এক মাস আগে করোনা টিকার দু’ডোজ নিয়েছিলেন। টিকা নেওয়ার পর যথাসম্ভব মেনে চলেছেন স্বাস্থ্যবিধিও। তারপরও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের এক দন্ত চিকিৎসক।
আক্রান্ত চিকিৎসকের নাম তন্ময় ঘোষ। পশ্চিমবঙ্গের আর আহমেদ ডেন্টাল করেছের সহকারী অধ্যাপক (অ্যাসিসটেন্ট সুপার) পদে আছেন তিনি। তার আক্রান্তের খবরে বিস্ময় জানিয়েছেন ইন্ডিয়ান ডেন্টাল অ্যাসোসিয়েশনের (আইএমএ) পশ্চিমবঙ্গ শাখার সদস্যরা।
গতবছর বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারি শুরুর পর থেকে ভারতের অন্যান্য রাজ্যগুলোর মতো পশ্চিমবঙ্গেও বহু চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এই তালিকায় সবার আগে ছিলেন দন্ত চিকিৎসকরা। চিকিৎসার স্বার্থেই রোগীর মুখগহ্ববর স্পর্ষ করতে হয় চিকিৎসা বিজ্ঞানের এই শাখার চিকিৎসকদের, তাই সহজেই সংক্রমিত হয়েছিলেন চিকিৎসকরা।
কিন্তু আর আহমেদ ডেন্টাল কলেজ সূত্র জানিয়েছে, এক মাস আগে ভারতের সেরাম ইন্সটিটিউটের উদ্ভাবিত করোনা টিকা কোভিশিল্ডের দু’ডোজ নিয়েছিলেন তন্ময় ঘোষ। আইএমএর পশ্চিমবঙ্গ শাখার সম্পাদক ডা. রাজু বিশ্বাস বলেছেন, ‘টিকাদান কর্মসূচি শুরু হওয়ার পর আমরা আশ্বস্ত হয়েছিলাম; কিন্তু ডা. তন্ময় ঘোষের করোনায় আক্রান্তের খবর আমাদের চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। রাজ্যের অন্যতম প্রধান ডেন্টাল কলেজের অ্যাসিসটেন্ট সুপার টিকা নেওয়ার পর করোনা বিধি মানেন নি— এমন তথ্যও তো পাওয়া যায়নি।’
আর আহমেদ ডেন্টাল কলেজ সূত্র আরো জানিয়েছে, অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপারের স্ত্রীও করোনা আক্রান্ত। বর্তমানে সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজের আইসিইউতে (ICU) চিকিৎসাধীন তারা দু’জন।
তবে টিকা নিয়ে অযথা আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তা অনির্বাণ দোলুই। আর আহমেদ ডেন্টাল কলেজের ঘটনা শুনে তিনি জানিয়েছেন, “ভ্যাকসিন নেওয়ার পরেও কোভিড আক্রান্ত হতে পারেন। এরকম ঘটনা অন্যত্রও ঘটেছে। আতঙ্কের কিছু নেই। ভ্যাকসিন নেওয়ার পর কিছু বিধিনিষেধ রয়েছে, সেগুলি না মানলে ফের আক্রান্ত হতে পারেন।”
টিকা নেওয়ার পরেও আক্রান্ত হওয়ার জন্য সাধারণ মানুষের গা ছাড়া মনোভাবকেই দায়ী করেছেন এই জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তা । তিনি বলেন, বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য—গত কয়েকমাস ধরে সাধারণ মানুষের মধ্যে কোভিড বিধি মেনে চলার ক্ষেত্রে শিথিলতা দেখা যাচ্ছে। তার ফলেই ভুক্তভোগী হচ্ছেন তন্ময় ঘোষের মতো মানুষরা। মাস্ক, স্যানিটাইজার নিয়মিত ব্যবহার করলে এবং দূরত্ব-বিধি মানলে এই বিপদ ঠেকানো যাবে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
এদিকে, টিকা নেওয়ার পরও করোনা আক্রান্ত হওয়ার ঘটনায় প্রশ্ন তুলছেন সাধারণ মানুষ। অনেকেই ভাবছেন, সেই যখন অসুখ হবেই তাহলে টিকা নিয়ে কি লাভ? এ প্রশ্নের উত্তরে অনির্বাণ দোলুই জানিয়েছেন, করোনা ভ্যাকসিন তাৎক্ষণিকভাবে কাজ করে না। এই টিকা নেওয়ার পর এক সপ্তাহ পযর্ন্ত সাবধানতা চালিয়ে যাওয়া দরকার। ভ্যাকসিন রোগ প্রতিরোধের বিরুদ্ধে কাজ করে, এটি শরীরে ভালো প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরিতে কাজ করে। তবে এই সব কিছুর জন্য কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত সময় প্রয়োজন।
বর্তমানে ভারতের টিকা কেন্দ্রগুলোতে কোভ্যাক্সিন এবং কোভিশিল্ড টিকা দেওয়া হচ্ছে। কোন টিকা নেওয়া নিরাপদ— জানতে চাইলে অনির্বাণ দোলুই বলেন, ‘দুটি টিকার কোনওটিরই ১০০ শতাংশ করোনা ঠেকানোর ক্ষমতা নেই। টিকা নিলে সংক্রমণ আর ছড়াবে না, তাও ১০০ শতাংশ নিশ্চিত করে বলা যায় না। টিকা সংক্রমণ নয়, অসুস্থতা এবং তীব্রতার হারকে হ্রাস করে।’