ফাইল ছবি
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ২৫১তম দিন অতিবাহিত হয়েছে গতকাল। রাশিয়া হয়ত ধারণা করেছিল- ক্রিমিয়ার মতো খুব সহজেই কিয়েভকে বশীভূত করবে। কিন্তু এখনো অধরা সেই স্বপ্ন। ঠিক তেমনি যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমারা ভেবেছিল বহুমাত্রিক নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রাশিয়াকে একঘরে করে খুব সহজেই কাবু করে ফেলবে। তবে আন্তর্জাতিক রাজনীতি থেকে রাশিয়ার শিকড় উপরে ফেলার পশ্চিমা মনোষ্কামনা প্রচণ্ডভাবে পরাভূত হচ্ছে বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এদিকে ইউরোপের দেশে দেশে ন্যাটোবিরোধী জনমত আরো তীব্র হচ্ছে। ইউরোপের কয়েকটি দেশে নিষেধাজ্ঞাবিরোধী জনমত সাম্প্রতিক নির্বাচনের ফলাফলে প্রভাব ফেলেছে। রাশিয়ার জন্য আরো আনন্দের কারণ হয়ে এসেছে ব্রাজিলের নির্বাচনে বামপন্থিদের জয়।
লুলার জয়ে উৎফুল্ল পুতিন : ব্রাজিলের নির্বাচনে লুলা ডা. সিলভার জয়ে পুতিন উৎফুল্ল বলে মন্তব্য করেছে স্কাই নিউজ। ইউক্রেন থেকে শষ্য পরিবহনে রাশিয়ার নীতি বাস্তবায়নের আকাক্সক্ষা আরো চাঙ্গা হয়েছে বলেই মনে করছে পত্রিকাটি। মস্কো স্টেট ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল রিলেশন্স লিউডমিলা ওকুনেভা এর গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, রাশিয়া এবং পুতিন- উভয়ের সঙ্গেই লুলার ভালো সম্পর্ক রয়েছে। এ কারণে ক্রেমলিন নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পর্কে শান্ত ছিল। রাশিয়া এবং ইউক্রেনের মধ্যে শান্তি আলোচনায় মধ্যস্থতাকারী হিসেবে লুলার ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করেন এই রাষ্ট্রবিজ্ঞানী।
পানি ও বিদ্যুৎ দিয়েই বশে আনার কৌশল : গত কয়েকদিনের ব্যাপক আক্রমণে ইউক্রেনের জরুরি পরিষেবার অবকাঠামোগুলো বিশাল ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত হয়েছে। আন্তর্জাতিক মিডিয়া বলছে, রাশিয়া কিয়েভকে পানি ও বিদ্যুৎ দিয়ে বশে আনার নীতিতে নিয়েছে। ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পাশাপাশি বিদ্যুৎ ও পানিকেও হাতিয়ারে পরিণত করেছে। যে কারণে রুশ বাহিনী ইউক্রেনের বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহের কেন্দ্রগুলো লক্ষ্য করেই হামলা চালাচ্ছে। গতকাল ইউক্রেনের জার্মান আর্টিলারি কেন্দ্রে হামলা হয়েছে। পাশাপাশি ইউক্রেনের ৩টি জল বিদ্যুৎকেন্দ্র ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। মেট্রো নিউজ বলছে, ইউক্রেনের প্রায় ৮০ শতাংশ এলাকা বিদ্যুতের অভাবে অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে আছে। এই পরিস্থিতিতে পুরো ইউক্রেনজুড়ে জরুরি বিদ্যুৎ কাটছাঁট করা হয়েছে।
গত দুদিনে ইউক্রেনজুড়ে বিমান হামলার ভয়াবহ সাইরেন বেজে ওঠে এবং দেশটির বেশ কয়েকটি অঞ্চলে জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সুবিধার ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়। একইসঙ্গে দোনেৎস্কের কেন্দ্রস্থলে ৭টি শক্তিশালী বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।
ইউক্রেনের একজন সংসদ সদস্য বলেছেন, জ্বালানি অবকাঠামোর উপর সাম্প্রতিক হামলা ইউক্রেনীয়দের জন্য কঠিন করে তুলছে। আমরা বিদ্যুৎ এবং তাপ ছাড়া কয়েকদিন কাটানোর জন্য প্রস্তুত ছিলাম, কিন্তু পানি ছাড়া দিন কাটাতে প্রস্তুত ছিলাম না এবং এটিই আমাদের বড় বিপদ।
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের মেয়র বলেছেন, ৪০ শতাংশ বাসিন্দার কাছে পানি নেই। সন্ধ্যা পর্যন্ত ২ লাখ ৭০ হাজার অ্যাপার্টমেন্টে বিদ্যুৎ নেই। কিয়েভের আঞ্চলিক গভর্নর ওলেক্সি কুলেবা বলেন, অঞ্চলটির ৯০ শতাংশ বিদ্যুৎ সরবরাহ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আগামী শীতে ইউক্রেন আরো বেশি বিপর্যস্ত হয়ে যাবে। বিদ্যুতের অভাবে ইউক্রেনে অবস্থিত বিদেশি ভাড়াটিয়া সেনারা যুদ্ধের মাঠ ছেড়ে নিরাপদে আশ্রয় নেবে। এমন কৌশলেই রাশিয়া পানি ও বিদ্যুৎকেন্দ্রে হামলা চালাচ্ছে।
ইউক্রেনের শস্যবাহী জাহাজ ছাড়ল : কৃষ্ণ সাগর দিয়ে ইউক্রেনের সামুদ্রিক করিডোর ব্যবহারকে পুতিন জাতিসংঘের দালালি চুক্তি উল্লেখ করে শস্যবাহী জাহাজে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছিলেন। সর্বশেষ তুরস্কের সহায়তায় এ প্রতিবন্ধকতা দূর হয়েছে। শস্য রপ্তানি চুক্তিটি চালু রাখা ‘মহাগুরুত্বপূর্ণ’ এবং একটি মানবিক উদ্যোগ হিসেবে এটিকে ইউক্রেনের সংঘাত থেকে আলাদা রাখা উচিত বলে জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরগোয়ান। তুরস্কের এ উদ্যোগে ৪০টি জাহাজ ইউক্রেন ছেড়ে গেছে। এর মধ্যে প্রথম জাহাজটি ইস্তাম্বুলের জলসীমায় পৌঁছেছে।
রাশিয়া, আর্মেনিয়া ও আজারবাইজানের পুনর্মিলন : রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন সোচিতে আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল পাশিনিয়ান এবং আজারবাইজানের প্রেসিডেন্ট ইলহাম আলিয়েভের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে কারাবাখ ইস্যুতে একটি আলাদা চুক্তিতে পৌঁছতে তিন দেশ একমত হয়েছে। পুতিন বলেন, এই পদক্ষেপ পরিস্থিতি সমাধানের জন্য আরো একধাপ এগিয়েছে। তিনি সংঘাতের অবসান ঘটাতে সম্ভাব্য সবকিছু করবেন বলে জানান।
এনজে