ইউক্রেন যুদ্ধ। প্রতীকী ছবি
ইউক্রেনীয় বাহিনীর সাম্প্রতিক ক্ষিপ্র আক্রমণ থমকে গেছে ‘জেনারেল উইন্টারের’ দাপটে। গোলাবারুদ যেন ঠাণ্ডায় জমে গেছে। অন্ধকার আর পানির অভাবে বেকায়দায় পড়েছে জেলেনস্কি বাহিনী। প্রবল শীতে যুদ্ধ করতে হচ্ছে তাদের। এই পরিস্থিতিতে রাজধানী কিয়েভে পরপর আঘাত হেনেছে বেশ কয়েকটি রুশ মিসাইল। সব মিলিয়ে কিয়েভের হঠাৎ ছন্দপতন।
ইউক্রেনে গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি অবকাঠামোগুলোকে লক্ষ্য করে আক্রমণ চালানো হচ্ছে। এর মধ্যেই দেশটির এক কোটিরও বেশি মানুষ বিদ্যুৎ-বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। কিয়েভের মেয়র বলেছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ইউক্রেনকে সবচেয়ে ভয়াবহ শীতকাল কাটাতে হচ্ছে।
সিএনএনের খবর, পুরো ইউক্রেনের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে নিশানা করছে পুতিন বাহিনী। পানীয় জল সরবরাহ ব্যবস্থায় হামলা করছে রুশ সেনারা। কিয়েভের মেয়র ভিতালি ক্লিৎস্চকো বলেন, রাজধানীর পরিকাঠামোয় হামলা চালিয়েছে রুশ সেনারা। বাসিন্দাদের এয়ার রেইড শেল্টারে আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে। বেশ কিছু এলাকায় পানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। প্রায় ৭৩ শতাংশ এলাকায় বিদ্যুৎ নেই। মিকলাইভ প্রদেশের সামরিক প্রশাসক ভিতালি কিম জানিয়েছেন, লাগাতার ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ছে রাশিয়া। দোনেৎস্ক অঞ্চলে প্রবল গোলবর্ষণ করছে রুশ সেনাবাহিনী।
জেনারেল উইন্টার: বিশ্লেষকদের মতে, এই যুদ্ধে রাশিয়ার অন্যতম অস্ত্র হচ্ছে শীত। এখন কিয়েভে তাপমাত্রা শূন্যের নিচে। ফলে ঘর গরম রাখতে ও পানির পাইপগুলোকে সচল রাখতে বিদ্যুতের প্রয়োজন। সেই দুর্বল জায়গাতেই আঘাত করছে রাশিয়া। শুধু তাই নয়, ঠাণ্ডায় ইউক্রেনীয় বাহিনীকে ঘিরে ফেলার একটি পরিকল্পনাও করছে রুশ সেনা। অনেকে বলছেন, যেভাবে ঠাণ্ডার কারণে নেপোলিয়নকে রাশিয়ার কাছে হারতে হয়েছিল, সেভাবেই ‘জেনারেল উইন্টার’-এর দাপটে বিপর্যস্ত হয়েছিল নাৎসি বাহিনী। তাই শীতের মৌসুমে অনেক বেশি সতর্ক থাকতে হবে।
মলদোভাতেও অন্ধকার: বিবিসি জানায়, ইউক্রেনের বিদ্যুৎ অবকাঠামোতে রুশ হামলার কারণে প্রতিবেশী দেশ মলডোভাতেও বিদ্যুৎ বিভ্রাট দেখা দিয়েছে। পুরো শহর ‘ব্ল্যাকআউট’ হয়ে আছে। বৃহত্তর কিয়েভ অঞ্চলের প্রধান বলেছেন, ইউক্রেনের ওপর ফেলা প্রতিটি বোমার বিস্ফোরণে মলডোভা ও আমাদের জনগণ এবং বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমরা ধ্বংসাত্মক এ যুদ্ধ এখনই বন্ধ করতে রাশিয়ার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
সম্প্রতি ইউক্রেনের জ্বালানি উত্তোলন কেন্দ্রগুলোতে রাশিয়ার হামলা বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ জনগণকে নিরাপদ আশ্রয় নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন লভিভের মেয়র আন্দ্রি সাডোভি। তিনি বলেছেন, শিশুদের আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছে এবং এই হামলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত অভিভাবকদের তাদের বের না হতে দিতে অনুরোধ করা হয়েছে।
আকাশ পথেও হামলা: রুশ বাহিনী ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ, খারকিভসহ বিভিন্ন অঞ্চলে আবারো বিমান হামলা জোরদার করেছে। বুধবার খারকিভে বিমান হামলায় দুজন নিহত হয়েছেন। কিয়েভ অঞ্চলের গভর্নর ওলেস্কি কুলেবা বলেন, ইউক্রেনের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা কাজ করছে। তবে ইউক্রেনজুড়ে বিমান হামলার বিষয়ে সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
যুক্তরাজ্যের হেলিকপ্টার পেল কিয়েভ: রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে কিয়েভকে সহায়তা বাড়ানোর অংশ হিসেবে হেলিকপ্টার দেয়া হচ্ছে। যুক্তরাজ্যের ৩টি ‘সি কিং’ হেলিকপ্টার পাবে কিয়েভ। এরই মধ্যে একটি হেলিকপ্টার সেখানে পৌঁছে গেছে। গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা শুরুর পর থেকে এই প্রথম যুক্তরাজ্যের পক্ষ থেকে পাইলট নিয়ন্ত্রিত হেলিকপ্টার দেয়া হলো।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ ছাড় কি আটকে যেতে পারে : ইউক্রেনের অস্ত্র সাহায্য ছাড়াও সৈন্যদের প্রশিক্ষণ, বেতন-ভাতা, খাওয়া ও সরকারের আনুষঙ্গিক খরচ বাবদ যেভাবে দুহাতে অর্থ ছাড় দিচ্ছেন বাইডেন, তার বিরোধী শিবির রিপাবলিকানরা এখন প্রশ্ন তুলছে, আর কত? এই প্রশ্ন যে শুধু বাইডেনের বিরোধী শিবির তুলছে এমনটা নয়, বাইডেনের দল ডেমোক্র্যাটিক পার্টির নেতারাও তুলছেন। তারাও চাইছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে বাইডেন আলোচনার উদ্যোগ নেবেন। যদিও এ সংক্রান্ত একটি চিঠি দিয়ে তা আবার ফেরত নিয়েছেন ডেমোক্র্যাটদের প্রগতিশীল নেতারা। তবে যুক্তরাষ্ট্রের দুই দলের নেতাদের মধ্যে একটি গোষ্ঠী সুর চড়াচ্ছে এই বলে যে, এই যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ দেয়া কমাতে হবে।
তাহলে সমাধান কী, সেটাই বড় প্রশ্ন। প্রথমেই বলা হয়েছে, যুদ্ধ নির্ধারিত হয় নেতাদের মর্জিতে। এখন মার্কিন কংগ্রেসের দুই কক্ষ থেকেই যদি নেতারা আওয়াজ তোলেন, বাইডেনকে সেক্ষেত্রে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার পথ বেছে নিতে হবে। একই সঙ্গে যদি অর্থ সাহায্যের পরিমাণ কমে আসে, তখন হয়তো তাকে সংকট সমাধানের পথে হাঁটতে হবে।