসারীদের নির্দেশনা দিতে সারাক্ষন জোন্স লাউডস্পিকার ব্যবহার করতো। ফলে অসুস্থ হয়ে পড়ে অনেকেই।
জেন্সটাউনের অস্বাভাবিকতার কথা কানে আসে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার কংগ্রেসম্যান লিও রাইয়ানের। তিনি সরেজমিনে এলাকাটি পরিদর্শন করেত যান। সেখানে গিয়ে প্রথমে সবকিছু স্বাভাবিক মনে হলেও পরে জোন্সের কিছু অনুসারীর অনাকাঙ্ক্ষিত আক্রমণের শিকার হন। তাদের এলোপাথাড়ি গুলিতে প্রাণ হারান রাইয়ান ও তার কয়েকজন সঙ্গী। কংগ্রেসম্যান হত্যার ফলাফল মোটেই ভাল হবে না বুঝতে পেরে জোন্স বিচলিত আর ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে পরে। সে উপস্থিত অনুসারীদের ব্রেনওয়াশ করতে শুরু করে। তাদের বোঝাতে থাকে তাদের বেঁচে থাকা মোটেই উচিত নয়। তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনী তাদের সন্তানদের নির্যাতন করবে। এর চেয়ে সম্মানের সাথে মৃত্যুবরণ করা ভালো। মৃত্যুর পর পরকালে এর চেয়েও সম্মানজনক আর সুখী জীবন পাওয়া যাবে।
এই বলে তিনি সকলের সামনে সায়ানাইড রাখলেন। প্রথমে শিশুদের সিরিঞ্জের মাধ্যমে শরীরে বিষ ঢুকানো হলো। এরপর বয়স্কদের বিষ তুলে নেয়ার জন্য আদেশ দেয়া হলো। সকলের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অনেক অনুসারী ছুটে পালাতে চাইলেও এলাকায় কড়া নিরাপত্তা পাহারার কারণে বের হতে পারেন নি। ওই দিনে মোট ৯১৪ জনের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে ২৭৬ জন ছিল শিশু। আর জোন্স নিজেও এভাবে আত্মাহত্যা করেন। কিন্তু কিছু অনুসারী বহু কষ্টে দুর্গম পথ পাড়ী দিয়ে আমেরিকায় চলে আসেন। তারাই পরে জোন্সের ঘটনা সকলের কাছে বিবৃত করেন। ঐতিহাসিকগণ এটিকে আত্মাহত্যা না বলে খুন বলেও অভিহিত করেছেন।
২. ক্রিস্টিয়ান চাব্বাক
পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম টেলিভিশন লাইভে এসে আত্মহত্যা করেন ক্রিস্টিয়ান চাব্বাক। তিনি ছিলেন আমেরিকার টিভি নিউজ রিপোর্টার। ফ্লোরিডার সারাসোটায় WXL-TV তে তিনি কাজ করতেন। ১৯৭৪ সালের ১৫ জুলাই ২৯ বছর বয়সি এই টিভি প্রেজেন্টার সংবাদ পড়াকালীন বন্দুক দিয়ে মস্তিষ্কে নিজেকে গুলিবিদ্ধ করে আত্মহত্যা করেন।
১৫ জুলাই সকালে চাব্বাক বেশ প্রফুল্ল চিত্তে নিজ কর্মস্থলে আসেন। প্রোগ্রাম শুরু হয় সকাল ৯.৩০ মিনিটে। সাধারণত চ্যানেলটির অনুষ্ঠানগুলো রেকর্ডিং করা হতো না। কিন্তু চাব্বাকের অনুরোধে সেদিনের অনুষ্ঠানটি রেকর্ড করা হয়। চাব্বাক সংবাদ পড়া শুরু করেন। প্রথমে বেশ কয়েক মিনিট যান্ত্রিক সমস্যার কারণে সম্প্রচার বাধাগ্রস্ত হয়। এরপর চাব্বাক তার সামনে থেকে একটি স্ক্রিপ্ট পড়া শুরু করেন। স্ক্রিপ্টের লেখাগুলো ছিল এরকম –
“In keeping with channel 40’s policy of bringing you the latest of blood and guts and in living color, you are going to see another first an attempted suicide”
এই বলে চাব্বাক বন্দুক নিয়ে মাথায় গুলি করেন। পরের দিন রাতে সারাসোটা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। এরপর শেলি কুইন ওয়াশিংটন পোস্টে ক্রিস্টিয়ান চাব্বাককে নিয়ে ৫৫০০ শব্দের আর্টিকেল লিখেন।
অনেকে চাব্বাকের আত্মহত্যার কারণ হিসেবে মনে করেন তার একাকিত্বকে। ২৯ বছরের অবিবাহিত জীবনে চাব্বাক একাকিত্বকে মানতে পারেননি বলেই আত্মহননের পথে বেছে নেন। তার হতাশার সাথে লড়াই আর বেশ কয়েকবার আত্মহত্যার চেষ্টার কথা জানতো তার পরিবার। কিন্তু তার চাকরি চলে যাবে বলে WXL-TV কে বিষয়টি জানায়নি তার মা। ১৯৭০ সালের দিকে অতিমাত্রায় মাদকাসক্ত হয়েও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। কারো সাথে রোমান্টিক সম্পর্কে না যেতে পারাই মূলত তার হতাশার মূল কারণ ছিল বলে দাবি করেন তার ভাই। কিন্তু চাব্বাকের শেষ কথাগুলো থেকে বুঝা যায় আসলে সংবেদনশীল, চাঞ্চল্যকর, রক্তারক্তির আর দ্বন্দ্ব-সংঘাতের সংবাদ পাঠ করতে করতে বিতৃষ্ণা ধরে গিয়েছিল তার। এসব থেকে নিজেকে চূড়ান্ত মুক্তি দিতেই জনসম্মুখে এসে তিনি আত্মহত্যা করেন।
৩. আর্নেস্ট হেমিংওয়ে
সাহিত্য জগতে আর্নেস্ট হেমিংওয়ে এক উজ্জ্বল তারকাতুল্য নাম। পৃথিবীর সর্বাধিক জনপ্রিয় লেখকদের মধ্যে তিনি অন্যতম। ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে রয়েছে তার উল্লেখযোগ্য অবদান। তার বিশ্ববিখ্যাত উপন্যাস ‘দ্য ওল্ডম্যান অ্যান্ড দ্য সি’ সকল যুগের পাঠকদের কাছে সমাদৃত। উপন্যাসটি হাজার হাজার পাঠককে যেখানে আলোর দিশা দেখিয়েছে, শিখিয়েছে বিক্ষুব্ধ ঝড়-ঝঞ্ঝায় কীভাবে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হয়, কীভাবে জীবনযুদ্ধে জয়ী হওয়া যায়, সেখানে হেমিংওয়ে নিজেই জীবনযুদ্ধে পরাজয়কে মানতে না পেরে আত্মহত্যা করেছেন।
উপন্যাসটিতে তার বিখ্যাত উক্তি –
“Man is not made for defeat… A man can be destroyed but not defeated.“
তার আরও কিছু বিখ্যাত উক্তি হল-
“আমার জানামতে সবচেয়ে দুর্লভ বিষয় হচ্ছে পৃথিবীতে বুদ্ধিমান মানুষকে সুখি হতে দেখা।”
“সব মানুষের জীবনের সমাপ্তিটা একই রকম। কেবল সে কীভাবে জীবন কাটিয়েছে, কীভাবে মারা গেছে তাই তাকে অন্যদের থেকে আলাদা করে রাখে।”
কিন্তু সেই হেমিংওয়েই মুখে বন্দুকের নল ঢুকিয়ে ট্রিগার টিপে তার দুর্ঘটনাকবলিত, রোগক্লিষ্ট দেহটিকে মুহুর্তের মধ্যে নিস্তেজ করে ফেলেন, পাড়ি জমান পরপারে। একারণে বিশ্ববাসী তার মৃত্যুতে শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়ে।
কালজয়ী কথাসাহিত্যিক আর্নেস্ট হেমিংওয়ে ১৮৯৯ সালের ২১ জুলাই আমেরিকায় শিকাগোর ইলিনয়ের ওকপার্কে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা ছিলেন ডাক্তার, মা ছিলেন সংগীত শিল্পী। শৈশব থেকেই ছিলেন দুরন্ত। স্কুলজীবন থেকেই তার সাহিত্য আর সাংবাদিকতার প্রতি প্রচন্ড ঝোক তৈরী হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার হিসেবে কাজ করাকালীন যুদ্ধক্ষেত্রে মর্টারের আঘাতে আহত হন। ফলে তার দৃষ্টিশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তার সাহসিকতার জন্য ইতালিয়ান সরকার ‘ইতালিয়ন সিলভার মেডেল অব ব্রেভারি’ পুরুস্কারে ভুষিত করেন। সুস্থ হওয়ার পর সাংবাদিকতা শুরু করেন। জীবনে বেশ কয়েকবার সাংবাদিকতা থেকে সাহিত্যচর্চা, সাহিত্যচর্চা থেকে সাংবাদিকতায় পেশা পরিবর্তন করেন।
জীবদ্দশায় মোট নয়টি উপন্যাস ও ছয়টি ছোট গল্পের সংকলন প্রকাশ করেন। ১৯২৫ সালে প্রকাশিত হয় তার প্রথম উপন্যাস ‘দ্যি টরেন্টস অব স্প্রিং’, ১৯২৯ সালে ‘এ ফেয়ারওয়েল টু আর্মস’, ১৯৫১ সালে লিখেন সর্বশেষ উপন্যাস ‘দ্য ওল্ডম্যান অ্যান্ড দ্য সি’। উপন্যাসটির জন্য তিনি ১৯৫৪ সালে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন।
হেমিংওয়ে পরিবারের রক্তেই হয়তো মিশে ছিল আত্মহত্যার ব্যাধি। তার বাবা ক্লারেন্স হেমিংওয়ে, ভাই মিস্টার হেমিংওয়ে, বোন উরসালা হেমিংওয়েও আত্মহণনের পথ বেছে নিয়েছিলেন। বিজ্ঞানীদের মতে ‘বাইপোলার মোড ডিসঅর্ডার’ নামক ভয়ানক জিনগত ব্যাধিই এ ধরনের পারিবারিক আত্মহত্যার জন্য দায়ী। এই রোগের প্রধান দুটি লক্ষণ- অতিমাত্রায় উচ্ছ্বাস আর গভীর বিষণ্ণতাবোধ। হেমিংওয়ে বিষণ্নতাবোধ থেকেই আত্মহত্যা করেন বলে মনে করা হয়। তার বাবা ক্লারেন্স হেমিংওয়ের আত্মহত্যার পর প্রচন্ডভাবে ভেঙে পরেন তিনি। জীবনী লেখকরা তার মানসিক অবস্থার পতনের জন্য বীরত্বপূর্ণ আচরণকেও দায়ী করেন।
প্রচন্ড মদ্যপান, মাদকদ্রব্য সেবন, ১৯৫৩ সালে প্লেন ক্রাশের পর শারীরিক ক্ষতের যন্ত্রণা, কতিপয় মানসিক চাপ তার ষাটোর্ধ্ব জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছিল। একইসাথে মাথাব্যথা, উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিসজনিত সমস্যা থেকে মানসিক হতাশায় নিজের নিয়মিত শিকার করার বন্দুক দিয়েই আত্মহত্যা করে বসেন হেমিংওয়ে। ১৯৬১ সালের ২১ জুলাই এই প্রভাব বিস্তারকারী মার্কিন সাহিত্যিক তার বর্ণাঢ্য জীবনের অবসান ঘটান।
৪. রবার্ট বাড ডয়ার
রাজনীতিবিদ রবার্ট বাড ডয়ারের মৃত্যুই সম্ভবত পৃথিবীর সবচেয়ে আলোচিত আত্মহত্যা। তার আত্মহত্যার দৃশ্য ক্যামেরাবন্দী করে রাখা হয় এবং পরবর্তীতে বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল তা ফলাও করে প্রচার করে। এখনো ইন্টারনেটে সেই ভয়াবহ দৃশ্যটি খুঁজে পাওয়া যায়।
আমেরিকার পেনসিলভানিয়া রাজ্যের একসময়ের সিনেটর ডয়ার ১৯৮০ সালে রাজ্যের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের প্রধান হিসেবে নির্বাচিত হন। ১৯৮৪ সালে সেখানে তিনি পুনর্নির্বাচিত হন।
ট্রেজারির প্রধান থাকাকালীন সময়ে তার বিরুদ্ধে ঘুষ নেয়ার মতো গুরুতর অভিযোগ ওঠে। তদন্তকারী কর্মকর্তারা সেই অভিযোগের সত্যতা খুঁজে পায়। অভিযোগ কোর্টে প্রমাণিত হলে ডয়ারের বেশ ক’বছরের কারাদণ্ড হওয়ার সম্ভাবনা ছিল।
ডয়ার তখন তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ পুরোপুরি নাকচ করে দেন। কিন্তু তদন্তকারী কর্মকর্তারা তা মানতে রাজি ছিলেন না। তারা ডয়ারকে প্রস্তাব করেন, তিনি যদি নিজের দোষ স্বীকার করে নিজের পদ থেকে ইস্তফা দেন এবং তদন্তে সাহায্য করেন, তাহলে তাকে মাত্র পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। তা না হলে তার জন্য অপেক্ষা করছে বিশাল দুর্ভোগ ।
তারপরও ডয়ার তদন্ত কর্মকর্তাদের প্রস্তাবে রাজি হননি। তিনি নিজের নিষ্কলুষতার ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চিত ছিলেন। কিন্তু কোর্টে শেষ পর্যন্ত তিনি দোষী সাব্যস্ত হন। তাকে ৫৫ বছরের কারাদণ্ড এবং তিন লক্ষ ডলারের জরিমানা করা হয়।
তার দণ্ড শুরু হওয়ার কথা ছিল ১৯৮৭ সালের ২৩ জানুয়ারি থেকে। কিন্তু ডয়ারের মনে ছিল অন্য পরিকল্পনা। দণ্ড শুরুর একদিন পূর্বে তিনি একটি প্রেস কনফারেন্স ডাকেন। সেখানে অনেক সাংবাদিক ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তারা।
সেই কনফারেন্সে তিনি পুনরায় নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেন এবং তার মৃত্যুকে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য একটি দৃষ্টান্ত হিসেবে রেখে যাওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। এরপরই একটি হলুদ খামের ভেতর থেকে আত্মহত্যার উদ্দেশ্যে তিনি একটি .৩৫৭ ম্যাগনাম রিভলভার বের করেন। এ সময় উপস্থিত সবাই চিৎকার করে ডয়ারকে এই কাজ থেকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করছিল। তাদের উদ্দেশ্যে ডয়ার বলেন,
‘তোমাদের যদি এই দৃশ্য দেখতে ভালো না লাগে, তাহলে প্লিজ এই রুম থেকে চলে যাও।’
এর পরপরই তিনি ট্রিগার টেনে দেন এবং সাথে সাথেই তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। এই ঘটনার প্রায় দুই দশক পরে প্রমাণিত হয় যে, ডয়ার আসলেই নিরপরাধ ছিলেন, যা তার মৃত্যুকে বিশ্ববাসীর নিকট আরও দুঃখজনক করে তোলে।
৫. রাণী ক্লিওপেট্রা
রাণী ক্লিওপেট্রা তার সৌন্দর্য, মোহনীয়তা আর উচ্চাভিলাস দিয়ে পুরো বিশ্ব কাপিয়েছেন। তিনি পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে আলোচিত নারী শাসক। বেঁচে ছিলেন মাত্র ৩৯ বছর। তার কর্মকান্ড যতোটা না আলেচিত তার চেয়েও বেশি আলোচিত তার মৃত্যুর রহস্য। তার মৃত্যু নিয়ে ধোয়াশা রয়ে গেছে আজও। কেউ কেউ বলেন তাকে বিষ প্রয়োগ করে হত্যা করা হয়েছে। কেউ বলেন তিনি নিজেই আত্মহত্যা করেছেন। তবে স্বেচ্ছায় সাপের কামড় খেয়ে মৃত্যুবরণ করার মতটি সবচেয়ে বেশি প্রসিদ্ধ।
মহাবীর আলেকজান্ডার মিশর জয় করার পর নাম রাখেন আলেকজান্দ্রিয়া। টলেমিক বংশ এই নগর শাসন করা শুরু করে। এই বংশের অন্যতম শাসক ছিলেন ইরিয়াক। খ্রিষ্টপূর্ব ৭৯ অব্দের ইরিয়াকের ঘরে জন্ম হয় ক্লিওপেট্রা ফিলোপেটরের। তার মৃত্যুর পর শাসনভার এসে পরে কন্যা ক্লিওপেট্রা ফিলোপেটরের ওপর। রাজ্যের নিয়ম অনুযায়ী ক্লিওপেট্রার জীবনসঙ্গী থাকা বাধ্যতামূলক। তাই রাজ রক্ত রক্ষার্থে ১৮ বছর বয়সি ক্লিওপেট্রা ১২ বছরের ছোটভাই টলেমিকে বিয়ে করেন। কিন্তু ফারসুলাসের যুদ্ধে মারা যান টলেমি।
ক্লিওপেট্রার সৌন্দর্যের কথা শুনে রোমান শাসক মার্ক অ্যান্টনি আলেকজান্দ্রিয়ায় এসে পৌঁছুলে দুজনের মধ্যে শুরু হয় প্রেমের সম্পর্ক। এই প্রেমের কারণেই অ্যান্টনিওর সাথে দ্বন্দ্ব শুরু হয় রোমান সম্রাজ্যে তার নিকটতম প্রতিন্দ্বন্দ্বী অক্টাভিয়ানের সাথে, যা শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ পর্যন্ত গড়ায়। যুদ্ধে সমস্ত রোমান জনসাধারণ অক্টাভিয়ানকে সমর্থন দেয়। ফলে পরাজিত হয় ক্লিওপেট্রা-অ্যান্টনিওর দল। ফলে রোমান সম্রাজ্যের সমস্ত ক্ষমতা হারায় অ্যান্টনিও। পরাজয় মেনে নিতে না পেরে আলেকজান্দ্রিয়ায় এসে ক্লিওপেট্রার সামনে আত্মহত্যা করেন অ্যান্টনিও। এর আগে ক্লিওপেট্রা প্রেমের বন্ধনে আবদ্ধ হন আরেকজন দাপুটে রোমান শাসকের। তার নাম জুলিয়াস সিজার। কিন্তু সেও ক্লিওপেট্রাকে দুঃসময়ে রেখে চলে যায়।
কারো কারো মতে নিজের চোখের সামনে অ্যান্টনিওকে মরতে দেখে নিজেই আত্মহত্যা করে বসেন ক্লিওপেট্রা। আবার কেউ কেউ বলেন ক্লিওপেট্রা আসলে নাটক সাজাতে গিয়ে নিজের আত্মহত্যার খবর যুদ্ধক্ষেত্রে অ্যান্টনিওর কাছে পাঠিয়েছেন। যাতে পরাজিত অ্যান্টনিওকে জীবন থেকে সরিয়ে অক্টভিয়ানকে কোনোভাবে নিজের দিকে আকৃষ্ট করা যায়।ঐতিহাসিকদের মতে, ছোটখাটো ভাইপার বা মিশরীয় গোখরা সাপের ছোবলে মৃত্যু হয়েছে ক্লিওপেট্রার। কারণ ভাইপারগুলো মিশরে তখনকার রাজকীয়তার প্রতীক ছিল। ফলে রাজপ্রাসাদে সেগুলো সংরক্ষণের সম্ভাবনা ছিল প্রবল। অন্যদিকে ক্লিওপেট্রা দেবি আইসিসের পূজা করতেন, যা ছিল একটি গোখরা সাপ। কথিত আছে, গোখরা ছিল তার প্রিয় সাপ। সাপের ছোবলে ক্লিওপেট্রা ও তার দুইজন দাসীর মৃত্যু হয়। খ্রিস্টপূর্ব ৩০ অব্দের মৃত্যুবরণ করেন ক্লিওপেট্রা।
সূত্র : রোয়ার মিডিয়া : নিউজ ভিউ