অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের ধাক্কায় পশ্চিমবঙ্গের দিঘা সমুদ্রসৈকত ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বুধবার সকাল থেকে লন্ডভন্ড দিঘা। সমুদ্রের প্রবল জলোচ্ছ্বাসে ভেসে গেছে দিঘা শহরের বিস্তীর্ণ এলাকা। উত্তাল সমুদ্রের পানি বাঁধ টপকে ঢুকছে বসতি-রাস্তায়।
প্লাবিত হয়েছে মন্দারমনি, তাজপুরও। রাস্তা টপকে হোটেলেও ঢুকেছে পানি। ডুবে গেছে সমুদ্র সংলগ্ন দোকানগুলোও। সমুদ্র তীরবর্তী এলাকা সম্পূর্ণ খালি করতে কোমরবেঁধে নেমেছে প্রশাসন। উদ্ধারকাজের জন্য ইতোমধ্যে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।
দিঘা শহরের সমুদ্রের তীরবর্তী এলাকাগুলোয় পানি ঢুকে পড়েছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়তে থাকায় সেখানে পানি ধীরে ধীরে বাড়ছে। ভিডিওতে দেখা যায়, বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। সমুদ্রের পানি ঢুকে পড়েছে অনেক বাড়িতে। পানি উঠেছে মূল রাস্তায়।
স্থানীয়রা বলছেন, দিঘার এমন ভয়াল রূপ আগে কখনও দেখেননি তারা। প্রবল জলোচ্ছ্বাসের সঙ্গে তীব্র গতিতে বইছে ঝোড়ো হাওয়া। সঙ্গে অবিরাম বৃষ্টি। পানির তোড়ে আশপাশের দোকানগুলো ভেসে যায়। ডুবে যায় রাস্তার ওপর দাঁড় করানো মোটরবাইক ও গাড়ি।
আগেই দিঘা ও আশপাশের এলাকা থেকে বাসিন্দা ও স্থানীয় হোটেল থেকে সব কর্মীদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়। সাইক্লোন সেন্টারে আশ্রয় নিয়েছেন বহু মানুষ। মহাসড়কে গাছ উপড়েছে। সেই গাছ কেটে রাস্তা পরিষ্কারের কাজ শুরু করেছে এনডিআরএফ।
মন্দারমণিতে ভয়াবহ প্রভাব দেখায় ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। আশপাশের অধিকাংশ হোটেলে পানি ঢুকে যায়। রাস্তা টপকে গ্রামগুলোতেও জল ঢুকতে শুরু করে। প্রবল ঝোড়ো হাওয়ায় উড়ে যায় বেশ কিছু বাড়ির চাল। ক্ষতিগ্রস্থ একাধিক দোকান-বাড়ি।
এরপর নামানো হয় সেনাবাহিনী। দোকানমালিকদের জিনিসপত্র উদ্ধারে সাহায্য করতে দেখা যায় তাদের। এদিকে ভারতের আবহাওয়া বিভাগের কলকাতা কার্যালয় বলেছে, ঘূর্ণিঝড়টি ছয় ঘণ্টা ধরে ঘণ্টায় ১৫ কিলোমিটার বেগে উপকূলের দিকে এগিয়ে আসছে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব পড়েছে হলদিয়াতেও। হলদি নদীতে জলোচ্ছ্বাসের জেরে পানি ঢুকতে শুরু করেছে হলদিয়ার শিল্পাঞ্চলে। বাঁধ ভেঙে নদী তীরবর্তী এলাকায় পানি ঢোকার আশঙ্কায় দোকানের শাটার বেঁধে রাখছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আজ জানান, পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় সব মিলিয়ে ৫১টি বাঁধ ভেঙেছে এবং পূর্ব মেদিনীপুর থেকে এখনও পর্যন্ত ৩ লাখ ৮৮ হাজার মানুষকে সরানো হয়েছে।
মমতার দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, উপকূলবর্তী এলাকায় ৭০ কিলোমিটার নদীবাঁধ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বহু বাঁধ ভেঙেছে। নন্দীগ্রামেও জল ঢুকেছে। এই পরিস্থিতেও দিশা না হারিয়ে শক্ত হাতে পরিস্থিতি সামলানোর বার্তা দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়।
প্রসঙ্গত, নির্ধারিত সময়ের আগেই ওডিশার বালেশ্বরের কাছে ধামড়াতে আছড়ে পড়ে ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। সকাল সোয়া ৯টা নাগাদ শুরু হয় ল্যান্ডফল। তিন ঘণ্টা ধরে এই ল্যান্ডফলের প্রভাব চলবে। দিঘায় সকাল সাড়ে ৬টায় ইয়াসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৮৮ কিলোমিটার।