Image default
আন্তর্জাতিক

করোনায় স্বাস্থ্যঝুঁকিতে মিয়ানমার

সামরিক অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা হুমকিতে পড়েছে। অনেক হাসপাতালে পর্যাপ্ত পরিমাণ স্টাফ নেই। তার ওপর বিরোধীদের গণ অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন বিপুল পরিমাণ চিকিৎসক ও নার্স। এতে সরকারি হাসপাতালগুলোতে স্বাস্থ্যসেবা ভেঙে পড়েছে। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। এতে ভারত সীমান্তের কাছে মিয়ানমারের একটি হাসপাতালের চিত্র ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ওই হাসপাতালে করোনার ৭ জন রোগী আছেন। তাদের শ্বাসকষ্ট, জ্বর আছে।

কোনো বাড়তি অক্সিজেন নেই। দিনরাত সেখানে দায়িত্ব পালন করছেন প্রধান নার্স লুন জা এন, একজন ল্যাব টেকনিশিয়ান ও একজন ফার্মাসিস্ট সহকারী। তারাই ওই ৭ জন করোনা রোগীকে দেখাশোনা করছেন। বেশির ভাগ সময় এসব রোগীকে তারা শুধু ভালবাসাময় কথা বলেন। আর ওষুধ হিসেবে দেন শুধু প্যারাসেটামল। এ অবস্থা চিখা হাসপাতালের। নার্স লুন জা এন (৪৫) বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, আমাদের কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণ অক্সিজেন নেই। নেই চিকিৎসা সরঞ্জাম, বিদ্যুত, ডাক্তার ও এম্বুলেন্স। অথচ এই শহরে বসবাস কমপক্ষে ১০ হাজার মানুষের। এ হাসপাতালে ১১ জন স্টাফের স্থলে দায়িত্ব পালন করছি শুধু আমরা তিনজন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ডাটা অনুযায়ী, গণ অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দেয়া ১৩ জন চিকিৎসককে হত্যা করেছে দেশটির সামরিক জান্তা। স্বাস্থ্যকর্মী, স্বাস্থ্য বিষয়ক স্থাপনা ও পরিবহনে কমপক্ষে ১৭৯টি হামলা হয়েছে। সারা বিশ্বে যে পরিমাণ এমন হামলা হয়েছে, শুধু মিয়ানমারেই প্রায় তার অর্ধেক। এ কথা বলেছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মিয়ানমার বিষয়ক প্রতিনিধি স্টিফেন পল জোস্ট। রিপোর্টে বলা হয়েছে, প্রায় ১৫০ জন স্বাস্থ্যকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কয়েক শত চিকিৎসক ও নার্সের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। এ বিষয়ে সামরিক জান্তার কোনো মুখপাত্র বা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।

বাণিজ্যিক রাজধানী ইয়াঙ্গুনের একটি কোয়ারেন্টিন সেন্টারের একজন কর্মী বলেছেন, স্বাস্থ্যখাতে বিশেষজ্ঞরা সবাই গণ অসহযোগ আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন। তারপর থেকে আমরা কোনো নতুন রোগী নিচ্ছি না। কারণ, কোভিড পরীক্ষা কেন্দ্রে করোনা পরীক্ষা করার মতো স্টাফ নেই। এই স্বাস্থ্যকর্মী নিজের পরিচয় জানাতে অস্বীকৃতি জানান প্রতিশোধ নেয়া হতে পারে এই ভয়ে। দেশটিতে ১লা ফেব্রুয়ারি সামরিক অভ্যুত্থানের আগের সপ্তাহে প্রতিদিন কমপক্ষে ১৭ হাজার মানুষ গড়ে করোনায় আক্রান্তের রেকর্ড আছে। বুধবার তা সাতদিনের হিসেবে প্রতিদিন গড়ে ১২ হাজারে নেমে এসেছে। এখন পর্যন্ত সেখানে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন কমপক্ষে এক লাখ ৪০ হাজার মানুষ। এর মধ্যে মারা গেছেন কমপক্ষে তিন হাজার ২০০ জন। কিন্তু এখন নতুন করোনা ভাইরাসের ভ্যারিয়েন্টে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এরই মধ্যে প্রতিবেশী ভারত, থাইল্যান্ড ও অন্য প্রতিবেশী দেশগুলোতে নতুন নতুন করোনার ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে।

করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ নিয়ে মধ্য মে থেকে চিখা হাসপাতালে রোগী যাওয়া শুরু করেন। এই হাসপাতালটি ভারত থেকে মাত্র ৬ কিলোমিটার দূরত্বে। এখানকার স্বাস্থ্যকর্মীদের আশঙ্কা এসব মানুষের শরীরে উচ্চ মাত্রার সংক্রামক বি.১.৬১৭.২ ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের উপস্থিতি থাকতে পারে। কিন্তু তা পরীক্ষা করার মতো সক্ষমতা নেই এ হাসপাতালের। আন্তর্জাতিক রেডক্রসের মিয়ানমার কোভিড-১৯ অপারেশন ম্যানেজার লুইস সেইয়া-ইউনিস বলেন, মিয়ানমারে করোনার পরীক্ষা, চিকিৎসা এবং টিকাদান খুবই সীমিত। এ নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। অধিক মাত্রায় সংক্রামক করোনা ভাইরাসের ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে আছে বহু মানুষ।

নার্স লুন জা এন বলেছেন, চিখা শহরে ২৪ জনের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। তার মধ্যে মারাত্মক অসুস্থ সাত জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। চিন রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে ঘরে থাকার নির্দেশ জারি করা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, এ নিয়ে তারা কর্তৃপক্ষ ও অন্য গ্রুপগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করছে।

Related posts

মুসলিমদের অভয় দিতে কানাডায় হাজার হাজার মানুষের পদযাত্রা

News Desk

ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ ‘আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন’: জাতিসংঘ

News Desk

এক দশক পর আমিরাত সফরে এরদোগান

News Desk

Leave a Comment