আটলান্টিকের পূর্ব কিনারা ঘেঁষে আফ্রিকার পশ্চিম প্রান্তের দেশ সেনেগাল। গোলাপি পানির জলাশয়ের জন্য বিখ্যাত এই দেশটির রাজধানী ডাকার।বাংলাদেশ থেকে দেশটির সময়ের ব্যবধান পাঁচ ঘন্টার।
২০১৮ সালের তথ্যানুযায়ী, সেনেগালের জনসংখ্যা এক কোটি সাতান্ন লাখের কিছু বেশি। এদের শতকরা ৯৪ ভাগ মুসলমান, ৫ ভাগ খ্রিষ্টান এবং অবশিষ্ট এক ভাগ অন্যান্য ধর্মের। এই মুসলিমরা শুধু নামেই মুসলিম নয়; তারা যথেষ্ট ধার্মিক। ধর্মচর্চায় সেনেগালবাসীর বেশ সুনাম রয়েছে।
আগামীকাল ৪ এপ্রিল সেনেগালের স্বাধীনতা দিবস। ১৯৬০ সালে ফ্রান্স থেকে তারা স্বাধীনতা লাভ করে। সেনেগালের স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের অনুষ্ঠান আফ্রিকার অন্যান্য দেশের মতো হলেও আলাদা একটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে। সেটা হলো, রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণে আয়োজিত সমাবেশে দাঁড়িয়ে পবিত্র কোরআন খতম দেওয়া হয়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত কোরআন তেলাওয়াতে আগ্রহীদের আগে থেকেই এক পৃষ্ঠা করে ভাগ করে দেওয়া হয়। সেনেগালের প্রচলিত কোরআন শরিফগুলো ৩০০ পাতার (৬০০ পৃষ্ঠা)। সে হিসেবে কোরআন খতম দিতে প্রয়োজন হয় ৬শ’ মানুষের মাত্র ২ থেকে ৩ মিনিট। মানুষ বেশি হলে একাধিক খতম দেওয়া হয়।
আসুন এবার সেনেগাল নিয়ে বিস্তারিত জেনে নিই;
★ মানচিত্রে দেশটির অবস্থান ★
আফ্রিকার পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত এই দেশটির পশ্চিমে রয়েছে আটলান্টিক মহাসাগর, উত্তরে মৌরিতানিয়া, পূর্বে মালি এবং দক্ষিণে গিনি ও গিনি-বিসাও। এছাড়াও গাম্বিয়া রাষ্ট্রের উত্তর, পূর্ব ও দক্ষিণ সীমানা সেনেগাল দ্বারা বেষ্টিত। সেনেগালের আয়তন এক লক্ষ ছিয়ানব্বই হাজার সাতশ বাইশ বর্গ কিলোমিটার। আয়তনের দিক থেকে বিশ্বের মধ্যে ৮৬তম দেশ এটি। তবে শাষণ ব্যবস্থার সুবিধার্থে বর্তমানে দেশটি ১৪টি অঞ্চলে বিভক্ত।
★ভাষা ও মুদ্রা ★
সেনেগালের অফিশিয়াল ভাষা ফ্রেন্স হলেও স্থানীয় অনেক গুলো ভাষা রয়েছে। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত ভাষা হচ্ছে ওলফ। সেনেগালের মুদ্রার নাম কমুটেট ফাইনেনসিয়ার আফ্রিকানি ফ্রান্সি, সংক্ষেপে যা জফ হিসেবে প্রচলিত। দেশটির অধিকাংশ মানুষ গ্রামে বসবাস করে এবং জনসংখ্যার অধিকাংশ ওলফ নামের জনগোষ্ঠীর অর্ন্তভূক্ত।
★দেশের নামকরন★
এক মতবাদ অনুযায়ী জানা যায়, ১৫ কিংবা ১৬ শতকের দিকে পর্তুগিজরা সেনেগালে আসে। স্বাভাবিক ভাবেই তখন দেশটির নাম তাঁদের জানা ছিল না। তখন স্থানীয় মৎস্যজীবীদের কাছে নাম জানতে চাইলে তাঁরা বলে ‘সুনু গাল’। কিন্তু পর্তুগিজরা ওই শব্দের কোনও অর্থ বুঝতে না পেরে নাম দিয়ে ফেলে ‘সেনেগাল’। তবে সাধারণ মানুষের মতে সেনেগাল নদীর ওপর ভিত্তি করে দেশটির নাম রাখা হয়েছে ‘সেনেগাল’। এই সেনেগাল নদী দেশটির পূর্ব ও উত্তর সীমান্ত নির্দেশ করে।
★রাষ্ট্রপতি নিজেই রচনা করেন দেশের জন্য জাতীয় সংগীত★
১৯৬০ সালে ফ্রান্সের কাছ থেকে দেশটি পূর্ণ স্বাধীনতা লাভের পর স্বাধীন দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি হন লিওপোল্ড ফেডার সিংহল, যিনি একজন কবি এবং দার্শনিক ছিলেন। তিনি নিজেই সেনেগালের জাতীয় সঙ্গীত রচনা করেন।
★প্রচুর কৃষি জমি থাকলেও কৃষি কাজে আগ্রহ নেই কারো ★
সামুদ্রিক মাছ বিক্রি করা এখানকার মানুষের অন্যতম প্রধান পেশা। এরা নানা ধরনের সামুদ্রিক মাছ ধরে স্থানীয় বাজারে বিক্রির পাশাপাশি রপ্তানি করে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। তাছাড়া দেশটিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে আম উৎপাদন হয়। চাষ হয় প্রচুর ক্যাসোনাট। কৃষির জন্য প্রচুর জমি পড়ে থাকলেও কৃষিকাজের জন্য তেমন আগ্রহ নেই তাঁদের। তাছাড়া সেনেগালের আবহাওয়া অনেকটা সহনীয়।
★গোলাপী পানির জলাশয় ★
সৌন্দর্য্য নিয়ে মাথা উঁচু করে দাড়িয়ে রয়েছে সেনেগাল। তাঁর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সেনেগাল নদীর ব-দ্বীপ, ছোট বড় কিছু উদ্যান, দেশটির রাজধানী ডাকার এবং সেন্ট লুইসের মত কিছু ঔপনেবিশিক স্থান। এছাড়া দেশটির একটি লেকের নাম রেতবা। আমরা নীল পানির জলাশয়ের কথা শুনেছি, হয়তো দেখেছিও। কিন্তু গোলাপি পানির জলাশয়ের কথা শুনেছি কি? এই রেতবা লেকে বছরের প্রায় অর্ধেক সময় পানির রঙ গোলাপি থাকে। তাছাড়া লেকটির এক পাশে পাহাড়, আরেক পাশে আটলান্টিক মহাসাগর। মাঝখানে সরু একটি করিডোর। মাথার উপরে নীল আকাশ, নিচে গোলাপি হ্রদ- সব মিলিয়ে এক অসাধারণ সৌন্দর্যমণ্ডিত দৃশ্য। এ দৃশ্য টেনে আনে দেশ বিদেশের পর্যটক।
★যে কারনে কবিরাজি চিকিৎসা জনপ্রিয়★
এখানকার প্রায় সব মানুষই আচার আচরণে অনেক শান্ত শিষ্ট। সবাই সবার সঙ্গে অনেক ভালো ব্যবহার করে থাকে। তবে এখানে এখনও অনেক মানুষ কবিরাজী চিকিৎসার উপর নির্ভরশীল। এটা তাদের ট্রাডিশনাল ব্যবস্থা। এর পেছনে কারণও আছে আর তা হল সেনেগালে চিকিৎসা খরচ অনেক বেশি। সেনেগালের সরকারী পর্যায় থেকে সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে। গ্রাম থেকে শহর প্রত্যেক বাড়িতে সরকারী ভাবে পানি বিতরণের ব্যবস্থা আছে। তবে অর্থের বিনিময়ে পানি কিনে নিতে হয়।
বিভিন্ন দিক দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে সেনেগালের রয়েছে যথেষ্ট মিল। বিভিন্ন দিক দিয়ে দেশটির সাথে আমাদের অনেক মিল থাকলেও বাংলাদেশের মতো ভিন্ন ধর্মালম্বীদের উপর আক্রমণ করা হয় না, সংখ্যালগুদের বাড়িঘর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয় না, প্যান্ট- সার্টের পরিবর্তে পাঞ্জাবি-পাজামা পরে ক্লাস করালে প্রভাষককে বহিষ্কার হতে হয় না।
#Muhammad_Miraj_Mia
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।