রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধের প্রায় দুই মাস পর মস্কো ও কিয়েভ সফরে যাচ্ছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। আগামী মঙ্গলবার তার মস্কো সফরের কথা রয়েছে। এরপর একই ইস্যুতে আলোচনা করতে বৃহস্পতিবার কিয়েভে যাওয়ার কথা রয়েছে জাতিসংঘ মহাসচিবের। কিন্তু কিয়েভের আগে গুতেরেসের মস্কো সফরের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
. . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . .
তিনি বলেছেন, ‘ইউক্রেনের আগে রাশিয়ায় যাওয়া জাতিসংঘ মহাসচিবের জন্য ভুল সিদ্ধান্ত। এখানে কোনো ন্যায়বিচার এবং কোনো যুক্তি নেই।’ গতকাল শনিবার আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
জেলেনস্কি বলেন, ‘ইউক্রেনে যুদ্ধ চলছে। মস্কোর রাস্তায় কোনো লাশ নেই। মানুষের দুর্ভোগ, রাশিয়ার দখলদারত্বের পরিণতি দেখতে প্রথমে ইউক্রেনে আসাই যৌক্তিক হবে।’
এ সময় ‘যুদ্ধ শেষ করার’ প্রচেষ্টায় রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে বসার আগ্রহও প্রকাশ করেন জেলেনস্কি। তিনি বলেন, ‘আমি তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চাই যেনো কূটনৈতিক উপায়ে চলমান বিরোধ নিষ্পত্তি করা যায়। আমাদের মিত্রদের উপর আস্থা আছে, কিন্তু রাশিয়ার ওপর নেই।’
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানে এর আগেও পুতিনের সঙ্গে মুখোমুখি সাক্ষাতের আগ্রহ প্রকাশ করেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট। এ নিয়ে সম্প্রতি রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেন, আলোচনা থেকে ফলাফল আসলেই শুধু জেলেনস্কির সঙ্গে বসা যায়। তবে পুতিন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে মুখোমুখি আলোচনায় বসবেন কিনা এ নিয়ে কিছু জানায়নি ক্রেমলিন।
এদিকে, কী ধরনের ঘটনা কিয়েভকে মস্কোর সঙ্গে শান্তি আলোচনা থেকে সরে যেতে বাধ্য করতে পারে, সংবাদ সম্মেলনে তা-ও প্রকাশ করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি।
ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের মধ্যে স্থানীয় সময় শনিবার কিয়েভের একটি মেট্রোস্টেশনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জেলেনস্কিকে জিজ্ঞাসা করা হয়, কিয়েভ কীভাবে রাশিয়ান বাহিনী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলগুলোতে সম্ভাব্য স্বাধীনতা গণভোটের প্রতিক্রিয়া জানাবে।
এর জবাবে জেলেনস্কি বলেন, ‘মরিপোলে আমাদের জনগণের ওপর যদি হামলা চালানো হয়, ইউক্রেনের কোনো অঞ্চলে যদি ছদ্ম-গণভোট আয়োজন করা হয় তাহলে ইউক্রেন যেকোনো আলোচনা প্রক্রিয়া থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করবে।’
উল্লেখ্য, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পর থেকে সরব ভূমিকা পালন করছে জাতিসংঘ। যুদ্ধ থামাতে দুপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় বসতে আন্তোনিও গুতেরেস চলতি সপ্তাহে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন।
ধারণা করা হচ্ছে, রাশিয়ার ইউক্রেন আগ্রাসনের কারণে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, ব্রিটেন, চীন ও রাশিয়ার মধ্যে বিভক্তি দেখা দিয়েছে এবং সেটি দূর করতেই জাতিসংঘ মহাসচিবের এমন পদক্ষেপ। পশ্চিমারা রাশিয়াকে দুর্বল করার চেষ্টা অব্যাহত রাখলেও চীন এখনো রাশিয়ার আগ্রাসনে সরাসরি নিন্দা জ্ঞাপন করেনি।
এর আগে, গত ২৬ মার্চ গুতেরেস ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সঙ্গে টেলিফোনে অল্প সময়ের জন্য কথা বলেন। এদিকে, ইউক্রেন আগ্রাসন চালিয়ে রাশিয়া জাতিসংঘ সনদ লঙ্ঘন করেছে, এমন অভিযোগের পর রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন গুতেরেসের ফোনকল ধরেননি কিংবা তার সঙ্গে কোনো যোগাযোগও করেননি।