ছবি: সংগৃহীত
অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক চাহিদা বৃদ্ধির হার আরো শ্লথ হয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। পণ্যটির চাহিদা প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস আবারো কমিয়েছে ওপেক। এপ্রিল থেকে এখন পর্যন্ত এ নিয়ে টানা পাঁচবার পূর্বাভাস কমানো হলো। চলতি বছরের পাশাপাশি আগামী বছরের পূর্বাভাসও কমানো হয়েছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি এবং সুদের হার বৃদ্ধিসহ বিশ্ব অর্থনীতিতে পাহাড়সম চ্যালেঞ্জের কারণেই মূলত চাহিদায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
সম্প্রতি মাসভিত্তিক এক প্রতিবেদনে ওপেক জানায়, চলতি বছর অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক চাহিদা দৈনিক ২৫ লাখ ৫০ হাজার ব্যারেল বা ২ দশমিক ৬ শতাংশ করে বাড়বে। আগের তুলনায় চাহিদা পূর্বাভাস দৈনিক এক লাখ ব্যারেল করে কমানো হয়েছে।
প্রতিবেদনটিতে ওপেক জানায়, বিশ্ব অর্থনীতি ভয়াবহ অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। চলতি প্রান্তিকে (অক্টোবর-নভেম্বর) পরিস্থিতি আরো জটিল আকার ধারণ করতে পারে।
উচ্চমূল্যস্ফীতি, শীর্ষ অর্থনীতির কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর মুদ্রানীতি সংকোচন, শ্রমবাজারে সংকট, সরবরাহ চেইন অব্যাহত প্রতিবন্ধকতাসহ নানা বিষয় নিম্নমুখী ঝুঁকি তৈরি করেছে।
ওপেক ও এর মিত্র জোট ওপেক প্লাস আগামী ৪ ডিসেম্বর জ্বালানি তেল উত্তোলন নীতি নিয়ে বৈঠকে বসবে। তার আগ পর্যন্ত এটিই ওপেকের সর্বশেষ প্রতিবেদন। ওপেক প্লাস সম্প্রতি অপরিশোধিত জ্বালানি উত্তোলন লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে এনেছে। আগামী মাসগুলোয় উত্তোলনের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত সাবধানতা অবলম্বনের কথাও জানিয়েছে জোটটি।
ওপেক মনে করছে, আগামী বছর অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক চাহিদা দৈনিক ২২ লাখ ৪০ হাজার ব্যারেল করে বাড়বে। আগের তুলনায় এ বছরের চাহিদা প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাসও দৈনিক এক লাখ ব্যারেল করে কমানো হয়েছে।
এদিকে অব্যাহত চ্যালেঞ্জ বাড়ার কথা বললেও চলতি ও আগামী বছরের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস স্থিতিশীল রেখেছে জ্বালানি তেল রপ্তানিকারক দেশগুলোর জোটটি। প্রতিবেদনে বলা হয়, নিম্নমুখী চাপ থাকলেও ঊর্ধ্বমুখী সম্ভাবনাও রয়েছে।
এদিকে মার্কিন এনার্জি ইনফরমেশন এডমিনিস্ট্রেশন (ইআইএ) আগামী বছরের জন্য অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক চাহিদা প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস কমিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি বলছে, চাহিদা কমার প্রতিফলন হিসেবে ওপেক প্লাস এরই মধ্যে উত্তোলন লক্ষ্যমাত্রা দৈনিক ২০ লাখ ব্যারেল করে কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অন্যদিকে বাইডেন প্রশাসন কোম্পানিগুলোকে সরবরাহ সম্প্রসারণ না করার নির্দেশনা দিয়েছে।
ইআইএ ২০২৩ সালের জন্য জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক চাহিদা প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস দৈনিক ৩ লাখ ২০ হাজার ব্যারেল কমিয়েছে। চাহিদার পরিমাণ ধরা হয়েছে দৈনিক ১১ লাখ ৬০ হাজার ব্যারেল। চলতি বছর চাহিদা প্রবৃদ্ধির হার দৈনিক ১ লাখ ৪০ হাজার ব্যারেল। মোট চাহিদার পরিমাণ দাঁড়াবে দৈনিক ২৬ লাখ ব্যারেলে। শর্ট-টার্ম এনার্জি আউটলুক শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে সংস্থাটি।
ইআইএ মনে করছে, আগামী বছরের শুরুতেই অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বৈশ্বিক মজুত আবারো ব্যাপক হারে কমতে শুরু করবে। চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে মজুতে প্রবৃদ্ধির হার ছিল দৈনিক আট লাখ ব্যারেল। চলতি প্রান্তিকে তা দৈনিক দুই লাখ ব্যারেলে নেমেছে। আগামী বছরের প্রথম প্রান্তিকে মজুত দৈনিক ১২ লাখ ব্যারেল করে কমবে বলে ধারণা ইআইএর। বছরজুড়ে গড়ে দৈনিক তিন লাখ ব্যারেলের ঘাটতি দেখা দিতে পারে।