Image default
ইতিহাস

১৯৪৭ সালের দেশভাগের কারণ; পাকিস্তান ও ইন্ডিয়া রাষ্ট্রের সৃষ্টি

পটভূমি:

১৯৪৭  বাংলার রাজনৈতিক ভূগোলে একটি ঐতিহাসিক পরিবর্তন। প্রাচীনকাল থেকে অসংখ্য রাজা ও ভূ-পতি ভারতের পূর্বাঞ্চলকে যে বহুসংখ্যক জনপদে বিভক্ত করে শাসন করে আসছিল হোসেনশাহী শাসন বাংলার সে রাজনৈতিক প্রবণতার অবসান ঘটায়। স্থাপিত হয় সমগ্র বাংলা জুড়ে হোসেনশাহী সাম্রাজ্য। মুগল শাসনামলে ও ব্রিটিশ শাসনের গোড়ার দিকে বাংলার সীমানা মাঝেমধ্যেই পরিবর্তিত হয়েছে। তবে এসব পরিবর্তন ১৯০৫ সালে লর্ড কার্জনের বঙ্গভঙ্গ সম্পন্ন হবার পূর্ব পর্যন্ত জনগণকে তেমন আলোড়িত করে নি। ১৯০৫ সালের বঙ্গবিভাগ এমনই অসন্তোষ সৃষ্টি করে যে নিজেদের উপনিবেশিক নিয়ন্ত্রণ অক্ষুন্ন রাখতে গিয়ে ব্রিটিশরা অবশেষে ১৯১১ সালে তা রদ করতে বাধ্য হয়।

১৯৪৭ সালে বঙ্গবিভাগ হয়েছিল অনেকটা পূর্বেকার বিভাগ অনুসরণ করেই। তবে ভারত এবং এর সঙ্গে বাংলারও এ বিভাগ হয়েছিল মূলত হিন্দু-মুসলিম জনমত, সাম্প্রদায়িক দ্বন্দ্ব এবং জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে। হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলার পশ্চিমাঞ্চলকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করা হয় এবং মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ পূর্বাঞ্চল অন্তর্ভুক্ত হয় পাকিস্তানে। উল্লেখ্য যে, ১৯০৫ সালের বাংলাবিভাগ ভারতীয় জাতীয়তাবাদী হিন্দু ও মুসলিম জনগণ প্রত্যাখ্যান করলেও কংগ্রেসবিরোধী মুসলমানগণ এর প্রতি সমর্থন জানিয়েছিল, বিশেষ করে পূর্ববাংলার জনগণ। পক্ষান্তরে বাংলাবিভাগের পক্ষে হিন্দু মহাসভার প্রস্তাব মেনে নিয়ে হিন্দু জনতা ১৯৪৭ সালের বঙ্গবিভাগকে অবশ্যম্ভাবী করে তোলে। মুসলিম নেতৃত্ব প্রথমে এর বিরোধিতা করে, তবে পরবর্তী সময়ে অনিচ্ছাকৃতভাবেই তা মেনে নেয়। হিন্দু ও মুসলিম জনগণের মধ্যে সেসময়কার রাজনৈতিক মনোভাবের পরিবর্তন ছিল মূলত সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গি, বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে সম্পর্ক ও সাম্রাজ্যবাদের প্রতি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তেরই বহিঃপ্রকাশ। বাংলার প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী শেষ মুহূর্তে উদ্যোগ নেন বাংলাকে একটি অখন্ড স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে। বলা বাহুল্য, তাঁর এ প্রয়াস সফল হয় নি।

১৯৩৭ থেকে ১৯৪৭ সালের মধ্যে বাংলায় যে কয়টি কোয়ালিশন সরকার গঠিত হয়েছিল তাতে মুসলমান প্রতিনিধিত্বের প্রাধান্য ছিল। এতে হিন্দু জনগণের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছিল। ফলে হিন্দুদের মধ্যে সংশয় দেখা দেয় যে বাংলা অবিভক্ত থাকলে সেখানে হয়তো সংখ্যাধিক্যের কারণে মুসলমাদেরই আধিপত্য থাকবে। এ কারণে তারা বাংলাকে অখন্ড রেখেই ভারতের অঙ্গরাজ্য হিসেবে দেখতে আগ্রহী ছিল, বাংলাকে পৃথক বা  পাকিস্তানের অংশরূপে কোনভাবেই মেনে নিতে চায় নি। অপরদিকে মুসলমানদের শঙ্কা ছিল যে, বাংলা অখন্ড ভারতের অঙ্গীভূত হলে এখানে নানা কারণে হিন্দুরাই প্রাধান্য বিস্তার করবে। উভয় সম্প্রদায়ের এসব নেতিবাচক মনোভঙ্গী থেকেই বাংলাবিভাগ অবশ্যম্ভাবী হয়ে ওঠে।

বাংলাবিভাগের ক্ষতিকর দিক সামলাতে এবং ভারতকে অখন্ড রাখার লক্ষ্যে ১৯৪৬ সালের মে মাসে ব্রিটিশ ক্যাবিনেট মিশন তিন গ্রুপের অঞ্চল সমন্বয়ে একটি ভারতীয় ফেডারেশন গঠনের প্রস্তাব দেয়। তবে ইতোমধ্যে সাম্প্রদায়িক বিরোধ এমন তীব্র রূপ লাভ করে যে এ পরিকল্পনা আর কার্যকর হয় নি। ১৯৪৭ সালের ২ জুন অনুষ্ঠিত নেতৃবর্গ সম্মেলনে লর্ড মাউন্টব্যাটেন ভারতবিভাগ পরিকল্পনা উপস্থাপন করেন এবং ‘সাত বড় নেতা’ (কংগ্রেসের নেহেরু, প্যাটেল ও কৃপালানী, মুসলিম লীগের জিন্নাহ, লিয়াকত ও আবদুর রব নিশতার এবং শিখ নেতা বলদেব সিং) এ প্রস্তাব মেনে নেন।

১৯৪৭ সালের ৩ জুন প্রকাশিত বাংলাবিভাগ পরিকল্পনায় বাংলাকে বিভাজনের বিস্তারিত পদক্ষেপ ও কার্যক্রম এবং ক্ষমতা হস্তান্তরের পদ্ধতিসমূহ বিধৃত হয়। এসবের মধ্যে ছিল (ক) বাংলার হিন্দু অধ্যুষিত ও মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় পৃথকভাবে এবং অনুরূপ পাঞ্জাবেও গণভোট অনুষ্ঠান; (খ) আসামের সুরমা অববাহিকায় (উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট জেলায়) এবং উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে গণভোট অনুষ্ঠান; এবং (গ) প্রস্তাবিত রাজ্য/প্রদেশসমূহের সীমানা নির্ধারণের জন্য একটি সীমানা নির্ধারণ কমিশন গঠন।

পরিকল্পনা অনুযায়ী বাংলাবিভাগের সিদ্ধান্ত গণপরিষদে চূড়ান্ত রূপ লাভ করে ১৯৪৭ সালের ২০ জুন। এরপর কয়েক দফা ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। প্রথমে গণপরিষদের সদস্যবৃন্দ ১২৬-৯০ ভোটে ভারতের গণপরিষদে বিভক্তির সিদ্ধান্ত প্রস্তাব গ্রহণ করেন। পক্ষান্তরে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ নির্বাচনী এলাকার গণপরিষদ সদস্যরা পৃথক বৈঠকে ১০৬-৩৫ ভোটে বাংলাবিভাগ প্রস্তাব অনুমোদন করেন এবং পাকিস্তানের নতুন গণপরিষদে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এরপর হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকাসমূহের গণপরিষদ সদস্যবর্গ ৫৮-২১ ভোটে বাংলাবিভাগের পক্ষে প্রস্তাব গ্রহণ করে। সিলেটের গণভোটে ২,৩৯,৬১৯ জন সিলেটকে পূর্ববাংলার অন্তর্ভুক্ত করার পক্ষে মত দেন। ১,৮৪,০৪১ জন মত দেন এই অঞ্চলকে আসামের মধ্যে রাখতে, অর্থাৎ এই গণভোটে ৫৫,৫৭৮ ভোটের ব্যবধানে স্থানীয় জনগণ সিলেট এলাকাকে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত করার পক্ষে রায় দেন।

 

বিভক্তিকরণ

পরিকল্পনা অনুসারে, ১৯৪৭ সালের ২০ জুন বঙ্গীয় আইন পরিষদের সদস্যগণ বাংলা বিভক্তিকরণ প্রস্তাবের উপরে তিনটি আলাদা ভোট প্রদান করেন।

পরিষদের সকল সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত যৌথ অধিবেশনে, যৌথ অধিবেশন বিভক্তিকরণের পক্ষে ১২৬ ভোট এবং বিদ্যমান সংবিধান পরিষদের যোগ দেওয়ার পক্ষে ৯০ ভোট (অর্থাৎ, ভারত) প্রণীত হয়।
তারপর একটি পৃথক অধিবেশনে বাংলার মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকায় সদস্যগণ, বাংলার বিভক্তি এবং সম্পূর্ণ একটি নতুন গণপরিষদ (অর্থাৎ, পাকিস্তান ) এ যোগদান করার সপক্ষে ভোট প্রদান করেন; যেখানে নতুন রাষ্ট্রে যোগদানের সপক্ষে ১০৬ এবং বিপক্ষে ৩৫ টি ভোট প্রণীত হয়।
একই পদ্ধতি বাংলার মুসলিম অধ্যুসিত নয়, এমন স্থানগুলোতেও অনুসরণ করা হয়েছিল। সেখানে ৫৮ ভোট বিভক্তিকরণের পক্ষে এবং ২১ ভোট বিপক্ষে প্রণীত হয়।
মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা অনুযায়ী, যদি একটিও একক সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট বিভক্তিকরণের পক্ষে প্রণীত হয় তাহলে প্রদেশ বিভক্ত হবে । এই পরিকল্পনাকে তুলে ধরে, ২০ জুন পরিষদে ভোটাভুটির ফলফলের প্রেক্ষিতে পশ্চিম বাংলা প্রদেশ ভারত এবং পূর্ব বাংলা প্রদেশ পাকিস্তানের সাথে যুক্ত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।এছাড়াও, মাউন্টব্যাটেন পরিকল্পনা অনুসারে,৭ জুলাই অনুষ্ঠিত একটি গণভোটে, সিলেটের নির্বাচকমণ্ডলী পূর্ব বাংলা প্রদেশে যোগদানের সপক্ষে ভোট প্রদান করে।

পরবর্তীতে স্যার সিরিল র‍েডক্লিফ এর নেতৃত্বে সীমানা কমিশন দুই নব নির্মিত প্রদেশের মধ্যে আঞ্চলিক সীমানা নির্ধারণ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয় এবং ভারতীয় স্বাধীনতা আইন, ১৯৪৭ অনুসারে ১৪ আগস্ট পাকিস্তান এবং ১৫ আগস্ট ভারতকে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয়।

বিরোধিতা

বাংলায় কৃষক প্রজা পার্টির সৈয়দ হাবিব-উর-রহমান বলেছেন, ভারত বিভাজন ‘অযৌক্তিক’ এবং ‘হাস্যকর’। বাংলা ও সামগ্রিকভাবে ভারত বিভাগের সমালোচনা করে সৈয়দ হাবিব-উর-রহমান বলেন, “হিন্দু ও মুসলমান উভয়ই একটি অভিন্ন মাতৃভূমিতে বাস করে, একটি অভিন্ন ভাষা ও সাহিত্যের শাখা ব্যবহার করে এবং একটি অভিন্ন ভূমিতে কয়েক শতাব্দী ধরে বসবাসের মাধ্যমে বিকশিত একটি সাধারণ হিন্দু ও মুসলিম সংস্কৃতির মহৎ ঐতিহ্য নিয়ে গর্বিত।”

১. ইতিহাসের দায়ঃ মোগল শাসনের দুর্বলতায় ও নবাবি শাসনের অবসানে মুসলমানদের আবেগে আঘাত।

১৭৫৭সালে পলাশির যুদ্ধে বাংলার মুসলিম নবাব ক্ষমতা থেকে চ্যুত হবার পর এবং ১৭৬৫ সালে বক্সারের যুদ্ধে মুঘল, অযোধ্যার মুসলিম শাসকরা পরাজিত হবার পর যখন বাংলা বিহার উড়িষ্যার দিওয়ানি লাভ করে, তখন শাসনকেন্দ্রে মুসলিমদের প্রভাব স্তিমিত হয়ে পড়ে। ইতিহাসের নায়ক এখানে ইংরেজরা। আর তার দায় হল ইংরেজ শাসনের প্রতি মুসলিম প্রজাদের আস্থাহীনতা। আবেগের দিক থেকেও মুসলিমরা এ ব্যাপারগুলো মেনে নিতে পারেনি। তার ওপর ইংরেজরা যখন হিন্দুদের নানা সুবিধা দিতে থাকে, সেটা তাদের মনে অবহেলার জন্ম দেয়। তারা সবক্ষেত্রে ইংরেজদের অসহযোগিতা করতে থাকে আর ফলাফলে পিছিয়ে পড়ে। স্বাভাবিকভাবেই, বিপরিত ব্যাপার ঘটে হিন্দুদের ক্ষেত্রে। সেন আমল (৯০০-১২০০) এর দীর্ঘ সাড়ে পাঁচশ বছর পর তারা হিন্দু পুনর্জাগরনের স্বপ্ন দেখে

২. হিন্দুদের দায় (কিংবা সুযোগগ্রহণ)ঃ চিরস্থায়ি বন্দোবস্তের কারণে হিন্দু জমিদারদের লাভ। অর্থনৈতিক বৈষম্য।

১৭৯৩ সালে রাজস্ব আদায়ের সুবিধার জন্য ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি চালু করে এই ব্যবস্থা। এতে বাংলার হিন্দু জমির মালিকরা রাতারাতি সব জমির একমাত্র মালিক হয়ে যায়। তাদের ক্ষমতা ও আভিজাত্য বেড়ে যায় অনেক। আর দরিদ্র মুসলিম কৃষক, কৃষিকাজ করাটা আগে যাদের ছিল ইচ্ছাধীন, হিন্দু জমিদারির আওতায় আসাতে সেই প্রভুর জমিতে কাজ করতে ও জোরপূর্বক কর দিতে তারা বাধ্য হয়।
এদিকে, আগে রাজস্ব আদায়ের যে প্রশাসনিক ব্যবস্থা ছিল, সেখানে মুসলিমদের সরিয়ে দেয় ইংরেজরা। বদলে তারা অনুগত হিন্দুদের নিয়োগ করে উচ্চপদে। সুতরাং অভিজাত মুসলিমরা আর্থিক সংকটে পড়ে যায়।
এটা ছিল হিন্দু-মুসলিম অর্থনৈতিক বৈষম্য প্রকট হবার একটি সূচনা।
পরবর্তিতে নীল বিদ্রোহের সময় হিন্দু জমিদাররা ইংরেজদের সহযোগি হয়ে ওঠে। তারাও বাংলার গরিব মুসলিম ও হিন্দুদের কৃষকদের অর্থনৈতিকভাবে শোষণ করে।

৩. মুসলিমদের দায়ঃ ফরায়েজি ও তিতুমির আন্দোলনে আধুনিক শিক্ষা গ্রহণে মুসলিমদের অনীহা। শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্য।

আপাতভাবে, ফরায়েজি আন্দোলন ও তিতুমিরের আন্দোলন ইংরেজ ও জমিদারদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে হলেও এর ধর্মীয় প্রভাব ব্যাপক। পূর্ববাংলায় দুদুমিয়ার নেতৃত্বে ১৮১৮-১৮৫৭ পর্যন্ত চলে ফরায়েজি আন্দোলন, ওদিকে পশ্চিম বাংলায় তিতুমিরের নেতৃত্বে ১৮২৭-১৮৩১ পর্যন্ত চলে বিদ্রোহ। এই দুই আন্দোলনে শুদ্ধ মুসলিম হবার ঢেউয়ে বাংলার মুসলমানেরা ধর্মীয় শিক্ষাকে অনেক বেশি আপন করে নিতে থাকে।
অথচ ঠিক এমন সময়েই বাংলার হিন্দুরা শিক্ষিত হতে থাকে আধুনিক শিক্ষায়। এ সময় একে একে প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ, এংলো হিন্দু কলেজ , সংস্কৃত কলেজ ও বেদান্ত কলেজ। মোটকথা, কলকাতাকেন্দ্রিক শিক্ষাকেন্দ্রে হিন্দুরা আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হতে থাকে।
কিন্তু বাংলার অধিকাংশ মুসলিম, যারা গ্রামবাসি ও কৃষক, তারা এ দুইটি আন্দোলনের প্রভাবে যত বেশি ইসলামসংলগ্ন হয়ে পড়ে, ততটাই দূরে সরে যায় ইংরেজি ও আধুনিক শিক্ষা গ্রহণ থেকে। দিনে দিনে শিক্ষাক্ষেত্রে এই বৈষম্য দুই সম্প্রদায়ের পার্থক্য আরো প্রকট করে তোলে।
এই শতকের শেষার্ধে যখন সৈয়দ আহমদ খান, নওয়াব আবদুল লতিফ প্রমুখ মুসলিমদের মধ্যে ইংরেজ বিদ্বেষ ঘুচিয়ে আধুনিক শিক্ষা প্রবর্তনের চেষ্টা করেন, ততদিনে হিন্দুরা শিক্ষাদীক্ষায় অনেক এগিয়ে গেছে।
লক্ষণীয় মিল হল, মুসলিম ও হিন্দু দুই ধর্মেই এই সময়ে পুনর্জাগরণ লক্ষ্য করা গেছে। হিন্দুধর্মে একেশ্বরবাদি ব্রাহ্মসমাজ গড়ে উঠেছে। ইসলাম ধর্মে অনৈসলামিক আচার ছেড়ে ফরজ পালনে মুসলমানরা উৎসাহী হয়েছে। কিন্তু অমিল হল, হিন্দুরা শিক্ষা গ্রহণে সমাজে নিজেদের স্থান করে নিয়েছে কিন্তু মুসলমানেরা পারেনি।

৪. ইংরেজদের দায়ঃ পরিকল্পিত শ্রেণিবিভাজনের মাধ্যমে হিন্দুদের রাজনৈতিক সচেতনতা সৃষ্টি। রাজনীতিতে অধিকার আদায়ে বৈষম্য।

বলা হয়েছে, শিক্ষাক্ষেত্রে হিন্দুরা এগিয়ে যায় অনেকখানি। এই শিক্ষিত হওয়য়া কিন্তু সীমাবদ্ধ ছিল কেবলমাত্র হিন্দু মধ্যবিত্ত বাঙ্গালিদের মধ্যে।
ইংরেজরা দেখেছে, চিরস্থায়ি বন্দোবস্তের পর বাংলায় বেশ কিছু বিদ্রোহ ও আন্দোলনের সূচনা হয়। ১৮০০সালে ফকির ও সন্নাসিরা, তারপর ফরায়েজি আন্দোলন ও তিতুমিরের বিদ্রোহ, ১৮৫৫সালে সাওতাল বিদ্রোহ, ১৮৫৭সালে সিপাহি বিদ্রোহ, অর্ধশতাব্দির বেশি ধরে চলা কৃষকদের নীলবিদ্রোহ…ইত্যাদি প্রত্যেক বিদ্রোহে লক্ষনীয়ভাবে অংশগ্রহণ ছিল নিম্নবিত্ত ও দরিদ্র মানুষের। এর সাথে যদি মধ্যবিত্তরা যোগ দেয় তাহলে এখানে হবে ফরাসি বিপ্লবের মতন অলআউট আন্দোলন।
এই মধ্যবিত্ত শ্রেণিটিকে সেইসব সদাসংগ্রামি নিম্নবিত্ত মানুষদের আন্দোলন থেকে আলাদা করতে তাদের জন্য উচ্চ শিক্ষার ব্যবস্থা করে। সিপাহি বিদ্রোহের পরেই কলকাতা, বোম্বে ও মাদ্রাজে তৈরি হয় বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ইংরেজ অনুগত, সরকারি চাকুরি পেয়ে সুবিধাভোগি একটি বাবুসমাজ তৈরি করে, যা মূলত ভারতের দরিদ্র মানুষদের থেকে জনবিচ্ছিন্ন। শিক্ষিত ও অশিক্ষিত এই স্পষ্ট পার্থক্যকরণে সমাজে তৈরি হয় পরিকল্পিত একটি শ্রেণিবিভাজন।
পরবর্তিতে এই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষায় শিক্ষিত হিন্দুসমাজে জাগ্রত হয় ভারতীয় জাতীয়তাবোধ। তারা তৈরি করে ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল কংগ্রেস, ১৮৮৫ সালে, যাতে ছিল হিন্দু অভিজাতবর্গের প্রাধান্য, কাজেই তা ক্রমে পরিণত হয় হিন্দু সম্প্রদায়ের দাবিদাওয়া আদায়ের মুখপাত্রে। হিন্দুদের মধ্যে এই রাজনৈতিক সচেতনতার ফলশ্রুতিতে মুসলিমরা নিজেদের আলাদা ভাবতে শুরু করে।

 

দেশভাগ চেয়েছিল কারা?

বাংলা ভাগের সঙ্গে ভারত ভাগের প্রশ্নটি খুবই অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে রয়েছে। আমাদের দেশের গোটা শিক্ষাব্যবস্থাতেই খুব জোর দিয়ে একথা শেখানো হয়, যে মহম্মদ আলি জিন্না হলেন দ্বিজাতিতত্ত্বের জনক এবং মুসলিম লীগের ভারত ভাগ ও স্বতন্ত্র পাকিস্তানের দাবির পক্ষে প্রায় সব মুসলমান দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু এই শিক্ষা আসলে উদ্দেশ্যমূলক এবং মিথ্যা। জিন্নার অনেক আগে হিন্দুত্ববাদী নেতারাই দ্বিজাতিতত্ত্ব প্রচার করেছিলেন এবং এই অভিমত প্রকাশ করেছিলেন, যে একটি দেশে এই দুই সম্প্রদায়ের মানুষ একত্রে বসবাস করতে পারবেন না। দ্বিজাতিতত্ত্বের প্রথম প্রচারক ছিলেন তাঁরাই। দ্বিজাতিতত্ত্বের ধারণার উপর দাঁড়িয়েই কালে কালে ভারত ভাগের ধারণা গতি পায় এবং যখন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ নির্দিষ্টভাবে এই পরিকল্পনা করে তখন হিন্দু ও মুসলমান নেতৃত্বের একাংশ তাতে সম্মত হয়, জনগণের একাংশের মধ্যেও এই ভাবনা অনুমোদন লাভ করে। বাংলায় নবগোপাল মিত্র এবং রাজনারায়ণ বসুই ছিলেন দ্বিজাতিতত্ত্বের পথিকৃৎ। ঐতিহাসিক রমেশচন্দ্র মজুমদার স্পষ্টই বলেছেন, নবগোপালই দ্বিজাতিতত্ত্বকে জিন্নার অর্ধশতাব্দীরও বেশি আগে ব্যক্ত করে গিয়েছিলেন। (“Nabha Gopal forestalled Jinnah’s theory of two nations by more than half a century”; History of the Freedom Movement in India/ Vol I)

ভাই পরমানন্দের কথা অনেকেই বলেছেন। বাবাসাহেব আম্বেদকর তাঁর পাকিস্তান অর দ্য পার্টিশন অফ ইন্ডিয়া বইতে এবং কমরেড সামসুল ইসলাম তাঁর মুসলিমস আগেনস্ট পার্টিশন অফ ইন্ডিয়া বইতে পরমানন্দের দ্য হিন্দু ন্যাশনাল মুভমেন্ট শীর্ষক পুস্তিকার কথা উল্লেখ করেছেন, যেখানে তিনি পরিষ্কারভাবেই হিন্দু এবং মুসলমানদের আলাদা ইতিহাস, আলাদা সংস্কৃতি প্রভৃতি নিয়ে কথা বলেছেন এবং ইতিহাসে দুই সম্প্রদায়ের জাতীয় নায়করাও যে আলাদা সে কথা বলেছেন। সামসুল দেখিয়েছেন, যে আশ্চর্যজনকভাবে পরমানন্দের সেই সমস্ত কথাগুলিই জিন্না পরবর্তীকালে অবিকৃত রূপে গ্রহণ করেছিলেন। পরমানন্দ লিখেছিলেন “In history, the Hindu revere the memory of Prithvi Raj, Pratap, Shivaji and Beragi Bir, who fought for the honour and freedom of this land (against the Muslims), while the Mahomedans look upon the invaders of India like Muhammad Bin Qasim and rulers like Aurangzeb as their national heroes.”

তারপরেই এই কথা লুফে নিয়ে জিন্না বলেন “The Hindus and Muslims belong to two different religious philosophies, social customs, and literature[s]….It is quite clear that Hindus and Mussalmans derive their inspiration from different sources of history. They have different epics, their heroes are different, and different episode[s].” (সামসুলের বইতে উদ্ধৃত)

একইভাবে লালা লাজপত রায় পরিষ্কারভাবেই ধর্মের ভিত্তিতে পাঞ্জাব ভাগের পক্ষে মত দিয়েছিলেন। সাভারকর এবং গোলওয়ালকরের মত হিন্দু মহাসভার নেতারা তো অত্যন্ত জোরের সঙ্গে দ্বিজাতিতত্ত্ব প্রচার করেছেন। ১৯৪০ সালে মুসলিম লীগ ‘পাকিস্তান প্রস্তাব’ গ্রহণ করার তিন বছর আগে আমেদাবাদে মহাসভার ১৯তম বৈঠকে সভাপতির ভাষণে সাভারকর বলেন “as it is, there are two antagonistic nations living side by side in India, several infantile politicians commit the serious mistake in supposing that India is already welded into a harmonious nation, or that it could be welded thus for the mere wish to do so…Late us bravely face unpleasant facts as they are. India cannot be assumed today to be a unitarian and homogenous nation, but on the contrary there are two nations in the main: the Hindus and the Muslims, in India.”

সুতরাং দ্বিজাতিতত্ত্বের ধারণা জিন্না এবং তাঁর সহযোগী মুসলিম লীগের কিছু নেতার একচেটিয়া ছিল না। বস্তুত, আমরা দেখতে পাচ্ছি যে হিন্দুত্ববাদী নেতারাই প্রকৃত প্রস্তাবে ছিলেন এই তত্ত্বের উদ্গাতা। হিন্দু মহাসভার নেতারা খোলাখুলিই ভারত ভাগের পক্ষে ছিলেন। স্বাধীন ভারতের ইতিহাসচর্চায় কখনই এই দিকটি আলোচিত হয় না এবং প্রকৃত ঘটনা মানুষকে জানতে দেওয়া হয় না। অন্যদিকে মুসলমানদের এক বড় অংশ ভারত ভাগের বিপক্ষে ছিলেন। এই সত্যও প্রায়শই চেপে যাওয়া হয়। অথচ ঘটনা হল, যদিও মুসলিম লীগ নিজেদের মুসলমানদের একমাত্র প্রতিনিধি বলে দাবি করত, বাস্তবে তারা মূলত প্রতিনিধিত্ব করত মুসলমান অভিজাততন্ত্রের। লীগের দাবির প্রতি কংগ্রেসের উদাসীনতা, অবজ্ঞা এবং নাছোড়বান্দা মনোভাব এবং মহাসভার মুসলমানদের প্রতি শত্রুতা ধীরে ধীরে সাধারণ মুসলমান সমাজকে লীগের দিকে ঠেলে দেয়।

অথচ ১৯৪০ সালে লাহোরে লীগ ‘পাকিস্তান প্রস্তাব’ গ্রহণ করার দেড় মাসের মধ্যে দিল্লিতে পাকিস্তান গঠনের বিরোধিতা করে মুসলমানদের একটি বৃহৎ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তার নাম ছিল ‘আজাদ মুসলিম কনফারেন্স’। তৎকালীন সিন্ধ প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী (প্রিমিয়ার) আল্লা বকশ ছিলেন ওই সম্মেলনের মূল হোতা। তিনি লীগের ভারত ভাগের পরিকল্পনা ব্যর্থ করার জন্যে সারা দেশের এক ডজনেরও বেশি গণভিত্তিসম্পন্ন মুসলমান সংগঠনকে একত্রিত করে এই সম্মেলন করেন। সম্মেলনে যোগদানকারী সংগঠনগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, সারা ভারত জমিয়াতুল উলেমা, সারা ভারত মুমিন সম্মেলন, সারা ভারত মজলিস-ই-আহরার, খুদা-ই-খিদমতগার, বেঙ্গল কৃষক প্রজা পার্টি, অঞ্জুমন-ই-ওয়াতন, বালুচিস্তান ইত্যাদি। গোটা দেশ থেকে ১,৪০০ প্রতিনিধি এই সম্মেলনে হাজির হয়ে পাকিস্তান গঠনের পরিকল্পনাকে খারিজ করে দেন। কমরেড সামসুল লিখেছেন, এমনকি পাকিস্তানপন্থী ব্রিটিশ মিডিয়াও লিখতে বাধ্য হয়েছিল, মুসলিম লীগ যেখানে মূলত প্রতিনিধিত্ব করত মুসলিম অভিজাত সম্প্রদায়ের, আজাদ মুসলিম সম্মেলন বিপুলভাবে মুসলমান খেটে খাওয়া মানুষের প্রতিনিধি। কিন্তু আল্লা বকশের আন্দোলন সফল হতে পারেনি। ১৯৪৩ সালের ১৪ মে আল্লা বকশ লীগের ভাড়াটে খুনিদের হাতে শহিদ হয়ে যান।

আল্লা বকশের মত সেইসময় অনেক মুসলমান বুদ্ধিজীবী, চিন্তাবিদ ও রাজনীতিবিদ স্বাধীন ঐক্যবদ্ধ বহুধার্মিক, বহুভাষিক ও বহুজাতিভিত্তিক দেশ গঠনের পক্ষে থেকেছেন, কাজ করেছেন, এমনকি শহিদও হয়েছেন। স্বাধীন ভারতের ইতিহাসচর্চায় এঁরা কখনোই গুরুত্ব পাননি। জনসাধারণ এঁদের নামই শোনেনি বলা যায়। শিবলি নোমানি, হসরত মোহানি, মুখতার আহমেদ আনসারি, আশফাকুল্লা খানের মত কাকোরি ষড়যন্ত্র মামলার শহিদ, খান আবদুল গফ্ফর খান প্রমুখ মুসলমান সম্প্রদায়ের অগ্রণী মানুষ ধর্মের ভিত্তিতে দেশভাগ এবং পাকিস্তান গঠনের পক্ষে ছিলেন না। সাহিত্য, শিল্পের জগতেও এই প্রতিবাদ ধ্বনিত হয়েছিল। কবি শামিম কারহানির একটি কবিতা কমরেড সামসুল উদ্ধৃত করেছেন। পাকিস্তান (পবিত্র ভূমি) -এর ধারণাকে বিদ্রুপ করে লেখা এই কবিতাটি নিম্নরূপ:

বিষাক্ত প্রচার

প্রাচীন গ্রীক ট্র্যাজেডির রচয়িতা এস্কাইলাসের একটি উক্তি খুবই বিখ্যাত। “In war, truth is the first casualty” (যুদ্ধের প্রথম শিকার হল সত্য)। আর মাও সে তুং একবার বলেছিলেন, “রাজনীতি হল রক্তপাতহীন যুদ্ধ, এবং যুদ্ধ হল রক্তপাতযুক্ত রাজনীতি।” সুতরাং রাজনীতি যদি যুদ্ধই হয় তবে সে যুদ্ধেরও প্রথম শিকার হবে সত্য, তাতে আশ্চর্যের কিছু নেই। বিশেষ করে হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির ভিত্তিই যে মিথ্যা প্রচার তা আমরা সর্বদাই উপলব্ধি করে থাকি। প্রথম থেকেই হিন্দুত্ববাদীরা একথা বলে আসছে, যে মুসলমানরাই হল হিন্দুদের প্রধান শত্রু। সাভারকর যখন রাজনৈতিক হিন্দুত্বের কারবার শুরু করলেন তখন শুধু হিন্দু সম্প্রদায়েরই নয়, ভারতভূমির শত্রু হিসাবেও মুসলমানদের চিহ্নিত করা শুরু হল। স্বাধীনোত্তর ভারতে যখন গোলওয়ালকরের কুখ্যাত গ্রন্থ বাঞ্চ অফ থটস প্রকাশিত হয় তখন এই বিষাক্ত প্রচার আরও তীব্র হয়ে ওঠে। গোলওয়ালকর তাতে মন্তব্য করেন, ভারতের মধ্যে থাকা মুসলমানরা ভারতের শত্রু। তারা আসলে পাকিস্তানের চর বিশেষ।

“Within the country there are so many Muslim pockets, i.e., so many ‘miniature Pakistans’… Such ‘pockets’ have verily become the centres of a widespread network of pro-Pakistani elements in this land…”

ওই বইতেই অন্যত্র লিখছেন “Right from Delhi to Rampur and Lucknow, the Muslims are busy hatching a dangerous plot, piling up arms and mobilizing their men and probably biding their time to strike from within when Pakistan decides upon an armed conflict with our country.”

ভাবতে আশ্চর্য লাগে, যেসব মুসলমান অসাম্প্রদায়িক মানুষ দেশভাগের পরও ভারতে থেকে গেলেন এবং অন্যদের থেকে যেতে অনুপ্রাণিত করলেন শুধুমাত্র এই কারণে, যে কোনো ধর্মীয় রাষ্ট্রে তাঁরা থাকবেন না, তাঁদেরই পাকিস্তানের চর বলে লাগাতার ভিত্তিহীন প্রচার এই আরএসএস এবং অন্যান্য হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো চালিয়ে এল। আর এই প্রচারের বিষ দেশের মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে তাদের সহায়ক হল ইতিহাসের বিকৃতি। অথচ এর বিরুদ্ধে শক্তিশালী পালটা প্রচারের প্রয়োজনীয়তা দেশের মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলি কোনোদিনই অনুভব করল না। আজ যখন এই ভিত্তিহীন প্রচার সহস্র গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে, দেশের কোণে কোণে মুসলমানদের প্রধান লক্ষ্য বানিয়ে ফ্যাসিবাদীরা তাদের ঘুঁটি সাজাচ্ছে (উত্তরাখণ্ডে নাজি কায়দায় মুসলমানদের দোকানপাট চিহ্নিত করে তাঁদের এলাকা ছাড়তে বাধ্য করা হচ্ছে, মসজিদে ঢুকে সেনাবাহিনী “জয় শ্রীরাম” বলতে বাধ্য করছে বলে অভিযোগ উঠছে), তখন প্রকৃত ইতিহাসকে জনগণের কাছে প্রতিনিয়ত তুলে ধরা কিন্তু বামপন্থী তথা কমিউনিস্টদের দায়িত্ব। ফ্যাসিবাদবিরোধী সংগ্রামের প্রধান রঙ্গমঞ্চ হতে যাচ্ছে ইতিহাস। এ সত্য এখনো না বুঝলে আমাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার।

 

Related posts

বেকারের দিনগুলো কাটবে জেলে

News Desk

ভাটির কিংবদন্তি বাউলসম্রাট আবদুল করিম

News Desk

কবি নজরুলের বাংলাদেশে ফেরার নেপথ্য কথা

News Desk

Leave a Comment