গল্পটা সেখানেই শেষ হয়ে গেলে হয়তো আপত্তি করতেন না কেউ।
বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথম ফাইনাল জিতল নিউজিল্যান্ড, জয়সূচক রানটা নিলেন রস টেলর। ক্রিজে সঙ্গী কেইন উইলিয়ামসন। নিউজিল্যান্ডের নতুন দিনের অন্যতম দুই সারথী, ক্রিজে সাক্ষী থাকলেন তৃষিত একটি বৈশ্বিক শিরোপা জয়ের।
টেলর নাকি অবসর নিয়ে ফেলতে পারতেন ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপে ওই ফাইনালের পরই। যদি ফলটা ভিন্ন হতো। শেষ পর্যন্ত টেলর টেস্ট ক্রিকেটকে বিদায় বলেছেন এ বছর বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজ দিয়ে।
তিনি মাউন্ট মঙ্গানুইয়ে বাংলাদেশের বিপক্ষে হারের যেমন সাক্ষী, তেমনি ক্রাইস্টচার্চে বোলার হিসেবে উইকেট নিয়ে বিদায়ী রূপকথা রাঙিয়েছেন। টেলরের বিদায়ী সিরিজে খেলেননি উইলিয়ামসন।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজ স্থগিত হয়ে গেছে। টেলরের জন্য পড়ে আছে শুধু নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ। আর উইলিয়ামসনের সামনে আপাতত চোট প্রতিপক্ষ, লড়াই চলছে।
ফলে টেস্টে টেলর-উইলিয়ামসন একসঙ্গে শেষ ম্যাচটা খেলে ফেলেছেন কানপুরে, গত বছর। রাচিন রবীন্দ্র ও এজাজ প্যাটেলের দশম উইকেট জুটিতে রোমাঞ্চকর ড্রয়ের দেখা পায় কিউইরা।
টেলর-উইলিয়ামসনের একসঙ্গে টেস্ট খেলার গল্পটা তাই শেষ হয়ে গেছে সেখানেই, যেটি হ্যাম্পশায়ার বোউলের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ মঞ্চে হলেও হয়তো আপত্তি করতেন না কেউ।
আজ ক্রাইস্টচার্চে বাংলাদেশ সময় ভোর ৪টায় টম ল্যাথামের নেতৃত্বে নিউজিল্যান্ড যখন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম টেস্ট খেলতে নামবে, তখন থেকে নতুন এক অধ্যায়ের শুরু হবে।
এর আগে ২০০৮ সালে সবশেষ টেলর ও উইলিয়ামসনকে ছাড়াই টেস্ট খেলতে নেমেছিল নিউজিল্যান্ড। বাংলাদেশের বিপক্ষে সে ম্যাচের সময় উইলিয়ামসনের টেস্ট অভিষেকই হয়নি। টেলরের ১১২ টেস্টের ক্যারিয়ারের সেটি ছিল মাত্র ২৩তম।
এরপর দুজন সাক্ষী হয়েছেন নিউজিল্যান্ডের ‘নতুন দিনে’র। ব্রেন্ডন ম্যাককালামের নেতৃত্বে ক্রিকেটে ‘নতুন জোয়ার’ এসেছে তাসমান পাড়ের দেশটিতে।
ম্যাককালামের পর টেলরের হাত ঘুরে নিউজিল্যান্ডের অধিনায়কত্ব এসেছে উইলিয়ামসনের কাছে। ওয়ানডে বিশ্বকাপ, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আক্ষেপ অবশেষে তাঁদের ঘুচেছে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে, ভারতকে হারিয়ে।
টেলর টেস্টকে বিদায় বলেছেন নিউজিল্যান্ডের অনেকগুলোর রেকর্ড সঙ্গী করে। তবে সঙ্গী হয়েছে একটা আক্ষেপও। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে কখনোই টেস্টে জেতা হয়নি। ক্যারিয়ারে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে টেলর খেলেছেন ৮ টেস্ট। এর মধ্যে ৪টি হেরেছে নিউজিল্যান্ড, বাকি ৪টি ড্র।
প্রতিপক্ষ যখন প্রোটিয়ারা, তখন কিউদের রেকর্ডটাই আসলে আক্ষেপের। এখন পর্যন্ত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে কখনোই টেস্ট সিরিজ জেতা হয়নি নিউজিল্যান্ডের। ১৬টি সিরিজের মধ্যে হেরেছে ১৩টি। সবশেষ ছয়টি সিরিজেই হার।
বর্ণবাদ-বিতর্কের পর ১৯৯১ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা ফিরে আসার পর ১১ টেস্ট সিরিজের দশটিতেই হেরেছে নিউজিল্যান্ড।
১৯৩২ সালে প্রথম মুখোমুখি হয়েছিল দুই দল। এরপর থেকে ৪৫ টেস্টে নিউজিল্যান্ড জিতেছে মাত্র ৪টি। টেস্টখেলুড়ে দেশগুলোর বিপক্ষে (আয়ারল্যান্ড ও আফগানিস্তান বাদে) দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেই সবচেয়ে বাজে রেকর্ড নিউজিল্যান্ডের।
সবশেষ বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজ ড্র করার আগপর্যন্ত দেশের মাটিতে নিউজিল্যান্ড অপরাজিত ছিল টানা ৮ সিরিজ। সবশেষ ২০১৭ সালে হেরেছিল দক্ষিণ আফ্রিকার কাছেই। অবশ্য সেবার আবহাওয়ার বদান্যতায় হ্যামিল্টনে সিরিজের তৃতীয় ও সবশেষ টেস্ট হার এড়িয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা।
ক্রাইস্টচার্চে দুই দলই অবশ্য নামছে মোটামুটি একই বিন্দুতে দাঁড়িয়ে। সে অর্থে শক্তিমত্তায় পিছিয়ে থাকার কথা দক্ষিণ আফ্রিকারই। পালাবদলের ছাপ যে বেশ ভালোভাবেই লেগে আছে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সবশেষ খেলা দলে থেকে এবার আছেন মাত্র চার জন—ডিন এলগার, টেম্বা বাভুমা, কেশব মহারাজ ও কাগিসো রাবাদা।
তবে ভারতের বিপক্ষে সবশেষ সিরিজে পিছিয়ে পড়েও দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর পর উজ্জীবিতই থাকার কথা প্রোটিয়াদের। সে সিরিজেও সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন অধিনায়ক এলগার।
অন্যদিকে নিউজিল্যান্ডের লড়াইটা দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে রেকর্ডকে একটু ‘সুশ্রী’ চেহারা দেওয়ার। টেলরের বিদায়ের পর পালাবদলের সামনে দাঁড়িয়ে কিউইরাও। বয়স ৩৫ ছুঁয়ে ফেলেছেন পেসার নিল ওয়াগনার, কাছাকাছি দাঁড়িয়ে টিম সাউদি ও ট্রেন্ট বোল্টও। উইলিয়ামসনের ফিরে ফিরে আসা চোটও ধরেছে অন্যরকম সুর।
তবে ব্যাপারটা যখন পালাবদলের, নিউজিল্যান্ড আশা করতেই পারে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে রেকর্ডটা বদলানোর। তখন উইলিয়ামসন বা টেলর না থাকলে নিশ্চয়ই আপত্তি করবেন না তাঁদের কেউ।