Image default
আন্তর্জাতিক

ইউক্রেনে যুদ্ধ এড়াতে কূটনৈতিক তৎপরতার ঝড়

ইউক্রেন সীমান্তে রুশ সেনাদের গতিবিধির দিকে সজাগ দৃষ্টি রাখছে পশ্চিমা দুনিয়া। তবে এর পাশাপাশি শেষ মুহূর্তের কূটনীতির অংশ হিসেবে মঙ্গলবার অঞ্চলটির দিকে যাত্রা করেছেন ইউরোপীয় নেতারা। হামলা বন্ধ এবং যুদ্ধ এড়ানোর সুযোগ এখনও রয়েছে, ক্রেমলিনের এমন ইঙ্গিতের সুবাদেই এই কূটনৈতিক তৎপরতা।

কয়েক সপ্তাহের ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার পর সোমবার সুর কিছুটা পরিবর্তন হয়। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ নিরাপত্তা সংক্রান্ত অভিযোগ নিয়ে আলোচনায় মস্কোর প্রস্তুতির কথা জানান। অন্যদিকে মঙ্গলবার রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ঘোষণা করেছে যে, সামরিক মহড়ায় অংশগ্রহণকারী কিছু ইউনিট তাদের ঘাঁটিতে ফিরে যেতে শুরু করবে। এই দুই পদক্ষেপই রাশিয়ার তরফে উত্তেজনা প্রশমনের প্রচেষ্টা হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

মস্কোর পক্ষ থেকে মহড়ায় অংশগ্রহণকারী যেসব ইউনিটকে ঘাঁটিতে ফিরতে বলা হয়েছে তাদের ঠিক কোথায় মোতায়েন করা হয়েছিল বা কতজন ফিরছে; তাৎক্ষণিকভাবে সে বিষয়টি পরিষ্কার হওয়া যায়নি।

কিছু বাহিনী এবং সামরিক হার্ডওয়্যার সীমান্তের দিকে অগ্রসর হচ্ছে; পশ্চিমা কর্মকর্তাদের এমন সতর্কবার্তার একদিনের মাথায় মস্কোর পক্ষ থেকে মহড়ার কিছু ইউনিটকে ঘাঁটিতে পাঠানোর ওই ঘোষণা আসে।

ইউক্রেন সীমান্তের কাছে রাশিয়ার এক লাখ ৩০ হাজারেরও বেশি সেনা সংগ্রহের ঘটনায় সম্ভাব্য রুশ আগ্রাসনের আতঙ্ক তৈরি হয়। যুক্তরাষ্ট্র এ ব্যাপারে একমত হয়েছিল যে, কূটনৈতিক উপায়ে বিদ্যমান সংকট থেকে বেরিয়ে আসার সুযোগ রয়েছে। তবে তারপরও ওয়াশিংটন, লন্ডন এবং অন্যান্য পশ্চিমা মিত্ররা এই সতর্কতা বজায় রেখেছে যে, যে কোনও মুহুর্তে ইউক্রেনের দিকে অগ্রসর হতে পারে রুশ বাহিনী।

ইউক্রেন সীমান্তে সেনা মোতায়েন এবং সীমান্তের কাছেই বিশাল সামরিক মহড়া শুরু করা সত্ত্বেও ইউক্রেনে হামলা চালানোর পরিকল্পনার কথা বরাবরই অস্বীকার করেছে রাশিয়া।

কূটনীতিতে আশার আলো

কিয়েভে ইউক্রেনের নেতার সঙ্গে বৈঠকের একদিনের মাথায় মস্কোতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাতের পরিকল্পনার কথা জানান জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস। ইউরোপে রাশিয়ার কট্টর সমালোচক হিসেবে পরিচিত পোল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেবিগনিউ রাউ মঙ্গলবার মস্কোতে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। একই সময়ে ইউক্রেন সফর করেন ইতালির  পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেছেন, রাশিয়ার প্রধান দাবিগুলো বিবেচনায় নিতে পশ্চিমাদের অস্বীকৃতি সত্ত্বেও মস্কোর আরও আলোচনা করা উচিত। তার এই মন্তব্যকে রুশ প্রেসিডেন্টের অবস্থান সম্পর্কে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য মস্কোর একটি বার্তা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

সের্গেই ল্যাভরভ বলেন, আলোচনা অনির্দিষ্টকালের জন্য চলতে পারে না, তবে আমি এই পর্যায়ে তাদের আলোচনা চালিয়ে যাওয়া এবং প্রসারিত করার পরামর্শ দেবো।

তিনি জানান, ওয়াশিংটন ইউরোপে ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনের সীমাবদ্ধতা, সামরিক মহড়ার ওপর বিধিনিষেধ এবং অন্যান্য বিষয়ে আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছে।

মস্কো এই গ্যারান্টি চায় যে, ইউক্রেন এবং সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত অন্য দেশগুলোকে পশ্চিমা সামরিক জোটে ন্যাটোতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে না। রাশিয়ার দাবি, ন্যাটো জোট যেন ইউক্রেনে আর সামরিক সরঞ্জাম মোতায়েন না করে এবং পূর্ব ইউরোপ থেকে তাদের বাহিনী ফিরিয়ে নিয়ে যায়।

পুতিন উল্লেখ করেছেন, পশ্চিমারা রাশিয়াকে ‘অন্তহীন আলোচনায়’ আকৃষ্ট করার চেষ্টা করতে পারে। এখনও চুক্তি বা সমঝোতায় পৌঁছানোর সুযোগ আছে কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট। আর যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদেরকে রাশিয়ার প্রধান দাবিগুলো উপেক্ষার সুযোগ না দেওয়ার কথা বলেছেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিক্রিয়া

হোয়াইট হাউসের প্রিন্সিপাল ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি কারিন জিন-পিয়েরে বলেছেন, রাশিয়া যদি গঠনমূলকভাবে আলোচনায় যুক্ত হতে চায় তাহলে কূটনীতির পথ খোলা থাকবে। তবে মস্কোর কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে ওয়াশিংটন সজাগ দৃষ্টি রাখছে।

এদিকে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ ঠেকাতে পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোতে যোগদানের প্রচেষ্টা থেকে সরে আসতে পারে ইউক্রেন। সংবাদমাধ্যম বিবিসি-র সঙ্গে আলাপকালে এমন মন্তব্য করেছেন যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত ভাদিম প্রিসটাইকো। যে কোনও দিন ইউক্রেনে হামলা চালাতে পারে রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এমন আশঙ্কা প্রকাশের পর গত ১৩ ফেব্রুয়ারি নিজ দেশের এমন অবস্থানের কথা জানান তিনি।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন শুরু থেকেই ইউক্রেনকে ন্যাটো জোটে যোগ না দেওয়ার ব্যাপারে সতর্ক করে আসছিলেন। পশ্চিমা সামরিক জোটটিতে যোগদান থেকে ইউক্রেন সরে আসবে কিনা? বিবিসি-র এমন প্রশ্নের জবাবে প্রিসটাইকো বলেন, যুদ্ধ এড়াতে ইউক্রেন এই জোটে যোগদানের প্রচেষ্টা থেকে সরে আসতে আগ্রহী।

রাষ্ট্রদূত পরে তার ওই বক্তব্য থেকে সরে আসলেও এটি প্রতীয়মান হচ্ছে যে, বিষয়টি আলোচনার টেবিলে উঠেছে এবং নেপথ্যে এ নিয়ে আলোচনা চলছে। অবশ্য আশাব্যঞ্জক কিছু লক্ষণ সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় দেশগুলো ইউক্রেন ইস্যুতে তাদের সতর্কতা বজায় রেখেছে।

ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিজ ট্রাস মঙ্গলবারও বলেছেন যে, ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের শঙ্কা এখনও রয়ে গেছে। স্কাই নিউজকে তিনি বলেন, হামলা আসন্ন হতে পারে। তবে রুশ প্রেসিডেন্টের কাছে এখনও এ থেকে সরে আসার সুযোগ রয়েছে। একই ধরনের সতর্কবার্তা উচ্চারণ করেছেন নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যানিকেন হুইটফেল্ড।

মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, রাশিয়ান সামরিক বাহিনী ইউক্রেন সীমান্তে স্পষ্টতই আক্রমণের প্রস্তুতি অব্যাহত রেখেছে।

ম্যাক্সার টেকনোলজিস নামের একটি বাণিজ্যিক স্যাটেলাইট ইমেজারি সংস্থা রুশ তৎপরতার ওপর নজরদারি করে থাকে। সংস্থাটি বলছে, বেলারুশ, ক্রিমিয়া এবং পশ্চিম রাশিয়ায় সামরিক তৎপরতা বাড়িয়েছে মস্কো। ইউক্রেনের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা কাউন্সিলের প্রধান ওলেক্সি ড্যানিলভ অবশ্য হামলা হুমকিকে খুব বেশি গুরুত্ব দিতে নারাজ। তবে তিনি ইউক্রেনে ‘অভ্যন্তরীণ অস্থিতিশীলতার’ ঝুঁকি সম্পর্কে সতর্কবার্তা উচ্চারণ করেছেন।

তিনি বলেন, ‘১৬ বা ১৭ তারিখে বড় ধরনের অভিযান চালিয়ে রাশিয়া ইউক্রেন দখল করবে, এমন পরিস্থিতি আমরা দেখছি না। আমরা আমাদের দেশের ভূখণ্ডে বিদ্যমান ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন। তবে পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।’

সোমবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া এক ভাষণে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, ইউক্রেনের মানুষের জন্য এটিই প্রথম কোনও হুমকি নয়। এ সময় তিনি দেশবাসীকে শান্ত ও ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।

জেলেনস্কির এমন মন্তব্য সত্ত্বেও সম্ভাব্য হামলা মোকাবিলার প্রস্তুতি অব্যাহত রয়েছে। রাজধানী কিয়েভের বাসিন্দারা সেখানকার মেয়রের কাছ থেকে চিঠি পেয়েছেন। এতে নিজেদের শহরকে রক্ষা করতে বাসিন্দাদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। এপি অবলম্বনে।

 

তথ্য সূত্র : https://www.banglatribune.com/

Related posts

রাশিয়ার টিকা তৈরি করতে চায় সেরাম

News Desk

ভিভিআইপি গাড়ির জন্য রাস্তা বন্ধ করা যাবে না: মমতা

News Desk

ফের যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলায় নিহত ৫

News Desk

Leave a Comment