কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচনে নির্বাচিত হয়েছেন বর্ষীয়ান রাজনৈতিক মল্লিকার্জুন খাড়গে। তিনি প্রতিদ্বন্দ্বী শশী থারুরের চেয়ে আট গুণ বেশি ভোট পেয়েছেন। বুধবার ভোটের ফলাফল জানার পর শশী থারুর খাড়গেকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, আমাদের পার্টির পুনরুজ্জীবন আজ সত্যিই শুরু হয়েছে।’
গত দুই দশকের মধ্যে এবারই প্রথম গান্ধী পরিবারের বাইরে কেউ কংগ্রেসের শীর্ষ পদে এলেন। এর আগে ১৯৯৮ সালে সর্বশেষ দলীয় প্রধান হয়েছিলেন সীতারাম কেশরি। কিন্তু তিনি তাঁর পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেননি। তাঁর জায়গায় আসেন সোনিয়া গান্ধী। তিনি ১৯ বছর ধরে দলের সভাপতি ছিলেন। এর মধ্যে ২০১৭ সালে একবার সোনিয়া গান্ধীর ছেলে রাহুল গান্ধী দলের প্রেসিডেন্ট হন। কিন্তু ২০১৯ সালে সাধারণ নির্বাচনে দলীয় ব্যর্থতার দায় নিয়ে সরে দাঁড়ান। এরপর থেকে অন্তর্বর্তী প্রধান হিসেবে দল সামলাচ্ছিলেন সোনিয়াই।
এবারের নির্বাচনে গান্ধী পরিবারের ঘনিষ্ঠ খাড়গে সভাপতি হবেন, তা প্রত্যাশিতই ছিল। খাড়গে আগে থেকেই নির্বাচনে জিতলে দলে পরিবর্তন আনার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। এর মধ্যে যেসব নেতার বয়স ৫০ বছরের নিচে, তাঁদের সর্বক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ অংশগ্রহণের বিষয়টিও যুক্ত।
ভারতীয় কংগ্রেসের নতুন প্রেসিডেন্ট মল্লিকার্জুন খাড়গের সামনে এখন অনেক চ্যালেঞ্জ। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) রাজনীতির বিপরীতে তাঁকে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। এর জন্য শুরুতেই তাঁকে প্রমাণ করতে হবে তিনি গান্ধী পরিবারের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করছেন না। তাঁর হাতে রয়েছে দলের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ। গত সোমবার কংগ্রেসের ভোট অনুষ্ঠিত হয়। ওই দিন তিনি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছিলেন, প্রতিটি সিদ্ধান্তের জন্য তিনি গান্ধী পরিবারের মুখাপেক্ষী থাকবেন না। তবে তিনি তাঁদের নির্দেশনা ও পরামর্শ চাইবেন। কারণ, দলে এখনো গান্ধী পরিবারের সদস্যদের যথেষ্ট অভিজ্ঞতা রয়েছে।
খাড়গের জন্য আরেক চ্যালেঞ্জ হচ্ছে কংগ্রেসের অভ্যন্তরে বিরোধ মোকাবিলা করা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা দল ছেড়েছেন। এ ছাড়া অনেকেই দল পরিচালনা নিয়ে তাঁদের অসন্তুষ্টির কথা বলেছেন। রাজনৈতিক বক্তা কে বেনেডিক্ট বলেন, খাড়গে দলের মধ্যে উত্তেজনা কমিয়ে সবাইকে এক সুতায় বাঁধতে পারবেন। অন্যদের সঙ্গে লড়াইয়ে লিপ্ত থাকেন, তিনি এমন কেউ নন।
তবে কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছেন, দক্ষিণের একজন রাজনৈতিক নেতা কীভাবে উত্তরের রাজ্যগুলো বিশেষ করে উত্তর প্রদেশ ও বিহারের মতো এলাকায় আকর্ষণ ধরে রাখতে সক্ষম হবেন? এসব অঞ্চল থেকে ১২০ জন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে থাকে। সাংবাদিক পূর্ণিমা জোশি বলেন, কংগ্রেসকে জাতীয়ভাবে নতুনভাবে দিশা দেওয়ার মতো গতিশীলতা নেই।
পূর্ণিমা বলেন, ‘তিনি একজন শালীন মানুষ এবং তৃণমূলের রাজনীতিবিদ। কেউ তাঁকে হালকা বলছেন না। কিন্তু কংগ্রেসকে নতুন করে ঢেলে সাজানোর ক্ষেত্রে দলে যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে, তা পূরণ করার মতো ব্যক্তি তিনি নন।’ পূর্ণিমা বলেন, মোদি-শাহ জুটিকে চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো সক্ষম তিনি নন। কংগ্রেসের দরকার যিনি বিজেপির খেলায় বিজেপিকেই হারিয়ে দেবেন এমন কাউকে। তবে পূর্ণিমা আরও বলেন, কংগ্রেসের নতুন প্রেসিডেন্ট বিজেপির সঙ্গে আদর্শিক লড়াই চালিয়ে যেতে পারবেন। যখন মানুষ দুই পক্ষের সঙ্গে তুলনা করবে, অন্তত খাড়গেকে ইতিবাচক হিসেবে নেবেন। এ বিষয়টিই এখন দেখতে হবে।
নতুন দায়িত্ব নিয়ে ৮০ বছর বয়সী এই নেতাকে মাঠে দৌড়াতে হবে। আগামী নির্বাচনের জন্য ১৮ মাসের মতো সময় আছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভারতীয় জনতা পার্টিকে (বিজেপি) চ্যালেঞ্জ জানাতে দলে পরিবর্তন প্রয়োজন। বর্তমানে দলটি কাঠামোগত, সাংগঠনিক, এমনকি আদর্শিক নেতৃত্বের দিক থেকে খারাপ সময় পার করছে। এ সময়ে দলকে নেতৃত্ব দেওয়াই হবে তাঁর অন্যতম কাজ।
ভারতের কর্ণাটকের দলিত সম্প্রদায়ের সদস্য খাড়গে দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। ১৯৪২ সালের বিদার জেলায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। আইন বিষয়ে পড়াশোনা করা খাড়গে শুরুতে শ্রমিক ইউনিয়ন করতেন। ১৯৬৯ সালে তিনি ছাত্রাবস্থায় কংগ্রেসে যোগ দেন। ২০০৯ সালে তিনি দিল্লির রাজনীতির কেন্দ্রে আসেন। তিনি গুলবারগা এলাকা থেকে লোকসভা সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালেও তিনি এখান থেকে নির্বাচিত হন। তবে ২০১৯ সালে বিজেপি প্রার্থীর কাছে হেরে যান। ২০২১ সালে তিনি রাজ্যসভার সদস্য হন। প্রবীণ রাজনীতিবিদ সংসদের উভয় কক্ষে বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে কাজ করেছেন। কিন্তু তাঁর রাজনৈতিক জীবনে এখন বিজেপিকে মোকাবিলা করাই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।