Image default
আন্তর্জাতিক

ইসরায়েলের লজ্জাজনক হার নাকি হামাসের জয়?

ইসরায়েল এবং হামাসের মধ্যে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে যুদ্ধবিরতি ঘোষণার পর থেকে গাজা উপত্যকা এবং সীমান্ত লাগোয়া পার্শ্ববর্তী ইসরায়েলি শহরগুলো শান্ত। যুদ্ধবিরতির ঘোষণার পর উভয়পক্ষ নিজেদের বিজয়ী বলে দাবি করেছে। স্থানীয় কর্মকর্তারা বলেছেন, টানা ১১ দিনের লড়াইয়ে ২৪০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি এবং ১২ ইসরায়েলির প্রাণহানি ঘটেছে। ইসরায়েলি হামলায় গাজার বেশিরভাগ এলাকা ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে।

২০০৯ সালের পর চতুর্থবারের মতো এ ধরনের সংঘাতে গাজায় এই সংঘাত ছিল ‘ধ্বংসাত্মক’ এবং ‘সর্বনাশা।’ জাতিসংঘের মানবিক ত্রাণ সমন্বয়বিষয়ক কার্যালয় বলছে, এবারের লড়াইয়ে গাজায় কমপক্ষে ২৫৮টি ভবন একেবারে ধ্বংস হয়েছে। ইসরায়েলি বিমান হামলায় স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র থেকে শুরু করে পানি, বিদ্যুৎ সংযোগ এবং অন্যান্য অবকাঠামো মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

কিন্তু গাজা উপত্যকার ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী হামাস এবং ইসলামিক জিহাদের মতো অন্যান্য ছোট ছোট গোষ্ঠীগুলো যারা ইসরায়েলে হামলা চালিয়েছিল; তারা বলছে, ইসরায়েলের ‌‘লজ্জাজনক পরাজয়’ ঘটেছে— বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর জন্য এটি আরও বেশি লজ্জার।

ইসরায়েলের এই বোমা হামলাকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো ‘যুদ্ধাপরাধ’ বলে অভিযোগ করেছে। হামাস থেকে ছোড়া রকেটে ইসরায়েলের বিভিন্ন শহর ও সম্প্রদায়ের মধ্যে অচলাবস্থা তৈরি করে। যুগ যুগ ধরে জেরুজালেমে ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি নির্যাতন-নিপীড়নের জবাবে গাজার অনেকে হামাস ও অন্যান্যদের এই হামলাকে বৈধ বলে মনে করে।

টানা হামলা চালিয়ে ইসরায়েল গাজার ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস এবং বেসামরিক নাগরিকদের ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতি করতে সক্ষম হলেও এই গোষ্ঠীটি এখনও ২০ লাখ মানুষের এই উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ করছে এবং সেখানে খুব বেশি পরিবর্তন ঘটাতে পারেনি তেল আবিব।

হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর জ্যেষ্ঠ সদস্য খলিল আল-হায়া শুক্রবার যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর আনন্দ মিছিলে অংশ নেওয়া হাজার হাজার ফিলিস্তিনির উদ্দেশে বলেন, ‘এই উচ্ছ্বাস বিজয়ের।

ফিলিস্তিনি স্বার্থের প্রতি বিশ্বজুড়ে মানুষের সমর্থন-সহমর্মিতা অতীতের তুলনায় নজিরবিহীন বৃদ্ধি পেয়েছে। গাজার বাসিন্দারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সব ধরনের প্ল্যাটফর্মে গাজা ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র প্রতি মুহূর্তে বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরায় জনমত গঠনে তা ভূমিকা রাখছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

গাজায় গত ১১ দিনের সহিংসতা নতুন কিছু না হলেও অনেক পর্যবেক্ষক বলছেন, ফিলিস্তিন-ইসরায়েল নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমা বিশ্বের অনেক দেশের সুর পরিবর্তন হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের অনেক দেশে সাধারণ জনগণ ইসরায়েলের সহিংসতার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন।

গাজা উপত্যকায় ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে ‘মোয়িং দ্য গ্রাস’ বা ‘ঘাস চেঁছে ফেলা’র কৌশল অবলম্বন করছে। গাজার ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী হামাসকে ‘সম্পূর্ণ ধ্বংস’ করে ফেলার পরিবর্তে সামরিক সক্ষমতার দিক থেকে দুর্বল করে ফেলতে ইসরায়েলের এই কৌশল বেশ পুরোনো। আর ইসরায়েলের এমন কর্মকাণ্ডে প্রকাশ্যে সমর্থন এবং সহায়তা করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র।

রকেট লঞ্চার এবং অস্ত্র উৎপাদন স্থাপনায় সফল হামলা চালানোর মাধ্যমে ইসরায়েল দাবি করছে যে, তাদের লক্ষ্য অর্জিত হয়েছে। যদিও গাজার ক্ষমতায় থাকছে হামাসই। গাজা উপত্যকার সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের বিরুদ্ধে টানা ১১ দিনের বোমা হামলাকে ‘নজিরবিহীন সফলতা’ বলে শুক্রবার দাবি করেছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু।

অভিযানের প্রাথমিক লক্ষ্য গাজার নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাস এবং অবরুদ্ধ উপত্যকার দ্বিতীয় বৃহত্তম সশস্ত্র গোষ্ঠী ইসলামিক জিহাদ ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা এই অভিযানে আমাদের লক্ষ্য অর্জন করেছি।’ অত্যন্ত ধূর্ত ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই অভিযানে ইসরায়েলের অর্জনের ব্যাপারে সাধারণ জনগণ সবকিছু জানেন না।’

কিছু কিছু ইসরায়েলি গাজায় হামাসের পতন দেখতে চাইলেও বিশেষজ্ঞদের যুক্তি, গাজায় দীর্ঘমেয়াদে সংঘাত জারি রাখতে চায় ইসরায়েল। এ ধরনের সংঘাতের সফলতা সময়ের সঙ্গে পাল্টে যায়। ‘যে কারণে সেখানে পরিষ্কার এবং গৌরবময় বিজয় কখনই হবে না’ বলে মনে করেন ইসরায়েলি দৈনিক হারেৎজের কলাম লেখক ও প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক আমোস হারেল।

Related posts

নিখোঁজ সাবমেরিনটির ৫৩ যাত্রীই মারা গেছেন

News Desk

ব্রিটিশ রানির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন

News Desk

হিজাবে নিষেধাজ্ঞা ধর্মীয় স্বাধীনতার লঙ্ঘন: যুক্তরাষ্ট্র

News Desk

Leave a Comment