ফাইল ছবি
ন্যাটোর শীর্ষস্থানীয় কূটনীতিকরা আবারো বললেন, এখন ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগদানের সময় নয়। গতকাল ব্লুমবার্গ জানায়, ন্যাটোর একটি বৈঠকে ইউক্রেনের সদস্যপদ নিয়ে আলোচনা করা হয়। ইউক্রেনের সদস্যপদের অনুরোধকে সতর্কতার সঙ্গে দেখছেন তারা। কারণ এতে রাশিয়ার সঙ্গে ন্যাটোর সরাসরি সংঘর্ষ টেনে আনতে পারে।
ন্যাটো সদস্য দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা গতকাল বুখারেস্টে একটি বৈঠকে এই মতামত ব্যক্ত করেন।
নিউজ আউটলেটের মতে, কিছু মিত্র কিয়েভকে সদস্যপদ পাওয়ার জন্য সরাসরি চাপ দিচ্ছে। একজন সিনিয়র ইউরোপীয় কূটনীতিকের মতে, এতে কোনো ঐকমত্য নেই। ইউরোপীয় ইউনিয়নের অভ্যন্তরীণ বাজারের কমিশনার থিয়েরি ব্রেটন অক্টোবরে বলেছিলেন যে ইউক্রেনে সামরিক তৎপরতার মধ্যে কিয়েভ ন্যাটোতে যোগ দিতে পারবে না। তবে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময়, ন্যাটো মহাসচিব জেনস স্টলটেনবার্গ সরাসরি প্রশ্নের জবাব দিতে অস্বীকার করেন।
ব্রিটেন লুকিয়ে রাশিয়া থেকে কিনছে তেল : ইউক্রেন সংঘাতের জেরে রাশিয়ার ওপর কয়েক দফায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাজ্য। তবে নিজেদের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা ফাঁকি দিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে ঠিকই রাশিয়া থেকে তেল আমদানি করছে ইউরোপের শক্তিধর এই দেশ।
ট্যাঙ্কার ট্র্যাফিক ডেটা এবং ট্রেড স্ট্যাটিস্টিকসের সূত্রে ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য সানডে টাইমস জানিয়েছে, ফেব্রুয়ারি মাস থেকে কমপক্ষে ৩৯টি তেলের চালান রাশিয়া থেকে কিনেছে যুক্তরাজ্য। তবে রাশিয়ার তেলের চালানগুলো যুক্তরাজ্যের নামে নিবন্ধিত নয়। এক জাহাজ থেকে অন্য জাহাজে স্থানান্তরিত হয়ে যুক্তরাজ্যের বন্দরে পৌঁছে যাচ্ছে সেসব তেল। মূলত যখন বড় ট্যাঙ্কারগুলো তার আকারের কারণে বন্দরে ভিড়তে পারে না, তখন সেসব ট্যাঙ্কারের পণ্যগুলো ছোট ছোট জাহাজে করে বন্দরে সরবরাহ করা হয়। আর এ পদ্ধতির সঠিক ব্যবহার করেই রাশিয়া থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে জ্বালানি তেল কিনছে যুক্তরাজ্য। এভাবে প্রায় ২৩৬ মিলিয়ন ডলার মূল্যের রাশিয়ান তেলের চালান যুক্তরাজ্যে সরবরাহ করা হয়েছে।
সানডে টাইমসের অনুসন্ধান বলছে, এ পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে শিপিং কোম্পানিগুলো তাদের পণ্যের চালানের প্রকৃত উৎস লুকাতে পারে। যেমন- যদি একটি জার্মান সংস্থার মাধ্যমে রাশিয়ার তৈরি করা কোনো পণ্য যুক্তরাজ্যের বন্দরে আসে, তাহলে তা রাশিয়ার নামে নিবন্ধিত না করে জার্মানির নামে নিবন্ধন করা হয়। দ্য সানডে টাইমস দাবি করছে যে তারা কয়েক ডজন রুশ তেলের চালান ট্র্যাক করতে পেরেছে যেগুলো গত মার্চ থেকে যুক্তরাজ্যের বন্দরে পৌঁছেছে। তবে নথিপত্র বলছে ভিন্ন কথা। নথিপত্র মোতাবেক সেসব চালান জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, পোল্যান্ড, ফ্রান্স এবং অন্যান্য দেশ থেকে এসেছে। এর মধ্যে আবার অন্তত ১৩টি চালান জুন ও জুলাই মাসে এসেছে।
এদিকে ইউকে অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিকসের (ওএনএস) তেল আমদানির সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, এ মাসগুলোতে রাশিয়া থেকে কোনো তেল ক্রয় করেনি যুক্তরাজ্য।
মেরিটাইম বিশেষজ্ঞদের মতে, ইউক্রেনে মস্কোর সামরিক অভিযানের পর পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এরপর থেকেই জাহাজ থেকে জাহাজে স্থানান্তর করে তেল কেনার পদ্ধতি আরো বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। শিপিং জার্নাল লয়েডস লিস্টের এনার্জি এবং শিপিং বিশ্লেষক মিশেল উইজ বকম্যান বলেন, ‘শিপ টু শিপ বা জাহাজ থেকে জাহাজে স্থানান্তর পদ্ধতি চালানের গন্তব্য এবং পণ্যের উৎস লুকিয়ে রাখার বা ধোঁয়াশা করার জন্য সত্যিই একটি প্রয়োজনীয় পদ্ধতি হয়ে উঠেছে। এটি প্রথমে ইরানিরা শুরু করেছিল। পরে ভেনেজুয়েলা এটিকে নিখুঁত করে। তারপরে রাশিয়া এটি ব্যবহার করে এগিয়ে যাচ্ছে।’ রিফিনিটিভের শিপ টু শিপ স্থানান্তর নিরীক্ষা বলছে, মার্চ মাস থেকে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত এমন প্রায় ২৬৭টি চালান বিশ্বজুড়ে সরবরাহ করা হয়েছে।
এদিকে সমুদ্রপথে রাশিয়া থেকে তেল আমদানির ওপরে যুক্তরাজ্যের একটি নিষেধাজ্ঞা আগামী ৫ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে। তবে মেরিটাইম বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রকৃতপক্ষে যুক্তরাজ্যের পক্ষে রাশিয়ার তেলের সরবরাহ আসা বন্ধ করা কঠিন হবে। এসব পদ্ধতি ব্যবহার করে তেল দেশটিতে আসবেই। এমনকি নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হওয়ার পরও এমন লুকিয়ে তেল কেনা অব্যাহত থাকবে।
সুনাকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের সুর
এক মাসও হয়নি যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত কনজারভেটিভ পার্টির নেতা ঋষি সুনাক। কিন্তু এর মধ্যেই নিজ দলের এমপিদের বিদ্রোহের মুখে পড়েছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম ব্লæমবার্গ এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
দেশটির সংসদে হাউজবিল্ডিং (বাড়ি নির্মাণ) পরিকল্পনা সম্পর্কিত একটি বিল উত্থাপন করে সেটির ওপর ভোট আয়োজন করতে চেয়েছিলেন ঋষি সুনাক। নিজ দলের এমপিরাই এ বিল নিয়ে তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ইঙ্গিত দিয়েছেন। ফলে আপাতত এটি থেকে সরে এসেছেন তিনি। যুক্তরাজ্যে প্রতি বছর নতুন ৩ লাখ বাড়ি নির্মাণ করার একটি সরকারি পরিকল্পনা রয়েছে। ঋষি সুনাক চেয়েছিলেন, এটি কেন্দ্রীয়ভাবে পরিচালনা করতে এবং বাধ্যতামূলক করতে। সবমিলিয়ে ৫০ জন এমপি এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। যার মধ্যে রয়েছেন মন্ত্রিপরিষদের সাবেক ৮ সদস্য। এদিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস এবং বরিস জনসনসহ এমপিরা সুনাককে পরিবর্তন করার পরিকল্পনা করছেন।
যুক্তরাজ্যের অনলাইন ডেইলি মেইলের ইপ-রাজনৈতিক সম্পাদক ডেভিড উইলকক বলেছেন, অন্যান্য অনেক কাজের চেয়ে অনেক বেশি সময় দিতে হচ্ছে দুই সাবেকের পরিকল্পনা ঠেকাতে।
এমকে