জাপোরিঝজিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, ইউক্রেনের জাপোরিঝজিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিদর্শন ও পরীক্ষা করে দেখার জন্য জাতিসংঘ কর্মকর্তাদের অনুমতি দেয়া হবে।
পুতিনের সঙ্গে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইম্যানুয়েল ম্যাক্রোঁর ফোনালাপের পর এমন ঘোষণা দিয়েছে ক্রেমলিন। খবর বিবিসির।
এর আগে বিবিসিকে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তনিও গুতেরেস বলেন, ওই পারমাণবিক স্থাপনা নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন।
তিনি আরও বলেন, ওই স্থাপনাকে ঘিরে সামরিক তৎপরতা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে এবং একই সঙ্গে তিনি পরিদর্শনকারীদের অনুমতি দিতে মস্কোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন।
গত মার্চ থেকে ইউরোপের বৃহত্তম এই পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে। তবে ইউক্রেনীয় কর্মীরাই সেখানে কাজ করছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
কিন্তু সাম্প্রতিক কয়েক সপ্তাহ ধরে এই স্থাপনার ওপর গোলাবর্ষণের কারণে পারমাণবিক দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে বিশ্বজুড়ে গভীর উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। ইউরোপের বৃহত্তম পারমাণবিক স্থাপনার ওপর এই হামলার জন্য রাশিয়া ও ইউক্রেন পরস্পরকে দায়ী করছে। ইউক্রেন বলছে রাশিয়া পারমাণবিক কেন্দ্রটিকে একটি ঢাল হিসাবে ব্যবহার করছে। কেন্দ্রটিকে একটি সেনা ঘাঁটি হিসাবে ব্যবহার করে সেখান থেকে ইউক্রেনের বিভিন্ন টার্গেটে রকেট হামলা করছে।
রাশিয়া বলছে, এ অভিযোগ মিথ্যা, বরং বিপদ বুঝেও উসকানি তৈরি করতে ইউক্রেনের সৈন্যরা পারমাণবিক স্থাপনাটির ওপর অব্যাহতভাবে রকেট ছুঁড়ছে।
এদিকে, ফ্রান্স ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের মধ্যকার আলাপের পর ক্রেমলিনের বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে মিস্টার পুতিন পারমাণবিক কেন্দ্রটিতে যেতে জাতিসংঘের তদন্তকারীদের সহায়তা করতে সম্মত হয়েছেন। এতে বলা হয়, সেখানকার পরিস্থিতি দেখার জন্য আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের পাঠানোর ওপর উভয় নেতাই গুরুত্ব দিয়েছেন।
জাতিসংঘের পারমানবিক বিষয়ক সংস্থা দ্যা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সি বা আইএইএ মহাপরিচালক মিস্টার পুতিনের ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন জাপোরিঝজিয়া কেন্দ্রটি পরিদর্শনে নেতৃত্ব দিতে তিনি নিজেই আগ্রহী।
তিনি বলেন, এমন একটি অস্থির ও ভঙ্গুর সময়ে এমন কোন নতুন পদক্ষেপ নেয়া উচিত হবে না যা কেন্দ্রটির নিরাপত্তাকে আরও বিপদগ্রস্ত করে তুলতে পারে। ইউক্রেন আগেই অভিযোগ করেছিলো যে রাশিয়া সামরিক উপকরণ, অস্ত্র ও ৫শর মতো সৈন্য রেখে ওই কেন্দ্রটিকে একটি সামরিক ঘাঁটি বানিয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে ওই কেন্দ্রের আশেপাশের এলাকায় ব্যাপক গোলাবর্ষণ হয়েছে যা নিয়ে রাশিয়া ও ইউক্রেন পরস্পরকে দোষারোপ করেছে। বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ মহাসচিব ও তুরস্কের প্রেসিডেন্টের সাথে এক বৈঠকের পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে ইচ্ছাকৃত হামলার জন্য রাশিয়াকে অভিযুক্ত করেন। তবে কেন্দ্রটি পরিদর্শনের সুযোগ দিতে কিছুটা আগ্রহ দেখালেও রাশিয়ার কর্মকর্তারা এলাকাটিতে বেসামরিকীকরণে আন্তর্জাতিক দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন।
রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইভান নেচায়েভ বলেছেন, তা করা হলে কেন্দ্রটি আরো হুমকির মুখে পড়বে। এদিকে, রাশিয়া জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে চিঠি দিয়ে জাপোরিঝজিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে উস্কানির বর্ণনা দিয়ে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনেছে।
রাশিয়া বলেছে, ইউক্রেন দুর্ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করে যাতে রেডিয়েশন লিক হয় আর রাশিয়াকে ‘পারমাণবিক সন্ত্রাসবাদের’ দায়ে অভিযুক্ত করা যায়। ওই চিঠিতে রুশ সৈন্যরা সেখানে অস্ত্র জমা করছে এমন অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। বরং এতে বলা হয় ইউক্রেনীয়রা কেন্দ্রটি লক্ষ্য করে গোলাবর্ষণ করছে।
ডি- এইচএ