এই অদ্ভুত এবং প্রাচুর্যমন্ডিত নামটির সঠিক ইতিহাস আসলে কোথাও খুঁজে পেলাম না। পুরান ঢাকাকে অনেকেই বায়ান্নো বাজার তেপ্পান্নোর গলির শহর বলে। এর কারন হিসেবে ঢাকা শহরের অগণিত গলি, পাড়ার মোড়ে মোড়ে বাজার ইত্যাদি হতে পারে।
শুধু বাজার কিংবা গলি নয়, ঢাকা শহরে রয়েছে অসংখ্য মসজিদ। এজন্য ঢাকাকে মসজিদের শহর ও বলা হয়।
প্রায় ৪০০ বছরের বেশী পুরানো এই শহরের রয়েছে আরো বেশকিছু অতুলনীয় অঞ্চলভিত্তিক নাম, পুর/তলা/তলী/গঞ্জ ইত্যাদি সেইসব নামের শেষে সংযুক্ত হয়ে নামগুলোর সৌন্দর্য আরো যেন বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েকগুণ। একেকটি রাস্তা তার নিজের পরিচয় দেয় নামে, স্থাপত্যে, প্রকৃতি-পরিবেশে। প্রত্যেকটি এলাকার নামের সাথে জড়িয়ে আছে অজানা অনেক স্মৃতি। তাদের নিজস্ব কিছু বলার আছে, অস্তিত্ব আছে। প্রত্যেকটি এলাকার সাথে পরিচিত হতেই, আজকেই এই লেখা।
পুরান ঢাকা বাঙালি জাতির এক অতুলনীয় ঐতিহ্য, অপূরণীয় অধ্যায়। বাঙালির শেকড়টা কিন্তু সেই পুরান ঢাকাতেই। ‘ঢাকা’ নামের যেমন চমকপ্রদ তত্ত্ব আছে, ঢাকা অথবা তৎকালীন ঢাকার গড়ে ওঠা এলাকাগুলোর নামও বেশ ভারি। এলাকার নামগুলো জানলেই, ইতিহাসের প্রাথমিক অধ্যায় জেনে যাওয়া যায়। পুরান ঢাকা বাঙালি জাতির এক অতুলনীয় ঐতিহ্য, অপূরণীয় অধ্যায়। বাঙালির শেকড়টা কিন্তু সেই পুরান ঢাকাতেই। ‘ঢাকা’ নামের যেমন চমকপ্রদ তত্ত্ব আছে, ঢাকা অথবা তৎকালীন ঢাকার গড়ে ওঠা এলাকাগুলোর নামও বেশ ভারি। এলাকার নামগুলো জানলেই, ইতিহাসের প্রাথমিক অধ্যায় জেনে যাওয়া যায়।
পুরান ঢাকাকে ব্যাখ্যা করা যায় ‘বায়ান্নো বাজার তেপ্পান্নো গলি’ বলে। এখানে প্রচুর গলি, বাজার থাকায় এই নামকরণ করেছিলো হয়তো কেউ। শুধু বাজার নয়, এখানে আছে অনেকগুলো ‘পুর’, ‘গঞ্জ’, ‘তলা’, ‘তলী’ এবং বাহারি নামের এলাকা। এলাকার নামকরণের পেছনে লুকিয়ে আছে একটির চেয়ে একটি রোমাঞ্চকর ঘটনা। ৪০০ বছরের ইতিহাসের খনি পুরান ঢাকার রাস্তাগুলো যেন একেকটা গল্প। একেকটি রাস্তা তার নিজের পরিচয় দেয় নামে, স্থাপত্যে, প্রকৃতি-পরিবেশে। প্রত্যেকটি এলাকার নামের সাথে জড়িয়ে আছে অজানা অনেক স্মৃতি। তাদের নিজস্ব কিছু বলার আছে, অস্তিত্ব আছে। প্রত্যেকটি এলাকার সাথে পরিচিত হতেই, আজকেই এই লেখা ।
আজকে আমরা কথা বলবো আমাদের এই প্রিয় ঢাকার আদি অঞ্চলটিকে নিয়ে যেটাকে আমরা সবাই পুরান ঢাকা নামে জানি। সংস্কৃতি নির্ভর আমাদের বাংলাদেশের অন্যান্য যে কোন অঞ্চল থেকে আমাদের এই পুরান ঢাকার রয়েছে অনেকটুকু ভিন্ন এবং চরম উপভোগ্য আলাদা এক সংস্কৃতি।
পুরান ঢাকার ইতিহাস কিন্তু অনেক পুরানো এবং অনেক অভিজাত্যে ভরপুর ছিলো। বিশেষ করে মোঘল আমলে পুরান ঢাকা অন্যতম এক সুন্দর, সুপরিকল্পিত এবং উপভোগের এক শহর ছিলো। কালের বিবর্তনে মোঘলরা আজ আর নেই তবে মুঘল প্রাদেশিক রাজধানী হিসেবে একসময়ের প্রচণ্ড ঝাকঝমকপুর্ন প্রাচীন এই শহরে রয়ে গেছে মোঘল দের বিভিন্ন আচার-ঐতিহ্য, দালান কোঠা, রীতি রেওয়াজ, নিয়ম কানুন ইত্যাদি।
পুরান ঢাকার ইতিহাস
৩৫০ শতক থেকে ১৬১০ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন শাসনামল( কামরুপ সাম্রাজ্য, হিন্দু শাসনামল,দিল্লী সালতানাত শাসনামল) পর্যায়ক্রমে শেষ করার পরে আনুষ্ঠানিকভাবে ইসলাম খান চিশতী কর্তৃক আদি ঢাকার যাত্রা শুরু হয়। মুলত মুসা খাঁ ( বারো ভূইয়া জমিদারির শেষ জমিদার) এর পতনের পরেই মোঘল সাম্রাজ্যের অধীনে শুরু হয় প্রাচীন ঢাকার ঐতিহাসিক যাত্রা। পুরান ঢাকার ইতিহাস খুঁজে তথ্য যা পেলাম, খুবই ইন্টেরেস্টিং এবং চমকপ্রদ মনে হলো। বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে জুড়ে গড়ে উঠা এই প্রাচীন নগরীর নামকরণে কিছুটা দ্বিমত রয়েছে। যেমন অনেকে মনে করেন আদি ঢাকার নামকরন করেছেন রাজা বল্লাল সেন। কোন এক সময় বুড়িগঙ্গা তীরবর্তী জঙ্গলে ঘুরতে যেয়ে তিনি দেবী দুর্গার এক পুরাতন বিগ্রহ খুঁজে পান।
পরবর্তীতে এই বিগ্রহ প্রতিস্থাপন এর জন্য তিনি ঢাকেশ্বরী মন্দির স্থাপন করেন। দেবী দুর্গার বিগ্রহ টি যেহেতু ঢাকা ( গুপ্ত) অবস্থায় তিনি পেয়েছিলেন তাই তিনি মন্দিরের নামকরণ এভাবে করেন। পরবর্তীতে মন্দিরের এই ঢাকেশ্বরী নাম থেকেই কালক্রমে মন্দির এবং তার আশেপাশের বেশ কিছু অঞ্চল ঢাকা নামে সাধারণ মানুষের মুখে মুখে রটে যায়। আরেকদল মনে করেন, সম্রাট জাহাঙ্গীর ১৬১০ সালে ততকালীন ঢাকাকে বাংলাদেশ এবং ভারতের বেশ কিছুঅঞ্চলের রাজধানী হিসেবে ঘোষিত করেন। তখন ঢাকার এ আদি অঞ্চলে সুবাদার ইসলাম খান এই আনন্দে প্রচুর ঢাক বাজানোর আদেশ করেন।
লোকমুখে শোনা যায়, এই ঢাক বাজানোর ঘটনা এতোই চমকপ্রদ ছিলো যে আস্তে আস্তে লোকমুখে সেটা এক কিংবদন্তি গল্প হিসেবে প্রচলিত হতে হতে একসময় এই শহরটির নাম ঢাকা হয়ে যায়। তবে প্রাচীন ঢাকার প্রাচীন নাম কিন্তু ঢাকা ছিলো না। মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীর কে সম্মান প্রদর্শন পুর্বক কিছু সময় এর নাম ছিলো জাহাঙ্গীরনগর। পুরানো ঢাকার নামকরণের শেষ মতবাদ টি হলো এর ভৌগোলিক অবস্থানের সাথে সম্পর্কিত। ১৬১০ সালে সুবাহ বাংলার রাজধানী যখন রাজমহল থেকে স্থানান্তরিত করে পুরান ঢাকায় নেওয়া হয়, এই ঢাকার ভৌগোলিক অবস্থান নির্ধারণের জন্য সুবেদার ইসলাম খান চিশতী এক অদ্ভুত নির্দেশ দেন।
তার নির্দেশনা অনুযায়ী ঢাকার সীমানা নির্ধারণের উদ্দেশ্য বেশ কয়েকজন ঢাকি কে উচ্চস্বরে ঢাক বাজাতে থাকেন। পাশাপাশি তিনজন ঘোরসওয়ার ছুঁটে যান তিন দিকে। বলা বাহুল্য যে পর্যন্ত এই ঘোড়সওয়ার রা ঢাকের শব্দ শুনতে পেয়েছিলেন, সেখানেই ঢাকার সীমানার নিশানা গেড়ে আসেন। তো এই ঢাকের শব্দ ওইসময় এতোটাই জনপ্রিয় হয়েছিলো, লোকমুখে প্রচলিত হতে হতে একসময় পুরোটা অঞ্চল ঢাকা নামেই পরিচিত হয়ে যায়।
সদরঘাট ,ওয়াইজঘাট, ধোলাইখাল, ওয়ারী, আর্মানিটোলা, চাংখারপুল ,নারিন্দা,গেন্ডারিয়া, বেচারাম দেউরী, সেগুনবাগিচা
পরিশেষে
মোঘলদের পত্তনের পরে ব্রিটিশ লর্ডেরা এই পুরান ঢাকা শহরের বেশকিছু সংস্কার করায় ব্রিটিশ শাসনকাল পর্যন্ত এই শহরের শ্রী কিছুটা বিদ্যমান ছিলো। কিন্তু আধুনিকায়নের যাতাকলে পিস্ট হয়ে আমাদের সেই প্রাচীন অভিজাত এবং ছিমছাম ঢাকা শহর অনেকটাই হারিয়ে ফেলেছে তার পূর্বের প্রাচীন সৌন্দর্য। বর্তমানে নগরপিতাদের অবহেলা আর অযত্নে এই শহর যেন কেমন বিবর্ণ আর মলিন হয়ে যাচ্ছে।
যাই হোক,সর্বোপরিভাবে আমাদের পুরান ঢাকা এখনো রিপ্রেজেন্ট করে আমাদের প্রাচীন অনেক ঐতিহ্য এবং গৌরবমন্ডিত ইতিহাস। ইতিহাসের চাদরে মোড়ানো আমাদের এই পুরান ঢাকা। কি নেই এখানে? শিক্ষা সংস্কৃতি, বিভিন্ন কলকারখানা, অফিস আদালত, আচার-অনুষ্ঠান, বাহারী চালচলন, মুখরোচক খাবার দাবার, ঘুরতে যাওয়ার জন্য অসংখ্য ঐতিহাসিক স্থাপনা, আরো কত কি আছে এখানে!
আমাদের ভালোবাসার আদরে মোড়া প্রাচীন এই আমাদের পুরান ঢাকা কেবলি এক শহর নয়, এ এক অন্য রকম আবেগ, অন্যরকম শান্তির স্থান।
তথ্যসূত্র : উইকিপিডিয়া ও বিভিন্ন পুস্তকাদি