ছবি: এপির
পরিমাণ নিয়ে বিভক্ত ইউরোপ
২০২২ সালজুড়ে ইউক্রেনের সমর্থনে রাশিয়ার বিপক্ষে যুদ্ধের আর্থিক ও অস্ত্রের জোগান দিতে গিয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে ২০২৩ সালের শুরুতেই দেখা দিয়েছে অসন্তোষ। এমনকি আরো অর্থ লাগবে বলে নতুন বছরের শুরুতে ন্যাটো যে ঘোষণা দিয়েছে তাতে ইউরোপের অনেক দেশ নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে। এদিকে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে জাপান মস্কোর সঙ্গে আলোচনায় বসার প্রস্তাব দিলেও রাশিয়া তা প্রত্যাখ্যান করেছে। বলেছে, রাশিয়ার স্বার্থের পরিপন্থি বলে মস্কো টোকিওর সঙ্গে বসতে পারে না। খবর- আল জাজিরা, রয়টার্স
ইউরোপজুড়ে অস্থিরতা : রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে ইউরোপজুড়ে অস্থিরতা ক্রমেই চরমে উঠছে। জ্বালানি সংকট থেকে এই অস্থিরতা শুরু হলেও বর্তমানে তা জনজীবনে এসে ঠেকেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউরোপের জনজীবনের এই অস্থিরতা রাজনৈতিক রূপ নিতে পারে। ইউরোপের ঐক্যে যে হারে ফাটল দেখা দিচ্ছে তাতে পূর্ব ইউরোপ এবং পশ্চিম ইউরোপ এই দুই ভাগে বিভক্তি আরো স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
বিভক্ত ইউরোপ : ইউরোপীয় ইউনিয়নে ক্ষমতার ভারসাম্য পূর্ব দিকে সরে যাচ্ছে। রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন এখনো এই যুদ্ধকে বিশেষ সামরিক অভিযান বলছেন, অথচ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ন্যাটো এই যুদ্ধকে
তাদের জীবন-মৃত্যুর প্রতিযোগিতা হিসেবে দেখছে। পশ্চিমারা এই যুদ্ধকে তাদের নিজস্ব নিরাপত্তার জন্য হুমকি বলে মনে করে এবং ইউক্রেনের সার্বভৌমত্বের প্রতিরক্ষার পেছনে তাদের শক্তির সহযোগিতা দেখাতে যাচ্ছে। কিন্তু ইউরোপের অন্য একটি অংশ এই যুদ্ধকে মার্কিন ও রাশিয়ার মধ্যে সংঘর্ষ হিসেবে দেখতে চাচ্ছে। পশ্চিম ইউরোপের কিছু দেশ এই বৃহত্তর খেলায় খেলোয়াড় হয়ে মাঠে থাকতে চাচ্ছে না। কিন্তু পূর্ব ইউরোপীয় কয়েকটি দেশ ও তাদের কিছু এজেন্সি এই খেলায় বেশ এগিয়ে গেছে বলে মনে করছেন অনেক বিশ্লেষক। বিশেষ করে পোল্যান্ড আগের চেয়ে অনেক বেশি প্রভাবশালী খেলোয়াড় হয়ে উঠেছে। এই দেশটি ইউক্রেন থেকে আগত অনেক শরণার্থীকে গ্রহণ করেছে এবং অস্ত্র ও মানবিক সহায়তা সরবরাহ করার জন্য একটি স্থলপথ খুলে দিয়েছে। পাশাপাশি জার্মানি সতর্ক দৃষ্টিভঙ্গি রেখে মস্কোর সঙ্গে তার স্বার্থের মিল ও প্রাধান্য রেখেছে। ফ্রান্সসহ অন্য প্রধান পশ্চিম ইউরোপীয় দেশগুলো রাশিয়া থেকে জ্বালানি নিয়ে যাচ্ছে। ইউরোপের পর্যবেক্ষকরা মনে করেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ মস্কোয় ২০১৮ বিশ্বকাপ ফাইনালের সময় পুতিনের ঠিক পাশে থেকে ফ্রান্সের জন্য উল্লাস করেছিলেন। ইউক্রেনের হামলায় এই উল্লাস কমলেও একেবারে উল্টে যায়নি।
শক্তিশালী হচ্ছে পূর্ব ইউরোপ : এই যুদ্ধ পূর্ব ইউরোপে পুতিনের ‘বন্ধুদের’ ক্ষমতায়ন করেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে টাইমস ম্যাগাজিন। হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবানের জন্য এটি একটি স্বর্গ থেকে আসা সুযোগ ছিল যিনি তৃতীয়বারের জন্য নির্বাচনে জয়লাভ করেছেন। অরবান বেলারুশ এবং ইউক্রেন হয়ে পাইপলাইনের মাধ্যমে হাঙ্গেরিতে আনা রাশিয়ার জ্বালানি তেলের ওপর ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞা থেকে অব্যাহতি তৈরি করতে সক্ষম হন। হাঙ্গেরিয়ার একজন পেশাগত কূটনীতিক অলিভার ভারহেলি মনে করেন, অন্যান্য পূর্ব ইউরোপীয় রাষ্ট্রও এই প্রক্রিয়ায় বেশ সক্রিয় হয়েছে। ইটালির ডানপন্থি প্রধানমন্ত্রী মেলোনি মুখে পশ্চিমাদের সঙ্গে থাকলেও ভেতরে ভেতরে রাশিয়ার স্বার্থ রক্ষা করেই চলছেন। বেলারুশ তো প্রকাশ্যেই রাশিয়াকে সামরিক সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে।
কিয়েভে ইইউর সম্মেলন : ইউক্রেনকে আর্থিক ও মানবিক সহযোগিতা দিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নেতারা আগামী ৩ ফেব্রুয়ারি কিয়েভে ইইউ সম্মেলনের আয়োজন করেছে বলে জানিয়েছে বিবিসি ও রয়টার্স। গত মঙ্গলবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত জানানো হয়। একই সঙ্গে কিয়েভের জন্য ১৮ বিলিয়ন ইউরোর নতুন একটি আর্থিক সহায়তা কর্মসূচির কথাও বলেছেন তারা। কিয়েভ চাইছে এই সহায়তার প্রথম কিস্তি যেন এ মাসেই পাঠানো হয়।
এমকে