ফাইল ছবি
যুদ্ধ এখন আর ইউক্রেন-রাশিয়া রইল না। এতদিন আড়ালে-আবডালে ইউক্রেনকে সাহায্য করার কথা বললেও ইউক্রেনের ৪ অঞ্চল গণভোটের মাধ্যমে নিজেদের সঙ্গে সংযুক্তির পর ন্যাটো বা মার্কিনিরা এখন প্রকাশ্যেই রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছে।
এরই প্রেক্ষিতে গতকাল বিকাল ৪টায় মস্কো ভালদাই ক্লাবে বিশ্ব রাজনীতি নিয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন দিয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, পশ্চিমারা কুৎসিত মরণখেলায় মেতে উঠেছে। তারা ইউক্রেনকে খাদ্য বানিয়েছে। তাইওয়ানে উত্তেজনা তৈরি করেছে। যুদ্ধের উসকানি দিচ্ছে। বিশ্বে খাদ্য ও জ্বালানি সংকট তৈরি করেছে। আমরা জানি তাদের মধ্যে কোনো ঐক্য নেই। বিশ্ব বাস্তবতা বলছে, আলোচনায় বসতে। আমরা চেষ্টা করেছি। কিন্তু পশ্চিমাদের আধিপত্যের কারণে কোনো আলোচনাই হয়নি। তাদের বুঝতে হবে তাদের আধিপত্যের দিন শেষ। আগামী পৃথিবী সংকটময় অবস্থায় আছে।
তিনি বলেন, গত মার্চে ইউক্রেনের সঙ্গে আমাদের প্রতিনিধির দুই দফা বৈঠক হয়েছে বেলারুশের রাজধানীতে। কিন্তু চূড়ান্ত আলোচনা ভেস্তে যায় মার্কিনিদের নির্দেশে। ইউক্রেনকে সাহায্যকারী পশ্চিমা বা ন্যাটো বাহিনীর স্থাপনায় হামলা করা রাশিয়ার জন্য অপরিহার্য এবং তা রাশিয়ার জন্য বৈধ। বেসামরিক ছদ্মবেশে থাকা স্থাপনাগুলো (স্যাটেলাইট) পাল্টা হামলার বৈধ টার্গেটে পরিণত হতে পারে। তিনি ইউক্রেনকে সহায়তায় পশ্চিমাদের এ ধরনের স্যাটেলাইট ব্যবহারকে ‘উসকানি’ হিসেবেও অভিহিত করেন। তিনি বলেন, আমরা পশ্চিমাদের প্রতি আহ্বান জানাই তারা ইউক্রেনকে সাহায্য করার এই অত্যন্ত বিপজ্জনক উদ্যোগটি পরিত্যাগ করবে।
বিকিরণের কোনো সীমানা নেই
পুতিন জোর দিয়ে বলেন, পারমাণবিক বিকিরণের পাসপোর্ট, ভিসা বা অনুমতির প্রয়োজন নেই। এটি যে কোনো সীমান্ত অতিক্রম করতে পারে। একে বাধা দেয়া যায় না।
পরমাণু অনুশীলন
রাশিয়ার মুখপাত্র মারিয়া জেখেরভ গতকাল জানান, পশ্চিমা স্যাটেলাইটে হামলার লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ করা হয়েছে। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে- ডার্টি বোমার নামে পশ্চিমারা ইউক্রেনের পক্ষ হয়ে স্বল্পমাত্রার পরমাণু হামলা চালাতে পারে।
ন্যাটো পরমাণু বিশেষজ্ঞরা ইউক্রেনে বসে পারমাণবিক অনুশীলন শুরু করে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে মস্কো। এরই প্রেক্ষিতে গত ২৬ অক্টোবর ‘গ্রোম-২০২২’ নামে পুতিন তার পরমাণু অনুশীলন প্রত্যক্ষ করেছেন। গতকাল মস্কো টাইমস জানায়, রাশিয়া পূর্ণ মাত্রায় এর প্রস্তুতি নিচ্ছে। এরই আলোকে দুদিন ধরে রাশিয়া ও ন্যাটো- দুই পক্ষই বার্ষিক অনুশীলনের নামে তাদের পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্রের মহড়া শুরু করেছে। বিশ্ব সংবাদ মাধ্যম এই মহড়াকে পরমাণু বোমার বোতামে হাত রাখা বলে মন্তব্য করেছে। দুই পক্ষের এই মহড়া বিশ্বের জন্য বিপর্যয়কর পরিস্থিতি বলছে নিউজ উইক।
এবার কী হতে পারে
রয়টার্স বলছে, পরমাণু যুদ্ধ শুরু না হলেও ভয়াবহ এক আকাশ যুদ্ধের পরিণতি ভোগ করতে যাচ্ছে ইউক্রেন। এরই মধ্যে ইউক্রেন সরকার খেরসন অঞ্চল থেকে প্রায় ৭০ হাজার নাগরিককে সরিয়ে নিয়েছে। খেরসন অঞ্চলের রাস্তায় চেকপোস্ট বসানোর পাশাপাশি এখন ফোনে চেকিং করতে শুরু করেছে রুশ বাহিনী। মার্কিন সামরিক বিশেষজ্ঞ মার্ক ভয়গারের মতে, রাশিয়ার পূর্ণ মাত্রার পারমাণবিক হামলা চালানোর সম্ভাবনা কম। তবে রুশ নিয়ন্ত্রিত জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সঙ্গে জড়িত একটি ‘পারমাণবিক ঘটনার’ মতো কিছু ঘটাতে পারে। স্কাই নিউজকে তিনি বলেন, ডার্টি বোমা পুতিনের খুব কম মাপের একটি পারমাণবিক উপাদান।
৩টি বিকল্প
পশ্চিমের কাছে রাশিয়ার পারমাণবিক হুমকির প্রকৃতি বর্ণনা করে ভয়গার বলেন, প্রথমটি ভয় দেখানোর কৌশল। দ্বিতীয়টি হবে ছোট কৌশল, যা পারমাণবিক অস্ত্রের সীমিত ব্যবহার। তৃতীয়টি হলো, জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র রাশিয়ার দখলে থাকার অর্থ এটিতে প্রচুর পারমাণবিক বর্জ্য রয়েছে। এখানেই একটি বিপর্যয় ঘটাতে পারে। ইউএস আর্মি ইউরোপের কমান্ডিং জেনারেলের রাশিয়া ও ইউরেশীয় বিষয়ক সাবেক বিশেষ উপদেষ্টার মতে, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের পূর্ণ মাত্রার পারমাণবিক হামলা চালানোর সম্ভাবনা কম।
এমকে