পশ্চিমবঙ্গে টানা তৃতীয়বার ক্ষমতায় এসেছে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস। স্বাধীন ভারতে প্রথমবারের মতো রাজ্যটিতে বিরোধীদলের আসনে বসেছে বিজেপি। তবে এবারের বিধানসভায় বিরোধীদলীয় নেতা কে হবেন সেই প্রশ্নে বিজেপির অন্দরে শুরু হয়েছে গুঞ্জন।
দলীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, এগিয়ে রয়েছেন ভোটের আগে দলবদল করা মমতার এক সময়ের ডানহাত শুভেন্দু অধিকারী। কারণ নন্দীগ্রামে তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারিয়ে হয়েছেন জায়ান্ট কিলার। তাকে ‘জননেতা’ বলে মেনেও নিয়েছে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব।
বিজেপির অন্দরে কিছু নেতা বলছেন, শুভেন্দুর ব্যক্তিত্ব ও তার নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতাও বিবেচনায় রয়েছে। বিধানসভার অন্দরে বিপুল ভাবে জিতে ক্ষমতায় আসা শাসকদলের বিরুদ্ধে তিনি লড়াই দিতে পারবেন বলেই মনে করছে দলের ওই অংশ।
তবে শুভেন্দুর পাশাপাশি মুকুল রায়ের নামও শোনা যাচ্ছে। কৃষ্ণনগর উত্তর আসন থেকে বিধায়ক নির্বাচিত মুকুল রায় একদা তৃণমূলের অঘোষিত দু’নম্বর নেতা ছিলেন। জীবনে এই প্রথম ভোট জিতলেও রাজনৈতিক সংগঠক হিসেবে তার অভিজ্ঞতা নেহাত কম নয়।
কিন্তু আইনসভার সদস্য হিসেবে তিনি কতটা কার্যকরী হবেন, তা নিয়ে বিজেপির অন্দরে একটা আলোচনাও চলছে। কারণ, দু’টি পর্যায়ে রাজ্যসভার সদস্য থাকলেও মুকুল সেখানে বক্তা হিসেবে খুব দাগ কেটেছেন, তথ্য এমন বলে না।
আবার মুকুলের ঘনিষ্ঠরা বলছেন, মেঠো রাজনীতিতে শুভেন্দু অবশ্যই এগিয়ে। কিন্তু পরিষদীয় রাজনীতি করতে গেলে অভিজ্ঞতা, ধৈর্য ও রাজনৈতিক জ্ঞান থাকা জরুরি। পাঁচ বছর ধরে বিধানসভার অন্দরে মমতার সঙ্গে লড়াই করার মতো ধৈর্য বর্ষীয়ান মুকুলের আছে।
আবার রাজ্য বিজেপির একটি সূত্রের দাবি, তৃণমূল থেকে আসা মুকুল-শুভেন্দু কাউকেই বিরোধীদলীয় নেতার পদে দেখতে চান না রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি চান আরএসএস পরিবার-ঘনিষ্ঠ কাউকে বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচিত করা হোক।
কিন্তু এক্ষেত্রে বড় অন্তরায় অভিজ্ঞতা। গত বিধানসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির মাত্র তিনজন বিধায়ক থাকলেও এবার যে ৭৭ জন বিধায়ক হয়েছেন, তাদের মধ্যে মাত্রই হাতে গোনা কয়েকজনের পরিষদীয় রাজনীতি করার অভিজ্ঞতা রয়েছে।
তাদের মধ্যে রয়েছেন মনোজ টিগ্গা। ২০১৬ সালে বিজেপির যে তিন জন বিধায়ক জিতেছিলেন, তাদের একজন মনোজ। দিলীপ সংসদে চলে যাওয়ার পর বিধানসভায় দলকে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তিনিই। বিরোধীদলীয় নেতা
এছাড়াও পরিষদীয় অভিজ্ঞতা রয়েছে চাকদহের বঙ্কিম ঘোষ, জয়পুরের জয়ী নরহরি মাহাতো এবং গোঘাটের বিধায়ক বিশ্বনাথ কারকের। রয়েছেন কোচবিহারের নাটাবাড়ি থেকে নির্বাচিত মিহির গোস্বামীও। তিনি ২৩ হাজার ভোটে সাবেক মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষকে হারিয়েছেন।
তবে প্রাথমিক দৌড় যে শুভেন্দু এবং মুকুলের মধ্যে, তা নিয়ে গেরুয়া শিবিরে সকলেই একমত। এখন দেখার, দিলীপ তার ঝুলি থেকে তৃতীয় কাউকে বার করেন কি না। কারণ, যাদের নাম নিয়ে আলোচনা, তাদের দু’জনের সঙ্গেই দিলীপের সম্পর্ক যথেষ্ট ‘মধুর’।
ফলে তাদের বিরোধী দলনেতা হিসেবে মনোনয়নে দিলীপের প্রশংসাপত্র এলে তা কৌতূহলের বিষয় হবে বৈকি!