গত বছর ডিসেম্বরে প্রথম ব্রিটেনে আইন মেনে ছাড়পত্র পায় ফাইজ়ারের কোভিড ভ্যাকসিন। এর পরে এক-এক করে মডার্না, অ্যাস্ট্রাজ়েনেকা, জনসন অ্যান্ড জনসন-সহ একাধিক সংস্থার প্রতিষেধক হাজির হয়েছে বাজারে।
কিন্তু বহু ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, তা যথেষ্ট কার্যকর হচ্ছে না। বিশেষ করে কিছু ক্ষেত্রে নতুন মিউটেটেড স্ট্রেনের সামনে প্রায় অকেজো প্রতিপন্ন হচ্ছে প্রতিষেধক। দক্ষিণ আফ্রিকা যেমন জানিয়েই দিয়েছে, তাদের স্ট্রেনে অ্যাস্ট্রাজ়েনেকার প্রতিষেধক কোনও কাজ দিচ্ছে না। এ অবস্থায়, চিন একটি প্রস্তাব এনেছে। বাজারে উপস্থিত ভ্যাকসিনগুলি মিশিয়ে প্রতিষেধকের ক্ষমতা বৃদ্ধি করা যেতে পারে বলে দাবি করছে তারা।
আজ একটি বৈঠকে এ কথা বলেন চিনের এক শীর্ষস্থানীয় বিশেষজ্ঞ। এ দেশের সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, ‘সেন্টার ফর ডিজ়িজ় কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন’-এর প্রধান গাও ফু বলেন, ‘‘বর্তমানে যে প্রতিষেধকগুলি রয়েছে, তার কার্যকারিতার হার বেশি নয়। সে ক্ষেত্রে প্রশাসনকে বিকল্প উপায়গুলি সম্পর্কে ভাবতে হবে।
অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজ়েনেকার টিকায় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে এবং ফাইজ়ারের ভ্যাকসিন অপ্রতুল— এই অভিযোগে রুশ ও চিনা ভ্যাকসিনের দিকে ঝুঁকতে দেখা যাচ্ছে ইউরোপকে। রুশ প্রতিষেধক কিনতে ইতিমধ্যেই প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক সেরে ফেলেছে জার্মানি, ফ্রান্স। ও দিকে, চিনা প্রতিষেধক কিনতে উৎসাহ প্রকাশ করেছে হাঙ্গেরি। এ বার চিনা বিশেষজ্ঞও জানালেন, তাদের প্রতিষেধক যথেষ্ট কার্যকর নয়।
গত বছর মাঝামাঝি নাগাদ, বিশ্বে সবার আগে, চিন নিয়ম ভেঙেই টিকাকরণ শুরু করে দিয়েছিল দেশে। বিদেশি রাষ্ট্রগুলোকেও দেশজ টিকা কেনার জন্য আহ্বান জানায় চিন। অন্তত ১৬ কোটি ১০ লক্ষ বাসিন্দাকে ইতিমধ্যে টিকা দিয়ে ফেলেছে তারা। তাদের লক্ষ্য, জুন মাসের দেশের ৪০ শতাংশ বাসিন্দার টিকাকরণ সেরে ফেলা। গাও ফু আগে বলেছিলেন, টিকাকরণেই কোভিডকে পরাস্ত করা সম্ভব। সম্প্রতিও একটি সাক্ষাৎকারে জানান, এ বছরের মধ্যে ৭০-৮০ শতাংশ মানুষকে টিকা দিয়ে ফেলতে চায় চিন। কিন্তু এই প্রথম গাও-এর মুখে শোনা গেল, তাদের টিকাও
ভাল কাজ দিচ্ছে না। এবং তারাও বিকল্পের সন্ধানে।
বিকল্প তো দূরের কথা, বাজারে উপস্থিত টিকারই ঘাটতি রয়েছে বেশির ভাগ দেশে। বহু দেশে টিকাকরণ শুরুই হয়নি। একমাত্র আমেরিকা ও ব্রিটেনে দ্রুত গতিতে টিকাকরণ চলছে। টিকা দেওয়ায় নতুন রেকর্ড গড়ছে আমেরিকা।
শনিবার এক দিনে ৪৬ লক্ষ ডোজ় টিকা দেওয়া হয়েছে। গত সপ্তাহের থেকে যা ৫ লক্ষ বেশি।
কিন্তু এই পরিমাণ টিকাকরণ হলেও আমেরিকার হাসপাতালগুলিতে রোগীর সংখ্যা কমছে না। বিশেষজ্ঞদের কথায়, ‘‘এর জন্য দায়ী বি.১.১.৭ স্ট্রেন। আমেরিকায় এখন সব বেশি সংক্রমণ ছড়াচ্ছে এই স্ট্রেনটিই।’’ তাঁরা আরও জানাচ্ছেন, এই স্ট্রেনটি আগের থেকে অনেক বেশি সংক্রামক। বাড়াবাড়ি হচ্ছে বেশি। মৃত্যুও ঘটছে বেশি। যার জন্য, এই পরিমাণ টিকাকরণের পরেও আমেরিকায় গড়ে দিনে আক্রান্ত হচ্ছেন ৭০ হাজার মানুষ।