চীনের চেংডু শহরের ৩৩ বছর বয়সী জেনিস জাং। সম্প্রতি তিনি বেশ কিছু চাকরির ইন্টারভিউ দিয়েছেন। প্রায় সবগুলো ইন্টারভিউতেই চাকরিদাতারা একটা কমন প্রশ্ন করেছেন। আপনি কি বিবাহিত? জেনিস জাং জানান এমন প্রশ্নের মাধ্যমে চাকরিদাতারা মূলত জানতে চান চাকরির বাহিরে গিয়ে তিনি পরিবারে কতটুকু সময় ব্যয় করবেন। এমনকি তারা জানতে চান সন্তান গ্রহণ নিয়ে চাকরিপ্রার্থীর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা। কতগুলো সন্তান নিতে আগ্রহী চাকরিপ্রার্থী। কতদিন তিনি মাতৃত্বকালীন ছুটি কাটাতে চান। মা হওয়ার পর উক্ত নারী চাকরি ছেড়ে দেবেন কি না, এমন শঙ্কাও আসছে অনেক চাকরিদাতার মনে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এক প্রতিবেদন বলছে, জেনিস জাংয়ের মত সম্প্রতি চীনে অনেক নারী চাকরিগ্রহণ ও কর্মক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হয়েছেন। সম্প্রতি চীনের তিন সন্তান নীতি গ্রহণের ফলে এ সংকট আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করছে, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।
সম্প্রতি চীনে লিঙ্গ বৈষম্যের হার চরমে পৌঁছেছে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপের পরিসংখ্যানে ২০২০ সালে ১শ ৫৬ দেশের মধ্যে চীনের অবস্থান ছিল ১শ সাতে। একই পরিসংখ্যানে ২০০৮ সালে চীনের অবস্থান ছিল ৫৭ তম। লিঙ্গ বৈষম্য বৃদ্ধির পেছনে কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে চীনের অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে। কারণ অর্থনৈতিক অগ্রগতির পেছনে রয়েছে দেশটির সাধারণ মানুষের বাড়তি কর্মঘণ্টা। দেশটিতে অনেকে সপ্তাহে ৬ দিন সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত কাজ করেন।
নারীদের অনেকের মধ্যেই এই অতিরিক্ত কর্মঘণ্টার সাথে মানিয়ে নিতে অনীহা রয়েছে। নারীদের মাতৃত্বকালীন ছুটি দিতে হবে এই ভয়ে অনেকে তাদের নিয়োগের বিষয়ে অনীহা দেখাচ্ছেন। এমনকি যেসব নারীদের ছোট বাচ্চা আছে চীনের কর্মবাজারে তাদের চাহিদাও কম। এদিকে সম্প্রতি চীনের গ্রহণ করা তিন সন্তান নীতি কর্মক্ষেত্রে নারী বৈষম্যের হার আরও বৃদ্ধি করবে।
সম্প্রতি চীনের জনসংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমে যাওয়ায় দুই সন্তান নীতি থেকে বেরিয়ে এসে তিন সন্তান নীতি গ্রহণ করল দেশটি। চলতি বছরের মে মাসে সরকারি হিসাব মতে, ১৯৬০ সালের পর থেকে দেশটিতে জনসংখ্যা উৎপাদন সর্বোচ্চ হারে হ্রাস পেয়েছে। ২০১৫ সালে চীন এক সন্তান নীতি থেকে বেরিয়ে আসলেও উল্লেখযোগ্য হারে বাড়েনি জনসংখ্যা। গতমাসে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার আরও কমেছে। ফলে পূর্বের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে তিন সন্তান নীতিতে স্থির হলো শি জিনপিং সরকার।