ছবি: সংগৃহীত
যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে সোমবার (১৫ আগস্ট) ভারতের স্বাধীনতার ৭৫ তম বর্ষপূর্তি (৭৬ তম স্বাধীনতা দিবস) পালন করছে। এ উপলক্ষে ভারত জুড়েই পালিত হচ্ছে আজাদির অমৃত মহোৎসব, স্বভাবতই নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। স্বাধীনতা দিবসের কুচকাওয়াজে অংশ নিতে এদিন সকালেই দিল্লির লালকেল্লায় পৌঁছে যান দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তার আগে রাজঘাটে দেশটির জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর সমাধিস্থলে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন মোদি। সেখান থেকে আসেন লালকেল্লায়। সেখানে তাকে স্বাগত জানান প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী অজয় ভাট। এরপর প্রধানমন্ত্রীকে সেনাবাহিনীর তরফে ‘গার্ড অব অনার’ দেয়া হয়। পরে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন প্রধানমন্ত্রী। এরপরই লাল কেল্লার অনুষ্ঠানে বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টার থেকে পুষ্পবর্ষণ করা হয়। সেই সঙ্গে বেজে ওঠে দেশটির জাতীয় সঙ্গীত। ওই অনুষ্ঠানে বিভিন্ন স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা একটি কুচকাওয়াজেও অংশগ্রহণ করে।
এ নিয়ে নবম বার লালকেল্লা থেকে পতাকা উত্তোলন করলেন নরেন্দ্র মোদি। করোনার কারণে গত দুই বছর লালকেল্লায় স্বাধীনতা দিবসে কোনো বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়নি। ফলে এবছর ৭৫ তম বর্ষপূর্তিতে বিশেষভাবে সাজিয়ে তোলা হয়েছে লালকেল্লা। স্বাধীনতা দিবসের কর্মসূচি সুষ্ঠভাবে শেষ করার জন্য নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলা হয়েছিল ঐতিহাসিক লালকেল্লা। আকাশ পথেও নজরদারির ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
পরে লাল কেল্লা থেকে দেশবাসীর উদ্যেশ্যে ভাষন দেন প্রধানমন্ত্রী। পরণে সাদা কুর্তা ও নীল ওয়েস্টকোট, মাথায় তেরঙ্গা আঁকা পাগড়ি পরিহিত মোদি একদিকে যেমন দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ থাকার পরামর্শ দিলেন, দেশপ্রেম ও সম্প্রীতির বার্তা দিলেন তেমনই লাল কেল্লার মঞ্চ থেকেই বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিকেও নিশানা করেন।
আগামী ২০৪৭ সালের মধ্যে (স্বাধীনতা অর্জনের শতবর্ষ) স্বাধীনতা সংগ্রামীদের স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে পাঁচটি শপথ নেয়ার অঙ্গীকার করে দৃঢ়তার সঙ্গে নরেন্দ্র মোদি বলেন ‘আগামী ২৫ বছরে ভারত নিশ্চয়ই উন্নয়নশীল রাষ্ট্র থেকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত হবে। আর উন্নত ভারত গঠনের লক্ষ্যে আমাদের কাজ করার সংকল্প নিতে হবে।’
তিনি আরও বলেন ‘আগামী বছরগুলিতে আমাদের পাঁচটি সংকল্প নিতে হবে। এগুলি হল উন্নত ভারতের লক্ষ্যে বৃহত্তর সংকল্প নিয়ে এগিয়ে যাওয়া, দাসত্বের সব চিহ্ন থেকে মুক্তি, উত্তরাধিকার নিয়ে গর্ব বোধ করা, ঐক্যের শক্তি এবং প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রীসহ দেশের সকল নাগরিকদের কর্তব্য পালন।’
দেশের যুব সম্প্রদায়কে তাদের জীবনের আগামী ২৫ বছর দেশের উন্নয়নে উৎসর্গ করার আহ্বান জানিয়ে মোদি বলেন ‘আমরা সমগ্র মানবতার উন্নয়নে কাজ করবো। যখন কোন স্বপ্ন বড় হয়, তখন কঠোর পরিশ্রম করাটাও গুরুত্বপূর্ণ। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রতিশ্রুতি ও সংকল্প দ্বারা অনুপ্রাণিত হতে হবে।’ সেই সাথে নারী শক্তি, নারীর ক্ষমতায়ন নিয়েও বক্তব্য রাখেন মোদি।
লাল কেল্লায় প্রায় ৮৩ মিনিটের বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন ‘দুর্নীতি ও পরিবারতন্ত্র- বর্তমানে ভারত এই দুই বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। দেশের বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান স্বজনপ্রীতির শিকলে আবদ্ধ। ভাই-ভাতিজাবাদ, পরিবারতন্ত্র- আমাদের অনেক সংস্থায় জড়িয়ে পড়েছে। দেশে আর চাচা-ভাতিজাবাদ চলবে না। এটা শুধু রাজনীতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, এটা দুর্নীতিকেও উৎসাহিত করে। আমাদের উচিত এই পরিবারতন্ত্র থেকে দেশকে মুক্ত করা কারণ এটা দেশের অগ্রগতিকে বাধাপ্রাপ্ত করছে।’
তিনি আরও বলেন ‘উঁইপোকার মতো দুর্নীতি গোটা দেশকে ফাঁপা করে দিয়েছে এবং আমাদের এর বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। অতীতে যারা দেশকে লুট করেছে, তারা এখন তাদের পাপের খেসারত দিচ্ছে। তাদের সেই অসৎ পথে উপার্জিত বিভিন্ন সুবিধা আমরা বাজেয়াপ্ত করছি।’ তিনি এদিন পরিস্কার জানিয়ে দেন ‘দেশের অনেকেই চুরি করে লুটেপুটে তা নিজের কাছে রেখে দিচ্ছে। দেশে দুর্নীতির অর্থ উদ্ধার করা হচ্ছে এগুলো দেশের কাজে লাগানো হবে। দেশকে যারা লুট করেছে তাদের তা ফেরত দিতে হবে।’ দুর্নীতি ও দুর্নীতিগ্রস্থদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে দেশবাসীকে পাশে থাকার আহ্বানও জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন দুর্নীতিগ্রস্থদের করুণা দেখালে চলবে না, তাদের প্রতি কঠোর মনোভাব দেখাতে হবে।’
এদিকে বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রের সরকারকে নিশানা করেছেন কংগ্রেসের অন্তবর্তীকালীন সভাপতি সোনিয়া গান্ধী। তার অভিযোগ কেন্দ্রীয় সরকারের রাজনৈতিক এজেন্ডাই হলো ভারতের জাতির পিতা মহাত্মা গান্ধী বা দেশটির প্রথম প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত জওহরলাল নেহেরুর মতো নেতাদের ভাবর্মূর্তিকে কালিমালিপ্ত করা। তার আরও অভিযোগ স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় ভারতীয় বাহিনীর যে আত্মত্যাগ-তাকেও খাটো করার চেষ্টা করছে কেন্দ্র।
স্বাধীনতা দিবসে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে সোনিয়া বলেন ‘গত ৭৫ বছরে প্রতিভাবান ভারতীয়রা দেশকে বিজ্ঞান, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও তথ্যের অগ্রগতির পথে পরিচালিত করেছে। দেশের দুরদর্শী সম্পন্ন নেতারা অবাধ, সুষ্ঠু এবং স্বচ্ছ নির্বাচন ব্যবস্থার ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন। একটি শক্তিশালী গণতন্ত্র ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাও করেছিলেন তারা।’
দিল্লি ছাড়াও দেশিটির প্রতিটি অঙ্গরাজ্য ও কেন্দ্র শাসিত রাজ্যগুলোতেও মর্যাদার সঙ্গে পালিত হয় দিনটি। পশ্চিমবঙ্গে স্বাধীনতার দিবসের মূল অনুষ্ঠানটি হয় কলকাতার রেডরোডে। সেখানে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন মখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যনার্জী। পরে কুচকাওয়াজে অংশ নেন তিনি। কুচকাওয়াজে প্রদর্শিত হয় লক্ষীর ভাণ্ডার, কন্যাশ্রী, সবুজ সাথী, ঐক্যশ্রীসহ রাজ্য সরকারের বিভিন্ন জনমুখী প্রকল্পের ট্যাবলো। এদিনের অনুষ্ঠান থেকে রাজ্যের পুলিশ কর্মকর্তাদের পদক প্রদান করেন মুখ্যমন্ত্রী।
ডি- এইচএ