Image default
আন্তর্জাতিক

ইউক্রেনে হামলা, আরব বিশ্বের দেশগুলো খাবার পাবে কোথায়

আরব বিশ্বের বিভিন্ন দেশে খাদ্যসংকট রয়েছে। এ সংকট আরও বৃদ্ধির আশঙ্কা করা হচ্ছে। বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়েছে, ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার কারণে মিসর, লেবানন, ইয়েমেনসহ আরব অঞ্চলের বিভিন্ন দেশের মানুষের পাতে রুটির সংখ্যা আরও কমতে পারে।

ইউক্রেন ও রাশিয়া—এ দুই দেশ থেকেই গম আমদানি করে থাকে আরব দেশগুলো। আমদানির ক্ষেত্রে এ দেশ দুটির ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল তারা। খাদ্যাভ্যাসের কারণে গমের আটার রুটি এ অঞ্চলের অন্যতম প্রধান খাবার। ফলে যদি এর সরবরাহ ব্যহত হয়, তবে আরব দেশগুলোয় খাদ্য সরবরাহে বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনভিত্তিক প্রতিষ্ঠান মিডল ইস্ট ইনস্টিটিউট বলছে, ইউক্রেন সংকটের কারণে যদি গমের সরবরাহ ব্যাহত হয়, তাহলে মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার বেশ কয়েকটি দেশে খাদ্যসংকটের জন্য নতুন করে বিক্ষোভ শুরু হতে পারে এবং পরিস্থিতি অস্থিতিশীল হতে পারে।

এর একটি সাম্প্রতিক উদাহরণ হতে পারে উত্তর আফ্রিকার দেশ সুদান। সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ২০১৯ সালে পতন ঘটে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকা স্বৈরশাসক ওমর আল–বশিরের। রুটির দাম তিন গুণ বাড়ানোর প্রতিবাদে শুরু হওয়া গণবিক্ষোভ ওই অভ্যুত্থানকে উসকে দেয়। বশিরের বিদায় হলেও সেখানে এখনো সামরিক সরকার ক্ষমতায়।

সুদানের বর্তমান সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হচ্ছে। রুটির দাম নিয়ে আর যাতে গণবিক্ষোভ দানা বাঁধতে না পারে, সে জন্য সামরিক বাহিনীকে পদক্ষেপ নিতেও দেখা গেছে। গত বৃহস্পতিবার ইউক্রেনে যখন হামলা চালানো হয়, তখন সুদানের সামরিক সরকারের দ্বিতীয় শীর্ষ কর্মকর্তা মস্কোয় ছিলেন। মূলত বাণিজ্য সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করতে সেখানে গিয়েছিলেন।

সাত বছর ধরে ইয়েমেনে যুদ্ধ চলছে। সেখানে রুটি এখন বিলাসবহুল খাবার। অর্থাৎ সাধারণ মানুষের নাগালে নেই এ খাবার। যুদ্ধে সেখানে দুর্ভিক্ষও দেখা দিয়েছে। জাতিসংঘের দেওয়া তথ্যমতে, এ দুর্ভিক্ষের কারণে ১ লাখ ৩০ হাজার মানুষ সেখানে মারা গেছে।

দেশটির পরিস্থিতি তুলে ধরে ইয়েমেনের সরকারি কর্মকর্তা ওয়ালিদ সালাহ বলেন, অধিকাংশ মানুষ মৌলিক খাবার কিনতেই হিমশিম খায়। ইউক্রেন যুদ্ধ সে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে নিয়ে যাবে।

যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি দপ্তরের তথ্য অনুসারে, গম রপ্তানিতে শীর্ষে রাশিয়া। এ খাবার রপ্তানিতে চতুর্থ অবস্থানে ইউক্রেন। গত বৃহস্পতিবার এক টন গমের দাম ছিল ৩৮৪ ডলার। আশঙ্কা করা হচ্ছে, রুশ সামরিক অভিযানের কারণে গমের দাম আগের যেকোনো রেকর্ডকে ছাড়িয়ে যাবে।

এ নিয়ে কথা বলেছেন জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) নির্বাহী পরিচালক ডেভিড বিসলে। তিনি বলেন, ডব্লিউএফপির যে পরিমাণ গম লাগে, তার অর্ধেকই সরবরাহ করে রাশিয়া। এ যুদ্ধের কারণে সেই গম সরবরাহে নাটকীয় প্রভাব পড়তে পারে।

গৃহযুদ্ধ শুরুর আগে গম উৎপাদনে স্বয়ংসম্পন্ন ছিল সিরিয়া। কিন্তু যুদ্ধ শুরুর পর সিরিয়ার গম উৎপাদন কমেছে এবং দিনকে দিন আমদানির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে দেশটি। ডব্লিউএফপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সিরিয়ার ১ কোটি ২৪ লাখ মানুষ খাদ্যসংকটে ভুগছে।

সিরিয়ার অর্থনীতিবিষয়ক প্রকাশনা দ্য সিরিয়া রিপোর্টের চলতি মাসের দেওয়া তথ্য অনুসারে, গত বছর ১৫ লাখ টন গম আমদানি করেছে সিরিয়া। এর সিংহভাগই এসেছে রাশিয়া থেকে।

প্রেসিডেন্ট বাশার আল–আসাদ সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, দেশটির সরকারি ভান্ডারে যে পরিমাণ গম মজুত রয়েছে, তা বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এ দিয়ে আগামী দুই মাস চলবে।

সিরিয়ার শস্যভান্ডারে গমের মজুত থাকলেও মজুত নেই লেবাননের। দেশটির সরকারের শস্যভান্ডারে থাকা গম দিয়ে দুই মাসও চালানো যাবে না।

লেবাননের ভান্ডারে খাদ্যশস্য নেই। নেই অর্থও। অর্থনৈতিক সংকটের কারণে দেশটির ৮০ শতাংশের বেশি মানুষ দরিদ্র হয়ে পড়েছে। ২০২০ সালে বিস্ফোরণে বৈরুতের বিভিন্ন স্থাপনার পাশাপাশি সেখানকার খাদ্যশস্য সংক্ষরণাগারের ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব সংরক্ষণাগারে প্রায় ৪৫ হাজার টন শস্য ছিল। লেবাননের খাদ্যসংকট প্রসঙ্গে দেশটির আদামদানিকারক আহমেদ হোতেইত বলেন, যে খাদ্যশস্য যা মজুত রয়েছে, তা দিয়ে দেড় মাসের মতো চলবে।

লেবাননের গম চাহিদার ৮০ শতাংশ মেটায় ইউক্রেন। দেশটি থেকে প্রতিবছর ৬ লাখ থেকে সাড়ে ৬ লাখ টন গম আমদানি করে থাকে লেবানন।

আহমেদ হোতেইত বলেন, ইউক্রেনের বদলে যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম আমদানি করতে পারবে লেবানন। কিন্তু সংকটের সমাধান সহসা হবে বলে মনে হচ্ছে না। কারণ, ইউক্রেন থেকে গম আসতে সময় লাগে সাত দিন। আর যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসতে সময় লাগবে ২৫ দিন।
গমসংকট রয়েছে মরক্কোর। সংকট রয়েছে তিউনিসিয়ার। রাশিয়া ও ইউক্রেনের কাছ থেকে ৬০ শতাংশ গম আমদানি করে থাকে তিউনিসিয়া। দেশটির কৃষিমন্ত্রী আবদেলহালিম গাসমি বলেন, যে মজুত রয়েছে, তা দিয়ে আগামী জুন পর্যন্ত চলবে।

বিশ্বের খাদ্যশস্য আমদানিকারকের তালিকা করা হলে শীর্ষে থাকবে আলজেরিয়া। দেশটির মজুত রয়েছে ছয় মাসের গম।

বিশ্বে সবচেয়ে বেশি গম আমদানি করে মিসর। রাশিয়ার কাছ থেকে যারা গম আমদানি করে, সেই তালিকার দ্বিতীয় অবস্থানে দেশটি। গত জানুয়ারির মাঝামাঝি তারা রাশিয়ার কাছ থেকে ৩৫ লাখ টন গম কিনেছে। তাদের মজুত রয়েছে ৯ মাসের সরবরাহ। তবে ইতিমধ্যে মিসর অন্য দেশগুলো থেকে গম কেনা শুরু করেছে। যদিও এরপরও ৮০ শতাংশ গম আসে রাশিয়া ও ইউক্রনে থেকে।

গমে বড় রকমের ভর্তুকি দিয়ে থাকে মিসর। ১৯৭৭ সালে রুটের দাম ভর্তুকি কমাতে গিয়ে বিপদে পড়েছিল আনোয়ার সাদাত সরকার। শুরু হয়েছে ‘রুটি দাঙ্গা’। এতে বাধ্য হয়ে সরকার ভুর্তকি কমানোর পরিকল্পনা থেকে সরে আসে।

Related posts

মরক্কোর সাফল্য কামনা সৌদি যুবরাজের

News Desk

রানির প্রকাশ্য শেষকৃত্যানুষ্ঠানের সমাপ্তি

News Desk

গোটাবায়া রাজাপাকসে পদত্যাগ করবেন বুধবারই

News Desk

Leave a Comment