ভাটির কিংবদন্তি বাউলসম্রাট আবদুল করিম
ইতিহাস

ভাটির কিংবদন্তি বাউলসম্রাট আবদুল করিম

রাতিন রহমান

ভাটি অঞ্চলের প্রবাদপুরুষ বাউল সম্রাট শাহ আবদুল করিমের প্রয়াণদিবস আজ। কিংবদন্তী বাউলসাধক সঙ্গীত শিল্পী, গীতিকার, সুরকার ও বাউল সঙ্গীতশিক্ষক শাহ আবদুল করিম সিলেটের সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলার উজানধল গ্রামে ১৯১৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি, বাংলা ১৩২২ বাংলার ফাল্গুন মাসের প্রথম মঙ্গলবার জন্মগ্রহণ করেন। সুনামগঞ্জ ও তদসংলগ্ন ভাটি অঞ্চলের নৈসর্গিক জলো হাওয়া আর সিক্ত মাটির অনুভবে মানুষগুলোর মধ্যে আবহমানকাল ধরে যে বাউল চেতনার ব্যাপ্তি ও বিস্তার লাভ করেছিল, তাকে সার্থকভাবে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া মহান সাধক ছিলেন বাউল শাহ আবদুল করিম। যার গানের সহজিয়া সুরে মিশে ছিল এই মাটির গল্প, এই অঞ্চলের সহজ সরল মানুষের জীবনের গল্প, আধ্যাত্মিকতা এক অনুপম গভীরতা, খুব সহজেই যিনি সবাইকে আপন করে নিতে পারতেন তার অনবদ্য সৃষ্টিশীলতার জাদুতে!

কৃষক ইব্রাহিম আলীর ছয় সন্তানের মধ্যে একমাত্র ছেলে ছিলেন শাহ আব্দুল করিম। নিজের পরিবারের গল্প তিনি বলেছিলেন স্বরচিত গানে সুরে সুরে—

পিতার নাম ইব্রাহিম আলী মাতা নাইওরজান
ওস্তাদ ছমরুমিয়া মুন্সী পড়াইলেন কোরান।
বাউল ফকির আমি, একতারা সম্বল
সরলা সঙ্গিনী নিয়ে আছি উজানধল।।
নূরজালাল নামে মোর আছে এক ছেলে…

খুব ছোটবেলায় সুনামগঞ্জের কালনী নদীর তীর ঘেঁষে যে শৈশব কাটিয়েছিলেন তিনি, তখন ছিলেন গ্রামের মোড়লের বাড়িতে রাখালবালক। দাদা নসিবউল্লাহ গাইতেন, “ভাবিয়া দেখ মনে, মাটির সারিন্দা রে বাজায় কোন জনে..” এমন অনেক গান, সেসব শুনে কিশোর আবদুল করিমের মনে ভাবের উদয় হয়। তৈরি হয় ফানের প্রতি, বাউল সাধনার প্রতি এক প্রবল অনুরাগ। কৃষিকাজ, মুদি দোকানদারীসহ নানা কাজে জীবিকা নির্বাহ করেছেন তিনি, কিন্তু তার সবসময়ের সঙ্গী ছিল গান। পরে তার রচিত গানেও সঙ্গীতের প্রতি তার বিশুদ্ধ অনুরাগের কথা উঠে এসেছে বারবার—

গান গাই আমার মনরে বুঝাই
মন থাকে পাগলপারা
আর কিছু চায়না মনে
গান ছাড়া গান ছাড়া

সঙ্গীতের প্রতি এই প্রচন্ড ভালোবাসার জন্য নিজের গ্রামের মানুষের কাছ থেকে কাফের উপাধিও পেয়েছিলেন তিনি, অপরাধ ছিল তিনি মিথ্যা বলতে চাননি। এমনকি তাকে গ্রাম ছাড়াও হতে হয়েছিল। এক ঈদের জামাতে যুবক শাহ আবদুল করিম যোগ দিতে এসেছিলেন। তো তিনি গান-বাজনা করেন, এটা অনেকেই জানতেন। গ্রামবাসীর অনেকেই তাকে এজন্য পছন্দ করলেও অনেকেই চরম অপছন্দ করতেন। তো তিনি জামাতে নামাজ আদায় করতে গেলে তাকে আটকে দেয়া হলো। জানানো হল, গান গাওয়া বেশরিয়তি-বেদাত কাজ। করিমকে তওবা করতে হবে।
শাহ আব্দুল করিম অবাক হলেন। নিজ গ্রামেই এই কথা শুনবেন ভাবেননি। তিনি শান্ত এবং দ্বিধাহীনভাবে বললেন,

“পরে করিব যাহা এখন যদি বলি করব না,
সভাতে এই মিথ্যা কথা বলতে পারব না।”
করিম বলতে চেয়েছিলেন, তওবার খাতিরে এখন যদি বলেন তিনি আর গান গাইবেন না, সেটা তো সত্য না। গান ছাড়া তিনি তো থাকতে পারবেন না। এই দরিদ্র, নিস্তরঙ্গ জীবনে আছে কি শুধু, গানটা ছাড়া! কিন্তু, আব্দুল করিমের উত্তরে গ্রামবাসী হতাশ হলো। আর তখনই শাহ আব্দুল করিমকে কাফের আখ্যা করে গ্রাম ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। সত্যি সত্যিই তাকে নিজ গ্রাম ছেড়ে বেরিয়ে যেতে হয়েছিল সেই সময়।

নিজের গ্রাম ছাড়ার পরে শাহ আবদুল করিম ঘুরে বেরিয়েছেন গ্রাম থেকে গ্রামে, গান গেয়েছেন, চমৎকৃত করেছেন মানুষকে, তাদের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন অজান্তেই। তার ভাষায়, মাঠে গরু রাখতে রাখতে গান গাইতাম। রাখাল বন্ধুরা তখন গোল হয়ে গান শুনতো। আস্তে আস্তে গান আমাকে কব্জা করতে শুরু করে। আমি বুঝে যাই সারিন্দাই আমার প্রথম ও শেষ।

এই গানকে আপন করে আঁকড়ে ধরার কারণে তার প্রথম স্ত্রীর সাথেও সম্পর্ক শেষ হয়ে গিয়েছিল। বিয়ে করেছেন তিনি, বউয়ের নাম কাঁচামালা। কিন্তু নববিবাহিত স্ত্রীকে ঘরে রেখে রাতের পর রাত করিম গানের আসরে গান করেন, গান লেখেন, গান বাঁধেন, সুর দেন, নিজে গান। নানান জায়গায় গানের আসর বসে। মজমার মধ্যে থেকে থেকে রাত ভোর হয়। এক পর্যায়ে শ্বশুরবাড়ি থেকে তার ডাক এলো, তাকে গান অথবা স্ত্রী- যেকোন একটি বেছে নিতে বলা হলো। বাধ্য হয়ে আবদুল করিম স্ত্রী সঙ্গ ত্যাগ করলেন। তার প্রথম প্রেম যে সঙ্গীত, তাকে তো তিনি ছাড়তে পারবেন না। অযথা স্ত্রী কষ্ট পাবে, তার উপর অবিচার করা হবে।

আবদুল করিমের জীবনে এরপরে আরেকজন নারী এলেন। আফতাবুন্নেসা নামে এই ভদ্রমহিলা ছিলেন আবদুল করিমের জীবনটা বদলে দেয়া, তাকে সাধনার উচ্চ স্তরে পৌঁছাতে সাহায্য করা বাউল সম্রাট হয়ে উঠতে সাহায্য করা মহিয়সী নারী। যার ব্যাপারে বলতে গিয়ে সরল স্বীকারোক্তি করেছেন করিম, আমার স্ত্রীর নাম আফতাবুন্নেসা। আমি ডাকতাম সরলা নামে। আমার ‘আফতাবসঙ্গীত’ বইটি এই আফতাবুন্নেসার নাম অনুসারেই রাখা। আজকের এই করিম কখনোই করিম হয়ে উঠতে পারতোনা যদি কপালের ফেরে সরলার মতো বউ না পেতাম। আমি সরলাকে এখনো মুর্শিদ জ্ঞান করি। দীর্ঘ বাউলজীবনে দিনের পর দিন ঘরবাড়ি ছেড়ে ঘুরে বেড়িয়েছি, সরলা তার ন্যুনতম কষ্ট ও আমাকে বুঝতে দেয়নি। পোড়া কপাল আমার, এমন বউকে ধরে রাখতে পারিনি। মৃত্যুই তার সকল কষ্টের অবসান ঘটিয়েছে।

সরলা কখনো আব্দুল করিমের কাছে কিছু চাননি। বরং সর্বাবস্থায় পাশে থেকে আব্দুল করিমের গান নিয়ে অনুপ্রেরণা দিয়ে গেছেন জনমভর। দিনের পর দিন করিম গানের খাতিরে, নানা আসরে, গ্রামে গঞ্জে থাকতেন গানের বায়না নিয়ে, সরলা কখনো অভিমান করে থাকেননি। ঘরবিবাগী আবদুল করিম গানের আসর মাতাচ্ছেন, এদিকে সরলা অনাহারে আছেন, পরের বাড়িতে কাজ করে খাবার জোটাচ্ছেন, কিন্তু করিমকে তিনি কিছু জানতে দেননি। কারণ তিনি কোনভাবেই চাইতেন না করিমের গান রচনার উপর, সাধনার উপর সাংসারিক নানা ঝামেলা কোন প্রভাব ফেলুক। সরলা বলতেন, “আমি যদি আপনাকে আমার শাড়ির আঁচল দিয়ে বেঁধে রাখি, আপনি বাইরে যাবেন কেমনে? আর আপনি যদি বাইরের মানুষের সঙ্গে না মেশেন, তবে জগৎ চিনবেন কেমনে আর গান বানাইবেন কেমনে?” এই কারণে সরলার কথা মনে উঠলেই শেষ বয়সে কেঁদে বিষণ্ণ হয়ে যেতেন আব্দুল করিম। তিনি নিজের স্ত্রীকে মুর্শিদ বলে মানতেন। নিজের স্ত্রীকে মুর্শিদ বলে সম্মানিত করা সহজ কথা নয়।

আব্দুল করিমের সঙ্গিত সাধনায় মুগ্ধ হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও। একবার বঙ্গবন্ধু সুনামগঞ্জে আসবার পর শাহ আব্দুল করিমের সাথে তার সাক্ষাত হলো। আব্দুল করিম বঙ্গবন্ধুকে গান শোনালেন। শিল্প-সংস্কৃতি ও লোকায়ত বাংলার সঙ্গীত-সাহিত্যের প্রতি প্রবল অনুরক্ত বঙ্গবন্ধু শাহ আব্দুল করিমের গান শুনে প্রচন্ডভাবেই আপ্লুত হলেন। বললেন, আপনার মতো শিল্পীকে উপযুক্ত মর্যাদা দেয়া হবে। এই মুজিব বেঁচে থাকলে করিম ভাইও বেঁচে থাকবে, ইনশাআল্লাহ।

বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে মেরে ফেলার পরেও যা আর হয়নি। সুধী সমাজে বা দেশব্যাপী আলাদা করে করিমকে তুলে ধরার চেষ্টা আর কেউ করেননি, এই বাউলকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মানিত করা হয়নি আর। কিন্তু গণমানুষের অকুণ্ঠ সম্মান আর নিঃশর্ত ভালোবাসাটুকু করিম সবসময়ই পেয়েছেন। যেখানে যাকে গান শুনিয়েছেন, সেই সহজ গানের গভীর কথার ভেতর হারিয়েছে। স্রষ্টার সাধনা তিনি করতেন মানবের মাঝে, আধ্যাত্মিকতার উপস্থিতি যেমন ছিল, তেমনি ভাটি অঞ্চলের নিপীড়িত মানুষের দুর্দশাও তিনি ফুটিয়ে তুলেছিলেন তার গানের কথায়। তিনি বিশ্বাস করতেন স্রষ্টা আছেন, মানুষের মাঝেই আছেন। মৌলবাদী ধর্মান্ধদের রক্তচক্ষুর সামনেই স্পষ্ট করে তিনি স্রষ্টা ও ধর্ম নিয়ে ব্যবসা ফেঁদে বসা ধর্মব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সাহসী উচ্চারণ করে গেছেন এভাবে—

‘আমি কখনোই আসমানী খোদাকে মান্য করিনা। মানুষের মধ্যে যে খোদা বিরাজ করে আমি তার চরণেই পুজো দেই। মন্ত্রপড়া ধর্ম নয়, কর্মকেই ধর্ম মনে করি। লাখ লাখ টাকা খরচ করে হজ্জ্ব পালনের চেয়ে এই টাকাগুলো দিয়ে দেশের দুঃখী দরিদ্র মানুষের সেবা করাটাকে অনেক বড় কাজ মনে করি। প্রচলিত ধর্ম-ব্যবস্থা আমাদের মধ্যে সম্প্রদায়গত বিদ্বেষ তৈরী করে দিয়েছে। কতিপয় হীন মোল্লা-পুরুত আমাদের ভাইয়ে ভাইয়ে বিভাজন নিয়ে এসেছে। এই বিভাজনই যদি ধর্ম হয় সেই ধর্মের কপালে আমি লাত্থি মারি।’

‘সবার উপরে মানুষ সত্য’ এই হলো আমার ধর্ম। নামাজ রোজার মতো লোক দেখানো ধর্মে আমার আস্থা নাই। কতিপয় কাঠমোল্লা ধর্মকে তাদের নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছে। আমার এলাকায় প্রতিবছর শীতের সময় সারারাত ওয়াজমাহফিল হয়। দূর-দূরান্ত থেকে বিশিষ্ট ওয়াজীরা আসেন ওয়াজ করতে। তারা সারারাত ধরে আল্লা-রসুলের কথা তো নয় বরং আমার নাম ধরেই অকথ্য-কুকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। কি আমার অপরাধ? গান গাইলে কি কেউ নর্দমার কীট হয়ে যায়? (তাঁর শ্বাস-প্রশ্বাস পড়ছে দ্রুত, উত্তেজনায় কন্ঠস্বর উচ্চস্বরে উঠছে ক্রমে) এই মোল্লারা ইংরেজ আমলে ইংরেজী পড়তে বারণ করেছিলো, মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানীদের পক্ষে নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিলো। আজো তারা তাদের দাপট সমানতালে চালিয়ে যাচ্ছে। এগুলো দেখে মনে হয় একাই আবার যুদ্ধ করি। একাই লড়াইয়ের ময়দানে নামি। জীবনের ভয় এখন আর করিনা। আরেক যুদ্ধ অবধারিত হয়ে পড়েছে, এছাড়া আর মুক্তি নাই।’

কি বলবো, কতোই বলবো দুঃখে ভেতরটা পাথর হয়ে আছে। আমার এক শিষ্য, তার নাম ছিলো আকবর । সিদ্ধি টিদ্ধি খেতো বোধহয়। আকবর মারা গেলো অকালেই। তার মৃত্যুর কথা মাইকে ঘোষনা দেবার জন্য আমি নিজে মসজিদে গিয়ে ইমাম সাহেবকে বললাম। ইমাম তো ঘোষনা করবেনইনা বরং জানাজার নামাজ পড়াবেননা বলে সাফ সাফ জানিয়ে দিলেন। আকবরের দোষ হলো সে আমার শিষ্য। আমি গান গাই, আমি কাফির। শুধু আমি গিয়ে যদি উনার হাত ধরে তওবা করি তাহলেই আকবরের জানাযার না মাজ পড়ানো যায় কিনা তিনি ভেবে দেখবেন। বেতনভোগী এই চাকরটার কথা শুনে রাগে দুঃখে ভেতরটা বিষিয়ে গেলো। আতরাফের সবাই তাকে বাৎসরিক যে চাঁদা দিয়ে রাখে সেই চাঁদার একটা ভাগ তো আমিও দেই। তাৎক্ষনিক কিছুই বলিনি কারন কথাটা আমার গ্রামবাসীর কানে গেলে একটা ঝামেলা হয়তো বেধে যেতে পারে। অগত্যা আমি নিজেই জানাজা পড়িয়ে আকবরের কবর দেই। এই কথা মনে আসলে আজো চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনা।

আরো একবার এই বাউলকে নিজের আপনজনের জানাজা নিজেকেই পড়াতে হয়েছিল। বিনা চিকিৎসায় তার মুর্শিদ সরলার প্রয়াণে যখন তার বুক ভাঙ্গা, তখন নির্দয় জালিমের মত গ্রামের মসজিদের ইমাম সাহেব বললেন, বাউলের স্ত্রীর আবার কিসের জানাজা, বাউলার স্ত্রীর জানাজা পড়ানোর দরকার নেই। এই ফতোয়ার পর করিমের স্ত্রীর জানাজা পড়ানোর লোক পাওয়া যাচ্ছিল না। ভাঙ্গা বুকে আব্দুল করিম নিজেই নিজ বাড়ির আঙ্গিনায় নিজের স্ত্রীর জানাজা পড়ালেন। পৃথিবীতে প্রেমের মহান নিদর্শন আছে অনেক, কিন্তু করিম-সরলার এই অসামান্য অনুপম প্রেমকাহিনী আমরা জানিই না তেমন!

বাউল শাহ আবদুল করিমের প্রকাশিত বইয়ের তালিকাঃ আফতাব সঙ্গীত (১৩৫৫ বাংলা; আনুমানিক ১৯৪৮) গণ সঙ্গীত (১৯৫৭) কালনীর ঢেউ (১৩৮৮ বঙ্গাব্দের আশ্বিন; ১৯৮১ সালের সেপ্টেম্বর) ধলমেলা (১৩৯৬ বঙ্গাব্দের ১ ফাল্গুন; ১৯৯০ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি) ভাটির চিঠি (১১ বৈশাখ ১৪০৫; ২৪ এপ্রিল ১৯৯৮) কালনীর কূলে (নভেম্বর ২০০১) শাহ আব্দুল করিম রচনাসমগ্র (সংকলন ও গ্রন্থন: শুভেন্দু ইমাম, ২২ মে ২০০৯)। ২০০২১ সালে অবশেষে রাষ্ট্র তাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মানিত করে একুশে পদক প্রদান করে, সত্যি বলতে কি একুশে পদকটিই সম্মানিত হয় এই মহান সাধককে সম্মানিত করতে পেরে। জীবদ্দশায় কমপক্ষে দুই হাজারেরও বেশি গান রচনা করেছিলেন এই সাধক।

২০০৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর ভাটি অঞ্চলের প্রবাদপুরুষ বাউল শাহ আবদুল করিম দেশ-বিদেশে তার অজস্র গুণগ্রাহী রেখে দেহত্যাগ করেছেন। শোকের ছায়া নেমে আসলো চারধারে। আব্দুল করিমের লাশ রাখা হয়েছিল শহীদ মিনারে। সেখানে অগণিত মানুষ এসেছিলেন মানুষটাকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে। শাহ আব্দুল করিমের জন্য অপেক্ষায় ছিলেন তার ভাটি অঞ্চলের মানুষরাও। তাকে নিয়ে যাওয়া হবে তার নিজভূমিতে। উজানধলগ্রামের উদ্দেশ্যে নৌকার বহরের যাত্রা সেই গ্রামের মসজিদের দিকে। কথা আছে সেখানে হবে, এই বাউলের তৃতীয় জানাজা। ভাগ্যের কি ফের। যে মসজিদে ঈদের জামাত পড়তে চেয়ে তিনি হয়েছিলেন অপরাধী, আজ সেই মসজিদেই হচ্ছে তার লাশের জানাজা। যেখান থেকে দোষী সাব্যস্ত হয়ে তিনি গ্রাম ছেড়েছিলেন যৌবনে, জীবন সায়াহ্নে নিয়তি তাকে সেখানেই এনে থামিয়েছে আবার। তবে এবার সর্বজনশ্রদ্ধেয় কিংবদন্তী সাধকের সম্মানে!

“তুমি সুজন কান্ডারি নৌকা সাবধানে চালাও,
মহাজনে বানাইয়াছে ময়ূরপঙ্খি নাও..”
সাধক আবদুল করিম নিশ্চয়ই তার ময়ূরপঙ্খি নাও নিয়ে মহাকালের অন্তহীন পথ পাড়ি দিচ্ছেন পরম আনন্দে! আমরা শুধু ভেবে যাই, আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম আমরা, আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম…

তথ্য কৃতজ্ঞতাঃ
১। শাহ আবদুল করিমের সাক্ষাৎকার/ কবি টি.এম আহমেদ কায়সার
(প্রথম প্রকাশিতঃ সাময়িকী খোয়াব/ ১৯৯৭ সাল)
২। শাহ আব্দুল করিম- অবিশ্বাস্য যার জীবনের গল্প/ দেবদাস বাবু

সারাবাংলা/এসবিডিই/এএসজি

Source link

Related posts

১৯৪৭ সালের দেশভাগের কারণ; পাকিস্তান ও ইন্ডিয়া রাষ্ট্রের সৃষ্টি

জাহিদ হাসান

মিশরের রাজপথে ১৮ জন রাজা ও ৪ জন রানির মমির যাত্রা

News Desk

প্রাচীন ভারতীয় গণিতবিদ্যার আদ্যোপান্ত

News Desk

Leave a Comment