২০০৮ সালের ২৬শে নভেম্বর মুম্বাইয়ে সন্ত্রাসী হামলার স্মরণে নেদারল্যান্ডসের হেগে শান্তি প্রাসাদের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে মানবাধিকার সংস্থা দ্য গ্লোবাল হিউমান রাইটস ডিফেন্স। সমাবেশে সংস্থাটি নৃশংস ওই সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায় এবং পাকিস্তানের কাছে ন্যায়বিচার দাবি করে। সংস্থাটির পক্ষ থেকে এক সংবাদ বিবৃতিতে এই তথ্য জানানো হয়। শুক্রবার দুপুরে এই বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু হয়। প্রায় দেড় ঘণ্টাব্যাপী চলে এ সমাবেশ।
বিবৃতিতে বলা হয়, ২০০৮ সালের ২৬শে নভেম্বর পাকিস্তানি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈয়বার (এলইটি) ১০ সন্ত্রাসী সমুদ্র পথে মুম্বাইয়ে আসে এবং তিন দিন ধরে বিভিন্ন জায়গায় মুম্বাইবাসীর ওপর গুলি চালায়। এতে ১৮ জন নিরাপত্তা কর্মীসহ ১৬৬ জন নিহত এবং ৩০০ জনেরও বেশি মানুষ আহত হন। এই সন্ত্রাসীরা পাকিস্তানের করাচি থেকে আরব সাগর পেরিয়ে মুম্বাই আসার জন্য একটি কুবের ফিশিং ট্রলার অপহরণ করে। পরে ট্রলারের সব জেলেকে হত্যা শেষে ক্যাপ্টেনকে হত্যা করে। তারপর স্পিডবোট দিয়ে ভারতের গেটওয়ে অব ইন্ডিয়ার কাছাকাছি আসে তারা। সেখানে তারা পুলিশ ভ্যানসহ গাড়ি ছিনতাই করে এবং নিজেদের লক্ষ্য পূরণ করতে ও ভারতে সর্বোচ্চ ক্ষতিসাধনে তিনটি দলে বিভক্ত হয়।
বিজ্ঞাপন
১০ হামলাকারীর মধ্যে- ইসমাইল খান এবং আজমল কাসাব নামের দুই বন্দুকধারী ছত্রপতি শিবাজি মহারাজ টার্মিনাসে (সিএসএমটি) হামলা চালায়। তারা যাত্রী হলে ঢুকে গুলি চালাতে শুরু করে। এতে ৫৮ জন নিরীহ লোক নিহত হয় এবং ১০৪ জন আহত হয়। এরপর উভয় বন্দুকধারী ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায় এবং রাস্তায় পথচারী ও পুলিশ অফিসারদের ওপর গুলি চালায়। এতে ৮ জন পুলিশ অফিসার নিহত হন। সিএসএমটির পর হামলাকারীদের নতুন লক্ষ্য ছিল হাসপাতাল; কিন্তু হাসপাতালের কর্মচারীরা রোগীদের ওয়ার্ডগুলো বন্ধ করে দেয়। এতে অনেক রোগীর জীবন বেঁচে যায়। পরে ইসমাইল ও কাসাব যাত্রীবাহী একটি গাড়ির দখল নেয়। এরপর তারা একটি পুলিশ চেক পোস্টে এগিয়ে যায় এবং পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। এতে ইসমাইল নিহত হয় এবং কাসাবেক গ্রেপ্তারর করা হয়।
বিবৃতিতে বলা হয়, দক্ষিণ মুম্বাইয়ের জনপ্রিয় বার লিওপোল্ড ক্যাফেতে শোয়েব ওরফে সোহো এবং নাজির ওরফে আবু নামে আরও দুইজন হামলাকারী হামলা চালায়। পরে তারা তাজমহল প্যালেস ও ওবেরয় ট্রাইডেন্ট নামে দুটি পাঁচ তারকা হোটেলে হামলা চালায়। হামলা চালানোর সময় ইউরোপীয় পার্লামেন্টের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কমিটির বেশ কয়েকজন এমইপি তাজ হোটেলে অবস্থান করছিলেন। তবে হোটেল কর্মীদের সতর্কতার কারণে তাদের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তাজ হোটেলের কর্মীরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং জিম্মিদের উদ্ধার করতে সাহসিকতার পরিচয় দেন। ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ কর্মকর্তারা প্রথম দিনেই ৩০০ জন জিম্মিকে উদ্ধার করেন। দুই হোটেলই র্যা পিড অ্যাকশন ফোর্স, মেরিন কমান্ডো (মারকোস) এবং ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ডস (এনএসজি) কমান্ডোরা ঘিরে রাখে। নিরাপত্তা কর্মীরা শেষ পর্যন্ত হোটেলগুলোতে ঢুকতে সক্ষম হন এবং ২৯ নভেম্বর সকালের মধ্যে ৯ হামলাকারীর সবাইকে হত্যা করে। ২০০৯ সালের জুলাইয়ে পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করে যে লস্কর-ই-তৈয়বা (এলইটি) পাকিস্তানের করাচি এবং থাট্টায় এলইটি ক্যাম্প থেকে হামলার পরিকল্পনা ও অর্থায়ন করেছিল। একই বছর, নভেম্বরে পাকিস্তানি সরকার ওই হামলার ঘটনায় সাতজনকে অভিযুক্ত করে, যাদেরকে হামলার পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত থাকায় পূর্বেই গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। ২০১১ সালের এপ্রিলে ওই হামলায় জড়িত সন্দেহে চার পাকিস্তানিকে গ্রেপ্তার করে যুক্তরাষ্ট্র।
দেশটি জানায়, গ্রেপ্তারকৃতরা এলইটিয়ের সদস্য এবং মুম্বাই হামলার পরিকল্পনার সঙ্গে জড়িত ছিল তারা। পাকিস্তানি সরকার প্রথমদিকে এ হামলার সঙ্গে নিজেদের নাগরিকরা জড়িত থাকার বিষয়টি অস্বীকার করলেও পরবর্তীতে স্বীকার করে যে গ্রেপ্তার কাসাব তাদের দেশের নাগরিক। ভারত সরকার ওই সময় হামলায় জড়িতদের বিরুদ্ধে সমস্ত প্রমাণ পাকিস্তান সরকারকে প্রদান করে; কিন্তু হামলার এক বছর পর ভারত সরকার অভিযোগ করে, পাকিস্তানি সরকার তাদের সহযোগিতা করছে না।