সম্প্রতি চীনের পক্ষ থেকে সতর্ক করে বলা হয়েছে, যদি দুই সুপারপাওয়ার যুদ্ধে অবতীর্ণ হয় তাহলে যুক্তরাষ্ট্র হেরে যাবে। চীন তাদের সেনাবাহিনী নিয়ে কেমন ধারণা পোষণ করছে এই সতর্কবার্তা তারই স্বাক্ষ্য বহন করবে। পূর্ব চীন সাগরকে কেন্দ্র করে চলমান উত্তেজনার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, জাপান,অস্ট্রেলিয়া ও ফ্রান্সের যৌথ সামরিক মহড়ার প্রতিক্রিয়া হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রকে এ হুমকি দেয় চীন।
এছাড়া দক্ষিণ চীন সাগরের বিতর্কিত অঞ্চল থেকে ফিলিপাইন জাহাজ সরিয়ে নেয়ার বিষয়টি প্রত্যাখান করলে এখানেও উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি চলছে। অধ্যাপক কার্ল চেস্টারের লেখা এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম ও জাপানের সঙ্গে সমুদ্রসীমাগুলোয় আগ্রাসনপূর্ণ কৌশল বজায় রাখার কারণে এসব আঞ্চলিক বিবাদে চীনের মেরিটাইম মিলিশিয়ার নিয়মিত অংশগ্রহন দেখা যায়।
চীনের পিপলস আর্মড ফোর্সেস মেরিটাইম মিলিশিয়া (পিএএফএমএম) গঠনের জন্য কমিউনিস্ট পার্টির কাছে ঋণী। মূলত মৎসজীবি ও উপকূলীয় অঞ্চলের শ্রমিকদের সমন্বয়ে গঠিত বিভিন্ন মিলিশিয়া দলগুলোকে একত্রিত করে ১৯৫০ সালে এই পিএএফএমএম গঠন করা হয় বলে অধ্যাপক কার্ল চেস্টারের লেখা এক প্রতিবেদনে জানা গিয়েছে।
একেবারে শুরুর দিকে পিএএফএমএমের ভূমিকা ছিল পিপলস রিপাবলিক অব চীনের (পিআরসি) উপকূলীয় অঞ্চলের জলসীমায় নজর রাখা এবং যেকোনো সন্দেহজনক কর্মকাণ্ড চোখে পড়লে চায়নিজ আর্মিকে (পিএলএ) অবহিত করা। পিএলএর সাবেক কর্মকর্তাদের মাধ্যমে গঠিত ব্যুরো অব অ্যাকোয়াটিক প্রোডাক্টস এই মিলিশিয়াদের নিয়োগ, প্রশিক্ষণ ও অস্ত্রে সজ্জিত করে থাকে। ষাটের দশক পর্যন্তও এই মিলিশিয়া বাহিনীর কার্যক্রম সমুদ্রসীমা পর্যন্ত নির্দিষ্ট ছিল। কিন্তু এর পরবর্তী বছরগুলোয় তাদের কার্যক্রম সম্প্রসারিত হয়েছে। ষাটের দশকের শেষের দিকে প্যারাসেল এবং স্পার্টলি দ্বীপসমূহে দক্ষিণ ভিয়েতনামের মৎসশিকারিদের তারা নানাভাবে হয়রানি করতে থাকে।
১৯৭৪ সালের জানুয়ারিতে দক্ষিণ ভিয়েতনামের প্যারাসেল আইল্যান্ড জব্দ করার মাধ্যমে এই মিলিশিয়ারা প্রথম বড় কোনো বিজয় অর্জন করে। তারা দক্ষিণ ভিয়েতনামের নৌবাহিনীর সঙ্গে ৪০০ মিলিশিয়া বাহিনীকে যুক্ত করেছিল এবং পুরো দ্বীপ দখল করে রাখে। এই দ্বীপটি তখন থেকেই চীনের সঙ্গে ছিল।
১৯৮০ সালের শুরু থেকেই দক্ষিণ ও পূর্ব চীন সাগরে পিআরসির আগ্রাসনমূলক কর্মকাণ্ডে নের্তৃত্বের ভূমিকা গ্রহণ করেছে পিএএফএমএম। তারা ভিয়েতনাম ও ফিলিপাইনের ছোট, ধীরগতির মাছ ধরার জাহাজগুলোকে হুমকি-ধামকি দিতে থাকে। মিলিশিয়ারা ছোটখাট অস্ত্র নিয়ে এসব মাছ ধরার জাহাজগুলোকে হুমকি দিতো এবং জলকামান নিয়ে এসব জাহাজে হামলা করত, অনেক সময় এসব জাহাজ তারা ডুবিয়েও দিতো।
মিলিশিয়া দলগুলোর নৃশংস কার্যকলাপে চীনের কোস্ট গার্ডদেরও প্রায় সময়ই সহায়তা করতে দেখা যেত। বিপরীতে স্প্রাটলি আইল্যান্ডে নিজেদের মৎসশিকারিদের রক্ষা করতে ‘ফিশিং শেল্টার’ তৈরি করে চীন। পিএলএর সহায়তা নিয়ে পিএএফএমএম চীনের সব প্রতিবেশি দেশগুলোকে কোণঠাসা করে ফেলে এবং মিসশেফ রীফ ও স্কারব্রোহ শোল দখল করে।
পিএএফএমএম এর এসব কার্যকলাপ সত্ত্বেও শি জিনপিংয়ের নের্তৃত্বে থাকা চীন সরকার কখনোও এই মিলিশিয়াদের সঙ্গে চীনা সামরিক বাহিনীর সংশ্লিষ্টতা থাকার বিষয়টি স্বীকার করেন নি। চীন সরকারের পক্ষ থেকে সবসময় দাবি করা হয়েছে এই মিলিশিয়ারা মূলত মাছশিকারি।
এদিকে পিএএফএমএম সবসময়ই আগ্নেয়াস্ত্র অথবা সামরিক অস্ত্র ব্যবহার না করার কারণে তাদের কর্মকাণ্ডকে ‘যুদ্ধসম’ বলা যায় না; যেটি পাল্টা পদক্ষেপের ইন্ধন যোগাবে। তবে এই মিলিশিয়াদের কার্যক্রমের পরিপ্রেক্ষিতে ইউএস-ফিলিপাইন মিউচুয়াল ডিফেন্স ট্রেটির আওতায় যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা চাইতে পারে ম্যানিলা। আর এ কারণেই পিআরসির কার্যক্রমকে ‘গ্রে জোন অপারেশন’ (যার অর্থ তারা আগ্রাসনের কাজ করছে) হিসেবে উল্লেখ করেছে তারা। কিন্তু তা সত্তে¡ও পূর্ব ও দক্ষিণ চীন সাগরে নিজেদের কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে পিএএফএমএম।
সূত্র : এশিয়ান লাইট