পরমাণু যুদ্ধের বল ইইউর দিকে ছুড়লেন পুতিন
আন্তর্জাতিক

পরমাণু যুদ্ধের বল ইইউর দিকে ছুড়লেন পুতিন

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন

জি-৭ বৈঠক শেষে ন্যাটো সেক্রেটারি জেনস স্টলটেনবার্গ বলেছেন, তারা ইউক্রেনকে সব ধরনের সামরিক সাহায্য দেয়া শুরু করবে। এরই মধ্যে তারা আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দেয়া শুরুও করেছে। তিনি রাশিয়ার পারমাণবিক প্রস্তুতির সার্বক্ষণিক তথ্য রাখছেন। এ ধরনের সামান্যতম লক্ষণ দেখা মাত্রই অগ্রিম পরমাণু অস্ত্র ছোড়া হবে।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে রাশিয়া দুটি বিকল্প ছুড়ে দিয়ে বলেছে- বল এখন পশ্চিমাদের হাতে। প্রথমটি হলো- তারা আলোচনার টেবিলে বসতে ইচ্ছুক। গতকাল দেশটির তাস নিউজে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ বলেছেন, রাশিয়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যোগাযোগের রাস্তা থেকে সরে যাচ্ছে না। কিন্তু তারা এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর প্রস্তাব পাচ্ছে না।

পুতিন তার প্রস্তাবে কৌশলে বলেছেন, ইউরোপের গ্যাস সংকটের জন্য দায়ী ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা। তারা চাইলেই আগামী শীতে ইউরোপের উষ্ণতা দেয়া সম্ভব। এই প্রস্তাবে জার্মানিকে নর্ডস্ট্রিম-২ পাইপ লাইন দিয়ে গ্যাস দিতে প্রস্তুত বলে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে আগামী শীতের দরকষাকষির জায়গা অনেকটা পরিষ্কারভাবে ফাঁকা রেখে দিয়েছে রাশিয়া। একই উদ্দেশ্যে তুরস্কের সঙ্গে রাশিয়ার গ্যাস সমঝোতার একটি আলোচনা হয়েছে এই সপ্তাহে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানকে পুতিন বলেছেন, ইইউতে গ্যাস সরবরাহের জন্য তুরস্কের সবচেয়ে ভালো পথ রয়েছে। তুরস্ক হচ্ছে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য রুট এবং সেখানে একটি সরবরাহ হাব তৈরি করা উচিত। তুরস্কের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বক্তৃতাকালে পুতিন বলেন, রাশিয়া থেকে তুরস্কে জ্বালানি সরবরাহ পূর্ণ মাত্রায় প্রবাহিত করা যাবে এবং গ্রাহক দেশের অনুরোধ অনুযায়ী।

দ্বিতীয়টি হলো- সরাসরি পারমাণবিক যুদ্ধের হুমকি। এই হুমকিকে রুশ কর্মকর্তারা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরু বলতেও ছাড়ছেন না। বিশ্লেষকরা বলছেন, এটা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের হাতছানি। কারণ ন্যাটো নেতাদের প্রতি সতর্ক করে পুতিন বলেছেন, বিশ্বের সমস্ত অবকাঠামো ‘সন্ত্রাসী হামলার’ ঝুঁঁকিতে রয়েছে। রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের ডেপুটি সেক্রেটারি আলেকজান্ডার ভেনেডিক্টভ বলেছেন, ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগদানের অর্থ হবে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ‘একটি নিশ্চিত আমন্ত্রণ’। গতকাল বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় টাস নিউজ এজেন্সিকে তিনি বলেন, কিয়েভ ভালোভাবে জানে যে এই ধরনের পদক্ষেপের অর্থ হবে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর বোতামে চাপ দেয়া। ভেনেডিক্টভ রাশিয়ার অবস্থানের পুনরাবৃত্তি করে বলেন, পশ্চিমারা ইউক্রেনকে সাহায্য করা মানেই হচ্ছে তারা আর তৃতীয় পক্ষ নয়, সংঘাতের সরাসরি একটি পক্ষ। ইউক্রেনকে যদি ন্যাটোর সদস্য করা হয়

তাহলে নিশ্চিতভাবেই চলমান সংঘাত তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে রূপ নেবে।

৩০ সেপ্টেম্বর ইউক্রেনের ১৮ শতাংশ রাশিয়ার সঙ্গে অন্তর্ভুক্তির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এর কয়েক ঘণ্টা পরই ন্যাটোতে যোগ দেয়ার বিষয়ে জোর দেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। যদিও ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগ দেয়ার বিষয়টি অনেক সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। কারণ এ ক্ষেত্রে জোটের সব দেশের সম্মতির প্রয়োজন হবে।

গত বুধবার হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি কারিন জিন-পিয়েরে বলেন, বাইডেন এই পর্যায়ে পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করার পরিকল্পনা করছেন না। তবে ওয়াশিংটন বন্দি বিনিময়ের জন্য মস্কোর প্রস্তাব বিবেচনা করতে প্রস্তুত।

এদিকে আলেকজান্ডার ভেনেডিক্টভ বলেন, কিয়েভ ভালো করেই জানে ন্যাটোতে যোগ দেয়ার এমন পদক্ষেপ হবে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত- যা ন্যাটোও অবহিত। যদিও ন্যাটো নেতারা দ্বিতীয় প্রস্তাবটি অর্থাৎ পারমাণবিক যুদ্ধের হুমকিকে আমলে নিয়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থার দিকেই এগুচ্ছে।

এদিকে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেছেন, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়া পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করলে ফ্রান্স তার জবাব দেবে না। তিনি বলেন, আমরা ইউক্রেনকে মানবিক সহযোগিতা করতে ইচ্ছুক। তবে পারমাণবিক সংঘাতে যাব না। পাল্টা কোনো পরমাণু হামলা করব না। তিনি বলেন, আমাদের মতবাদ জাতির মৌলিক স্বার্থের ওপর নির্ভরশীল।

এমকে

Source link

Related posts

লিবিয়ার ভূমধ্যসাগর উপকূলে ৫ শতাধিক বাংলাদেশি আটক

News Desk

কিয়েভসহ অন্যান্য অঞ্চলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা

News Desk

পাকিস্তানে আত্মঘাতী বোমায় সেনাসহ নিহত ৩

News Desk

Leave a Comment