ইউক্রেনকে আরও বেশি সামরিক সাহায্য দেয়ার প্রশ্নে নেটো জোট এবং তাদের মিত্র ৪০টি দেশের মন্ত্রীরা যখন জার্মানিতে এক বৈঠকে বসেছেন, তখন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ এর বিরুদ্ধে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, পশ্চিমারা ইউক্রেনের কাছে অস্ত্রের চালান পাঠালে রাশিয়া সেখানে হামলা করার অধিকার রাখে। এই সংঘাত তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে রূপ নিতে পারে বলেও তিনি সতর্ক করে দিয়েছেন।
রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ নেটোর বিরুদ্ধে সরাসরি এরকম একটা অভিযোগ তুলেছেন যে, তারা, অর্থাৎ নেটো সামরিক জোট রাশিয়ার বিরুদ্ধে একটা প্রক্সি ওয়ার বা ছায়াযুদ্ধ শুরু করেছে।
উল্লেখ্য, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের এরকম এক আশংকার কথা প্রথম শোনা গিয়েছিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মুখে। ইউক্রেনের ওপর একটি নো ফ্লাই জোন আরোপের জন্য যখন নেটোর ওপর চাপ দেয়া হচ্ছিল, তখন সেটা নাকচ করে দিয়ে প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেছিলেন, এটা করতে গেলে যুক্তরাষ্ট্র আর রাশিয়াকে সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে যেতে হবে, আর সেটার মানে হচ্ছে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ।
এখন এই একই আশংকা শোনা যাচ্ছে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মুখে, যখন নেটো ইউক্রেনে তাদের অস্ত্রের চালান আরও বাড়াচ্ছে।
তবে ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রি কুলেবা বলছেন, মিস্টার লাভরভ আসলে পশ্চিমাদের ভয় দেখাতে চাইছেন, কারণ রুশরা বুঝতে পারছে তারা পরাজিত হতে যাচ্ছে ।
৪০টি দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রীদের বৈঠক
জার্মানির রামস্টেইন বিমান ঘাঁটিতে ৪০টি দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী এবং প্রতিনিধিদের যে বৈঠক চলছে, সেটির আয়োজন করেছে যুক্তরাষ্ট্র ।
এই বৈঠকের মূল উদ্দেশ্য ইউক্রেন যুদ্ধের পরের ধাপে দেশটিকে কীভাবে আরও দীর্ঘমেয়াদে এবং আরও বেশি সামরিক সহায়তা দেয়া যায়।
মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন বৈঠকের শুরুতে জানিয়ে দিয়েছেন, ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা জোরদার করার জন্য তারা তাদের সাধ্যের মধ্যে যা করা সম্ভব তাই করবেন।
এই বৈঠকে জার্মানির দিক থেকে একটা গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা আসতে পারে।
জার্মানি বহু বছর ধরে কোন সংঘাত-পূর্ণ অঞ্চলে ভারী অস্ত্র না পাঠানোর নীতি অনুসরণ করতো। তবে ইউক্রেনের বেলায় একই নীতি অনুসরণ করতে গিয়ে জার্মানি বেশ সমালোচনার মুখে পড়ে। এখন তারা সেখান থেকে সরে আসতে যাচ্ছে, জার্মান সরকার এই প্রথম ইউক্রেনের কাছে বিমান-বিধ্বংসী ট্যাংক বিক্রির বিষয়টি অনুমোদন করেছে।
কিছু সাবেক জার্মান সামরিক যান, যেগুলো ফেলে রাখা হয়েছিল গত দশ বছর ধরে, এগুলো এখন আপগ্রেড করা হচ্ছে। এরপর এগুলো ইউক্রেন সেনাবাহিনীর কাছে পাঠানো হবে। এর বিস্তারিত জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী এই বৈঠকে আজ ঘোষণা করবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
এ বছর জার্মানরা তাদের প্রতিরক্ষা বাজেট এরই মধ্যে প্রায় একশো বিলিয়ন ইউরো বাড়িয়েছে। এটাও কিন্তু জার্মানির নীতিতে একটা বড় পরিবর্তন। আর এটাও করতে হয়েছে ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে।
নেটোর অন্য দুই গুরুত্বপূর্ণ সদস্য, ব্রিটেন এবং ফ্রান্স, তারা ইতোমধ্যে ইউক্রেনকে ভারী সামরিক সাজ-সরজ্ঞাম দেয়া শুরু করেছে। ফরাসিরা দিচ্ছে কিছু সিজার কামান, যেগুলোর রেঞ্জ হচ্ছে প্রায় ৪০ কিলোমিটার। আর ব্রিটেন দিচ্ছে স্টারস্ট্রেক এন্টি এয়ারক্রাফট ক্ষেপণাস্ত্র এবং ট্যাংক।
এই বৈঠক থেকে এরকম আরও সাহায্যের ঘোষণা আসতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
মস্কোতে জাতিসংঘ মহাসচিব
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস মস্কো সফরে গেছেন, যেখানে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে তার বৈঠক হওয়ার কথা।
. . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . .
বিবিসির সংবাদদাতা বলছেন, তবে এই বৈঠক থেকে সেরকম বড় কিছু আশা করা হচ্ছে না। কারণ মিস্টার পুতিন এখনো সব কিছু অগ্রাহ্য করে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে চান বলেই মনে হচ্ছে, তার মধ্যে এই যুদ্ধ শুরুর জন্য কোন অনুতাপ দেখা যাচ্ছে না, তিনি এখনো মনে করে যাচ্ছেন যে তিনিই সঠিক।
জাতিসংঘ মহাসচিব এই বৈঠকে ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দর শহর মারিউপোলের পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে। সেখানে একটি মানবিক ত্রাণ করিডোর সৃষ্টি নিয়েও আলোচনা হতে পারে।