ইসরায়েলের হামলায় ইসলামিক জিহাদের দুই শীর্ষস্থানীয় নেতা নিহত
আন্তর্জাতিক

ইসরায়েলের হামলায় ইসলামিক জিহাদের দুই শীর্ষস্থানীয় নেতা নিহত

ফাইল ছবি

ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি হামলায় ২৮ জন নিহত হয়েছে। সেখানে ইসলামিক জিহাদ গ্রুপ নামে একটি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে ইসরাইল।

নিহতদের মধ্যে ছয়টি শিশু এবং জিহাদ গ্রুপ বা পিআইজের নেতা খালেদ মনসুর ও তাইসির জাবারিসহ গোষ্ঠীর আরও বেশ কয়েকজন সদস্য রয়েছেন। ইসরায়েলি এক কর্মকর্তা বলছেন, শুক্রবার থেকে ফিলিস্তিন চারশর মতো রকেট ও মর্টার নিক্ষেপ করেছে। দেশটি বলেছে যে পিআইজের তাৎক্ষণিক হুমকির কারণে তারা তাদের এই অভিযান শুরু করেছে। খবর বিবিসির।

দুই হাজার একুশ সালের মে মাসে ১১ দিন ধরে চলা সংঘর্ষের পর এটিই ইসরায়েল এবং গাজার মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর সংঘাত। ওই বছর ২০০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি এবং বারো জনের মতো ইসরায়েলি নিহত হয়েছিল। ইসরাইল তার এই চলমান অভিযানের নাম দিয়েছে ‘ব্রেকিং ডন’ এবং এক সপ্তাহ ধরে এই অভিযান চলতে পারে বলে সতর্ক করেছে।

ইসরাইল বলছে, গাজায় বিমান হামলার পাশাপাশি, অধিকৃত পশ্চিম তীরে অভিযানে পিআইজে’র ১৯ জন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গাজায় বিমান হামলার মধ্যেই শনিবার ইসরায়েলি শহরগুলিতেও অনবরত ক্ষেপণাস্ত্রের সতর্কতা সাইরেন বাজতে শোনা গেছে। গাজায় নতুন করে আবারও সহিংসতায় ফিলিস্তিনিদের মৃত্যুর এবং ২০০ জনের আহত হওয়ার ঘটনায় ইসরায়েলি আগ্রাসনকে দায়ী করেছে ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। যদিও হামাসের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত কোন রকেট ছোড়া হয়নি বলে মনে হচ্ছে।

ইসলামিক জিহাদের সাথে হামাসের মতাদর্শিক মিল রয়েছে এবং প্রায়শই গোষ্ঠীটির সাথে হামাস তাদের কর্মকাণ্ড সমন্বয় করে থাকে। হামাসকে লক্ষ্য করে ইসরায়েলি বিমান হামলারও কোনও খবর নেই। হামাসের উপরে হামলা সহিংসতা আরও বৃদ্ধি করবে।

শুক্রবার রাতে হামাস জোরালো এক বিবৃতি জারি করে বলেছে যে, ইসরায়েলি হামলার বিরুদ্ধে “প্রতিরোধী গোষ্ঠীগুলি” ঐক্যবদ্ধ রয়েছে। কিন্তু হামাস যেহেতু গাজার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে তাই সম্ভবত বাস্তবসম্মত কোন বিবেচনা থেকে এখন আরও বেশি সংশ্লিষ্ট হওয়া থেকে বিরত রয়েছে গোষ্ঠীটি।

গাজায় বেসামরিক নাগরিকদের মৃত্যু বাড়লে হামাসের এই হিসাব হয়ত বদলে যেতে পারে। হামাস যদি এবারের সংঘর্ষে যোগ দেবার সিদ্ধান্ত নেয় তবে তা দ্রুত আরও তীব্র হয়ে উঠবে।

ইসলামিক জিহাদ উত্তর পশ্চিম তীর থেকে তাদের একজন নেতাকে গ্রেপ্তারের প্রতিশোধ নিতে পারে এমন আশঙ্কায় ইসরায়েল গাজার সাথে তার ক্রসিংগুলো বন্ধ করে দিয়েছে। এতে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে মানুষ জীবন ইতিমধ্যেই অনেক কঠিন হয়ে উঠেছে।

শনিবার কোনো জ্বালানি সরবরাহ না আসায় গাজার একমাত্র বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী স্টেশন বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ কোম্পানিটির একজন মুখপাত্র।

এদিকে ইসরায়েলি এক কর্মকর্তা বলেছেন, গাজা থেকে ছোড়া চারশটি রকেট এবং মর্টারের মধ্যে সত্তরটি ইসরায়েলি ভূখণ্ড পর্যন্ত পৌঁছায়নি। সেগুলো গাজা উপত্যকায় পড়েছে। আর যেগুলো ইসরায়েলি আকাশসীমায় পৌঁছেছে তার বেশিরভাগই ‘আয়রন ডোম’ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দিয়ে প্রতিরোধ করা হয়েছে। কর্মকর্তারা বলেছেন, ইসরায়েলে কোন হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী আইডিএফ জানিয়েছে, ইসলামিক জিহাদের প্রায় ৩০ টি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে দুটি অস্ত্রাগার এবং ছয়টি রকেট তৈরির কারখানা।

ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, এই হামলায় ২ শতাধিক মানুষ আহত হয়েছে।

শুক্রবারের প্রথম হামলার কথা উল্লেখ করে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী ইয়াইর লাপিড বলেছেন, তাৎক্ষণিক হুমকির বিরুদ্ধে ইসরাইল একটি সুনির্দিষ্ট সন্ত্রাস বিরোধী অভিযান চালিয়েছে।

আইডিএফ বলেছে যে তারা পিআইজে-এর সাথে যুক্ত স্থাপনাকে লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। যার মধ্যে গাজা শহরে উঁচু ভবন প্যালেস্টাইন টাওয়ার রয়েছে। ভবনটিতে শুক্রবারের হামলার পর প্রচণ্ড বিস্ফোরণে ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়ে।

ইরানের রাজধানী তেহরানে সফরকালে পিআইজে মহাসচিব জিয়াদ আল-নাখালা বলেছেন: আমরা এই আগ্রাসনের জোরালো জবাব দেব, এবং এমন একটি লড়াই হবে যাতে আমাদের জনগণ জয় হবে। এই যুদ্ধের জন্য কোন লাল রেখা নেই এবং তেল আবিব প্রতিরোধের রকেটের মুখে থাকবে। সোমবার রাতে পশ্চিম তীরে পিআইজে’র প্রধান বাসেম সাদিকে ইসরায়েল গ্রেপ্তারের করার পর সর্বশেষ এই সংঘাতের সূত্রপাত।

ইসরায়েলি আরব ও ফিলিস্তিনিদের সিরিজ হামলায় ১৭ জন ইসরায়েলি এবং দুইজন ইউক্রেনীয় নিহত হওয়ার পর ইসরাইলের গ্রেফতার অভিযানের অংশ হিসেবে জেনিন এলাকা থেকে বাসেম সাদিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। হামলাকারীদের দুইজন জেনিন এলাকার ছিল।

আইডিএফ বলছে, তার বাড়িতে অবৈধ অস্ত্র এবং বিপুল পরিমাণ অর্থ খুঁজে পেয়েছে। গাজার শক্তিশালী জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির মধ্যে একটি পিআইজে ইরান সমর্থিত একটি গোষ্ঠী এবং এর সদর দপ্তর সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে অবস্থিত। এটি ইসরায়েলের উপরে রকেট হামলার সহ বেশ কিছু আক্রমণের জন্য দায়ী। দুই হাজার উনিশ সালের নভেম্বরে, পিআইজের একজন কমান্ডারকে ইসরায়েল হত্যা করার পরে ইসরায়েল এবং পিআইজের মধ্যে পাঁচ দিনের সংঘর্ষ চলে।

ইসরায়েলের ভাষ্য এই কমান্ডার ইসরাইলে আক্রমণের পরিকল্পনা করছিল। ওই পাঁচ দিনের সহিংসতায় ৩৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয় এবং একশ এগার জন। সে সময় ৬৩ জন ইসরায়েলিরও চিকিৎসার প্রয়োজন হয়েছিল।

ইসরায়েল জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে ২৫ জন ফিলিস্তিনি জঙ্গি ছিল। যাদের মধ্যে কয়েকজন রকেট হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল।

Source link

Related posts

২০ হাজার আফগানকে আশ্রয় দেবে যুক্তরাজ্য

News Desk

নিউজিল্যান্ডের সৈকতে তিমির মৃত্যু মিছিল

News Desk

আয়ারল্যান্ডে নাগরিকত্ব : অপেক্ষমাণদের জন্য সুখবর

News Desk

Leave a Comment