সেন্সরশিপ কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটার কেনার চুক্তি সম্পন্ন করেছেন বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ক। কিন্তু এই ‘ডিজিটাল টাউন স্কয়্যার’ ঘিরে ইলন মাস্কের পরিকল্পনা আসলে কী, সেটি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, সেন্সরশিপের অভাবে সামাজিক যোগাযোগের এই মাধ্যমে ঘৃণাত্মক বক্তব্য-বিবৃতি বৃদ্ধি পেতে পারে।
. . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . . .
নিরঙ্কুশ বাক-স্বাধীনতার সুযোগ টুইটারে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ইলন মাস্ক। এই পদক্ষেপের ফলে আগে স্থগিত হয়ে যাওয়া অ্যাকাউন্ট ফিরিয়ে দেওয়া হবে কি-না তা নিয়ে অনেক ব্যবহারকারীও প্রশ্ন তুলেছেন। এখন পর্যন্ত টুইটারে হাই-প্রোফাইল ব্যক্তি হিসেবে অ্যাকাউন্ট স্থগিত রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের।
কিনে নেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর টুইটারে ঘৃণাত্মক মন্তব্য এবং এই মাধ্যমটি মাস্ককে যে ক্ষমতা দেবে, তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো। ইলন মাস্ক নিজেকে নিরঙ্কুশ বাক-স্বাধীনতাকামী হিসেবে বর্ণনা করেন।
তবে অতীতে এই প্রতিষ্ঠানের মডারেশনের বিভ্ন্নি পলিসির অন্যতম সমালোচক ছিলেন মাস্ক। তিনি বলেছিলেন, টুইটারকে বাক-স্বাধীনতার জন্য প্রকৃত ফোরাম হতে হবে।
চুক্তি সাক্ষরের পর এক বিবৃতিতে মাস্ক বলেন, কার্যকর গণতন্ত্রের ভিত্তি হলো বাক-স্বাধীনতা। এক টুইটে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, ব্যবহারকারীদের সুরক্ষায় টুইটারের নীতিমালা এবং কার্যপ্রণালী ক্ষতি করতে পারে এমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হলে তা উদ্বেগজনক হবে।
গত বছরের ৬ জানুয়ারি ওয়াশিংটনের ক্যাপিটল ভবনে দাঙ্গার পর ডোনাল্ড ট্রাম্পের অ্যাকাউন্ট স্থায়ীভাবে স্থগিত করে টুইটার। তবে টুইটার যদি এই নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়, তারপরও তিনি ফিরবেন না বলে জানিয়েছেন। এর পরিবর্তে তিনি নিজের প্ল্যাটফর্ম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’ ব্যবহার করবেন।
ফক্স নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমি টুইটারে যাচ্ছি না। আমি ট্রুথেই থাকছি।’ তবে ইলন মাস্ক টুইটারের উন্নতি ঘটাবেন এবং তাকে একজন ‘ভালো মানুষ’ বলে অভিহিত করেছেন ট্রাম্প।
তবে এই বিষয়ে জানতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতিনিধির সঙ্গে যোগাযোগ করলেও কোনো সাড়া পায়নি বিবিসি।
বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান টিএফ ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটিজের প্রযুক্তি বিশ্লেষক মিং-চি কুও বিবিসিকে বলেছেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্প যদি ২০২৪ সালের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন, তাহলে তিনি এই প্ল্যাটফর্মে ফেরার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করতে পারেন।’
কুও বলেন, টুইটার যদি তার অ্যাকাউন্ট পুনর্বহালে ইচ্ছুক হয়, তাহলে ট্রাম্পের আওয়াজ তুলে ধরার জন্য টুইটার এখনও উত্তম উপায়। আগামী নির্বাচনের আগে টুইটারের চেয়ে অধিক প্রভাবশালী প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলা সহজ নয়।
লোকজন টুইটার ছাড়বেন?
ইলন মাস্ক বলেছেন, ‘তিনি আশা করছেন যে, এমনকি তার কট্টর সমালোচকরাও এই প্ল্যাটফর্মে থাকতে পারবেন। তার মতে, এর মানেই তো বাক-স্বাধীনতা।’
তবে কিছু ব্যবহারকারী টুইটার ছেড়ে যাওয়ার হুমকি দিয়েছেন এবং অন্যরা ইতোমধ্যে এই মাধ্যম ছেড়েছেন। টেলিভিশন সিরিজ দ্য গুড প্লেসে অভিনয়ের জন্য পরিচিত ব্রিটিশ অভিনেত্রী জামিলা জামিল বলেছেন, তিনি আশা করেছেন এই প্ল্যাটফর্ম আরও বেশি অরাজক, ঘৃণাত্মক, বিদ্বেষপ্রবণ এবং নারীবিদ্বেষী হয়ে উঠবে।
নিজের ১০ লাখ ফলোয়ারের উদ্দেশে জামিল বলেন, ‘আমি চাই, এটাই আমার শেষ টুইট হোক।’ ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ডের পোস্ট-ডক্টরাল গবেষক ক্যারোলিন ওর বুয়েনো বলেছেন, ‘আপাতত তিনি এই প্ল্যাটফর্মে আছেন।’ টুইটারে তার ফলোয়ার আছে সাড়ে ৪ লাখ।
তিনি বলেছেন, ইলন মাস্কের নেতৃত্বে টুইটার কেমন হবে, সে ব্যাপারে আমাদের কোনো ধারণা নেই। আমরা জানি সব ভদ্র মানুষ টুইটার ছেড়ে গেলে, দ্রুতই পরিস্থিতি খারাপ হয়ে যাবে।
সামনে অনিশ্চয়তা
ইলন মাস্কের ৪ হাজার ৪০০ কোটি ডলারে কিনে নেওয়ার প্রস্তাবে সর্বসম্মতভাবে রাজি হয়েছে টুইটারের ১১ সদস্যের পরিচালনা বোর্ড। টুইটারের সহ-প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক ডর্সি, এখনও তিনি এই কোম্পানির পরিচালনা বোর্ডে রয়েছেন। তিনি বলেছেন, টুইটারে জনসাধারণের কথোপকথন অব্যাহত থাকবে। এটি নিয়ে তিনি খুশি।
মঙ্গলবার এক টুইটে তিনি বলেছেন, কোম্পানি নয়, প্রোটোকল স্তরে জনসম্পত্তিতে পরিণত হতে চায় টুইটার। যদিও এটি একটি কোম্পানি হওয়ার সমস্যার সমাধান করা হচ্ছে। তারপরও আমি বিশ্বাস করি, এই সমস্যার একক সমাধান ইলন মাস্ক। আমি তার ধ্যান-ধারণার আলো প্রসারিত করার লক্ষ্যের প্রতি বিশ্বাসী।
ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্সের তথ্য অনুযায়ী, টুইটারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পরাগ আগারওয়াল কর্মীদের সঙ্গে এক বৈঠকে বলেছেন, এই কোম্পানির ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত। চুক্তি হয়ে যাওয়ায় আমরা এখন জানি না এই প্ল্যাটফর্ম কোন দিকে ধাবিত হবে।
রাজনীতিকদের প্রতিক্রিয়া
সোমবার হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জেন সাকি সাংবাদিকদের বলেছেন, মালিকানা অথবা পরিচালনা যার হাতেই থাকুক না কেন, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন দীর্ঘদিন ধরে বৃহৎ সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফর্মগুলোর শক্তি নিয়ে উদ্বিগ্ন।
ডেমোক্র্যাট দলীয় সিনেটর এলিজাবেথ ওয়ারেন বলেছেন, চুক্তিটি আমাদের গণতন্ত্রের জন্য বিপজ্জনক। সম্পত্তি কর এবং বিশাল প্রযুক্তি কোম্পানিকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে শক্তিশালী নিয়ম-নীতি করার সময় হয়েছে।
এদিকে, রিপাবলিকান দলীয় সিনেটর মার্শা ব্ল্যাকবার্ন ইলন মাস্কের টুইটার কিনে নেওয়ার চুক্তিকে বাক-স্বাধীনতার জন্য ‘উত্সাহব্যাঞ্জক দিন’ হিসেবে অভিহিত করে স্বাগত জানিয়েছেন।