Image default
আন্তর্জাতিক

ট্রিগারে আঙুল : তবে গুলি না ছোড়ার সামান্য সুযোগও রয়েছে

ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে আসন্ন যুদ্ধের যে লক্ষণগুলো সম্পর্কে সতর্ক করা হয়েছিল তা এখন পুরোপুরি প্রস্তুত বলে মনে করা হচ্ছে। সীমান্তের কাছাকাছি ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপন করা হয়েছে। ব্লাড ব্যাংক ঠিক করা হয়েছে বলেও জানা গেছে। এদিকে তথ্যযুদ্ধের অংশ হিসেবে ইউক্রেনের যুদ্ধাপরাধের অভিযোগের একটি দলিল জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে প্রচার করা হয়েছে। এ ছাড়া ইউক্রেনের দনবাসে ক্লোরিন ট্যাংকে ইউক্রেনের সেনাদের হামলার চেষ্টার একটি ভিডিও সামনে এসেছে।

এখন দোনেৎস্ক ও লুহানস্কের রুশপন্থী বিদ্রোহী নেতারা সেখানকার নারী ও শিশুদের রাশিয়ায় সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তাঁরা দাবি করেন, ইউক্রেনে আক্রমণ আসন্ন। দোনেৎস্কে আক্রমণের প্রমাণ হিসেবে একটি গাড়িবোমা বিস্ফোরণের তথ্য দেওয়া হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের পক্ষ থেকে রাশিয়ার ইউক্রেনে আক্রমণের অজুহাত হিসেবে যা বলা হয়েছিল, তার সঙ্গে এর কমবেশি মিল রয়েছে। তবে সীমান্তে সেনা জড়ো করতে ভ্লাদিমির পুতিনের নিরলস প্রচেষ্টার মধ্যেও একটি বিষয় অনুপস্থিত ছিল। তা হচ্ছে, বড় যুদ্ধের জন্য রুশদের প্রস্তুত করার বিষয়টি। এ বিষয়ও এখন পরিলক্ষিত হচ্ছে।

রুশ সেনা ও সামরিক সরঞ্জাম যেভাবে সীমান্তের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, তাদের বার্তা আরও স্পষ্ট হচ্ছে। তবে যুদ্ধের আশঙ্কা আসন্ন বলে মনে হলেও পুতিন এখনো তাঁর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেননি বলেও মনে হচ্ছে।

তবে বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে অন্য ব্যাখ্যাও সম্ভব। গতকাল যেসব ঘটনা ঘটেছে, তাতে ক্রেমলিনের পরিকল্পনার চেয়েও পরিস্থিতি আরও জঘন্য হয়ে দাঁড়াতে পারে।

ক্লোরিন ভিডিওটি যদি যুদ্ধের অজুহাতের জন্য ভুয়া নির্দেশক হয়, তবে তা যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের ভাষ্যকারদের ধারণার তুলনায় অত্যন্ত অপরিণত ও কম বাজেটের প্রচার। এর সঙ্গে অভিনেতা, ধার করা মৃতদেহ ও প্রচারের বিষয়টি জড়িত।

গত বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে উপস্থাপন করা দলিলটিও অত্যন্ত হালকা। এতে ২০১৪ সাল থেকে দনবাসে গোলাগুলিতে বেসামরিক মানুষ মারা যাওয়া ছাড়া অন্য কিছু দাবি করা হয়নি। আগে থেকেই এটা জানা যে দুই পক্ষের গোলাগুলিতে অনেক বেসামরিক মানুষ সেখানে নিহত হয়েছেন যা গণহত্যার আওতায় পড়ে না।

তবে এর মধ্যে সবচেয়ে উদ্বেগজনক ঘটনা হলো লুহানস্ক এবং দোনেৎস্ক থেকে লোকজন সরিয়ে নেওয়া। এতে রাশিয়ার রোস্তভে আকস্মিক শরণার্থী সংকট তৈরি করেছে।

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ এবং রোস্তভ গভর্নর বিষয়টি জানতেন না বলে দাবি করেছেন। তাঁরা এ বিষয় নিয়ে মিথ্যা বলতে পারেন; কিন্তু বিদ্রোহী দনবাসের নেতারা সুযোগটি কাজে লাগানোর বিষয় অসম্ভব নয়। ইউক্রেন সংকট কাজে লাগিয়ে পুতিন তাঁর হাত শক্তিশালী করার জন্য যে পথ বেছে নিয়েছেন, তাতে দনবাসের বিদ্রোহীদের স্বীকৃতি দেওয়া ছাড়া তাঁর উপায় নেই।

জর্জিয়া কলেজের রাশিয়া বিশেষজ্ঞ গেনাডি রুডকেভিচ বলেন, ‘আমি জানি, পুতিনের বিশাল পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এটি পড়া সহজ। কিন্তু পরবর্তী সময়ে ইতিবাচক বা নেতিবাচক যা–ই ঘটুক না কেন, অনেক পক্ষের ওপর এর প্রভাব পড়বে। কেউ কেউ ক্রেমলিনের আদেশ অনুসরণ করতে পারে। আবার অন্যরা হয়তো পুতিনকে আক্রমণ ছাড়া কোনো বিকল্প দেখবে না।’

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এমনভাবে তাঁর পরিকল্পনা করে রেখেছেন, যা নিয়ে প্রত্যেকে জল্পনাকল্পনা করে যাচ্ছেন। একই সঙ্গে পুতিন আলোচনার বিভিন্ন দিক খোলাও রেখেছেন।

ইউক্রেন ও তার মিত্ররা রাশিয়ার দাবি করা ছাড়গুলো বিবেচনায় আনেনি। তাই পুতিন ভাবছেন, তাদের মধ্যে যথেষ্ট ভীতি তৈরি হয়নি এবং এবং যুদ্ধের আগের সময়ে আমরা কী প্রত্যাশা করছি, তার ওপর নির্ভর করছে। ট্রিগারের চারপাশে আঙুল শক্ত হয়ে গেছে, কিন্তু গুলি না ছোড়ার এখনো খুব ছোট্ট ও সামান্য সুযোগ রয়ে গেছে।

Related posts

কিয়েভে ইউরোপের সাত দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা

News Desk

মঙ্গলে ৪৫০ কোটি বছর আগে সমুদ্র ছিল

News Desk

বিশ্ব শাসনের চিন্তা নেই চীন-রাশিয়ার

News Desk

Leave a Comment