Image default
আন্তর্জাতিক

ইসরায়েলকে অবাক করে দিয়েছে হামাস

অস্ত্রবিরতির মধ্য দিয়ে গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যকার ১১ দিনের যুদ্ধ শেষ হয়েছে। এই যুদ্ধে ইসরায়েল ও হামাস একে অপরের সামরিক সক্ষমতায় বিস্মিত হয়েছে। ইসরায়েল খুবই দক্ষতার সাথে গাজার বড় বড় ভবন, টানেল ধ্বংস করেছে। জবাবে হামাস অনেক জটিল ও বিরতিহীনভাবে রকেট নিক্ষেপ করেছে।

ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যকার লড়াইটি কেবল সামরিক যুদ্ধই ছিল না, এটি একইসাথে ছিল মনোস্তাত্ত্বিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা। উভয় পক্ষই ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক জনমতকে প্রভাবিত করার জন্য মিডিয়া ও সামাজিক নেটওয়ার্কগুলোও ব্যবহার করেছে।
১১ দিনের যুদ্ধের সময় হামাস ৪,৩৬০টি রকেট নিক্ষেপ করেছে। তেল আবিবের মতো ইসরায়েলের সুরক্ষিত নগরীতে যেমন এসব রকেট আঘাত হেনেছে, আবার ইসরায়েলের গ্রাম এলাকাতেও এগুলো নিক্ষিপ্ত হয়েছে। হামাসের রকেট হামলায় ইসরায়েলের ১২ জন নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে একজন ইসরায়েলি সৈন্য, ১১ জন বেসামরিক নাগরিক।

রকেট হামলার মাধ্যমে হামাস ইসরায়েলের ২৫ ভাগ লোককে যুদ্ধের স্বাদ দিতে পেরেছে, তাদেরকে আশ্রয়কেন্দ্রে লুকিয়ে পড়তে বাধ্য করতে পেরেছে। ইসরায়েলের সামরিক শ্রেষ্ঠত্ব সত্ত্বেও হামাস তাদের দৃঢ়তা, স্থিতিস্থাপকতা প্রদর্শন করে লড়াই অব্যাহত রাখতে পেরেছে। তারা তাদের রকেট ভাণ্ডারকে দারুণভাবে ও বুদ্ধিমত্তার সাথে ব্যবহারও করতে পেরেছে।

ইসরায়েলের আয়রন ডোমকে বিভ্রান্ত করতে হামাস তাদের রকেটের মান ও উৎক্ষেপণ ব্যবস্থার অনেক উন্নত করেছে। তারা একসাথে অনেক রকেট নিক্ষেপ করায় সবগুলো আয়রন ডোমের পক্ষে ভূপাতিত করা সম্ভব হয়নি। ইসরায়েল তাদের গোয়েন্দাদের নিয়োজিত রেখেছিল হামাসের রকেট ও অন্যান্য সরঞ্জাম ধ্বংস করার কাজে। কিন্তু হামাস ইসরায়েলের সামরিক ও গোয়েন্দাদের হাত থেকে তাদের অস্ত্র ভাণ্ডার সুরক্ষিত রাখতে পেরেছে। এটা কত কৃতিত্বের বিষয় নয়।

অবশ্য, মোসাদ কিন্তু কম ক্ষতিও করেনি। তিউনেশিয়া ও মালয়েশিয়ায় এসব অস্ত্র নিয়ে কঠোর পরিশ্রমে নিয়োজিত ফিলিস্তিনি ইঞ্জিনিয়ারদের অনেককে মোসাদ হত্যা করেছে। কিন্তু তবুও হামাস থামেনি। কিছু কিছু রকেট তারা মিসর ও সিনাই দিয়ে লিবিয়া থেকে এনেছে। সুদান হয়ে ইরান থেকেও কিছু এসেছে। তবে বেশির ভাগ রকেট তারা নিজেরা স্থানীয়ভাবে তৈরী করেছে। এগুলো হলো গাজার হামাস ও ইসলামিক জিহাদের ইঞ্জিনিয়ারদের পরিশ্রমের ফসল। এসব ইঞ্জিনিয়ারের অনেকে বিদেশে পড়াশোনা করেছেন। তারা ইরান ও হিজবুল্লাহর পরামর্শ ও সহায়তায় তাদের মান উন্নত করেছেন।

কৌশলগত পর্যায়ে হামাস এখন ফিলিস্তিনি জনগণের কাছে তাদের অবস্থান উন্নত করতে পেরেছে। তারা যৌক্তিকভাবেই এখন জেরুসালেম ও আল আকসা মসজিদের অভিভাবক হিসেবে দাবি করতে পারে। দুর্বল ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের বিপরীতে তারা অধিকৃত পশ্চিম তীরে নিজেদের অবস্থান মজবুত করতে পেরেছে।

ইসরায়েলের আঘাত

এই যুদ্ধে ইসরায়েলও কম ক্ষতি করেনি হামাসের। তারা গাজায় তাদের উন্নত অস্ত্রের ভালোই প্রদর্শনী করেছে। অন্তত ২৫০ জন ফিলিস্তিনিকে তারা হত্যা করেছে। এদের মধ্যে ৪০ ভাগ নারী ও শিশু।
তাছাড়া হামাসের নৌসক্ষমতা ও ‘বিমানবাহিনীও’ অকার্যকর করে ফেলতে পেরেছে। উল্লেখ্য, আত্মঘাতী ড্রোন, গ্লাইডার ও বিস্ফোরকবোঝাই প্যাসাস্যুট নিয়ে হামাসের এই বিমানবাহিনী গঠিত। ইসরায়েলি হামলায় এই বাহিনী বেশ দুর্বল হয়ে পড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তাছাড়া হামাসের বিপুলসংখ্যক রকেট তারা নিক্ষেপের আগেই ধ্বংস করেছে। আর আয়রন ডোমের মাধ্যমে ৯০ ভাগ রকেট অকার্যকর করে ফেলতে পেরেছে।

সূত্র : মিডলইস্ট আই

Related posts

জাতিসংঘের বিশেষ দূতের দায়িত্ব ছাড়লেন জোলি

News Desk

ইউরোপ যাত্রায় ‘নেতিবাচক’ রেকর্ড বাংলাদেশিদের

News Desk

যুক্তরাষ্ট্রে রেকর্ড ফ্লাইট বাতিল, একদিনে ৭৭০০

News Desk

Leave a Comment