আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলামের বড় ভাই ড. আনোয়ার ইসলাম আর নেই। বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) কানাডার রাজধানী অটোয়ার একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই উপাচার্য। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর।
জানা গেছে, বাথরুমে যাওয়ার পর ডা. আনোয়ারের মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ ঘটে। পরে তাকে অটোয়ার সিভিক হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে জরুরি ভিত্তিতে অস্ত্রোপচার করা হয়। কিন্তু তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।
স্ত্রী ও দুই ছেলেসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন তিনি। তার আরেক ভাই মোরশেদুল ইসলাম আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চলচ্চিত্র পরিচালক। অটোয়ার মসজিদুল বিলালে তার জানাজা হয়েছে। দাফন করা হয়েছে অটোয়া মুসলিম কবরস্থানে।
তিনি বিভিন্ন সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজে জড়িত ছিলেন। আফগান শরণার্থীসহ আর্তমানবতার সেবায় তাকে এগিয়ে যেতে দেখা গেছে।
১৯৭৮ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত তিনি কানাডা বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব এডমন্টনের সভাপতি ছিলেন। বাংলা ছাড়াও ইংরেজি, উর্দু ও আরবি ভাষায় সাবলীল কথা বলা ও লিখতে পারতেন তিনি।
১৯৪৭ সালের ১৯ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন ড. আনোয়ার। ১৯৬৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি সমাজবিজ্ঞানে স্নাতক ও পরের বছর স্নাতকোত্তর পাস করেন।
১৯৭২ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক ছিলেন। পরে আলবার্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে কানাডায় পাড়ি জমান।
পরে ১৯৭৬ সালে কার্লেটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একই বিষয়ে স্নাতকোত্তর ও ১৯৮০ সালে পিএইচডি করেন। এছাড়া সাসক্যাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্বাস্থ্যসেবা প্রশাসন ও হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্বাস্থ্য কর্মসূচি ব্যবস্থাপনার ওপর সনদ অর্জন করেন।
২৫ বছরের বেশি সময় পেশাগত জীবনে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশে কাজ করেছেন ড. আনোয়ার ইসলাম। তিনি ছিলেন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বিশেষজ্ঞ। এছাড়াও জননীতি; জনপ্রশাসন ও ব্যবস্থাপনা; লিঙ্গ ও উন্নয়ন; কর্মসূচি পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনা; আন্তর্জাতিক উন্নয়ন; বৈশ্বিক স্বাস্থ্য; মানসম্মত গবেষণা; স্বাস্থ্য অর্থনীতি ও স্বাস্থ্যসেবা অর্থায়ন এবং গবেষণা ও গবেষণা ব্যবস্থাপনায় তার অসাধারণ দক্ষতা ছিল। এসব ক্ষেত্রে তার গবেষণা অভিজ্ঞতা ছিল ব্যাপক বিস্তৃত।
আরও পড়ুন: এবার থাই ভাষায় বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’
স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করেছেন এই গবেষক। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বেও ছিলেন তিনি। পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে যেমন তিনি কাজ করেছেন, তেমনই কানাডার মতো উন্নত দেশে তিনি পেশাদারিত্বে দক্ষতা দেখিয়েছেন। বিভিন্ন দেশি-বিদেশি সাময়িকীতে তার অসংখ্য গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।
এশিয়া, আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার মতো দেশগুলোতে বিভিন্ন স্বাস্থ্য এবং উন্নয়ন গবেষণা প্রকল্পের তত্ত্বাবধায়ন করেছেন ড. আনোয়ার। অটোয়াভিত্তিক আন্তর্জাতিক উন্নয়ন গবেষণা কেন্দ্র (আইডিআরসি) ও কানাডীয় আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থায় (সিআইডিএ) কাজ করেন তিনি।
টরোন্টোর ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব হেলথ পলিসি অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট, অটোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি অব সোশ্যাল সায়েন্সেসের স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল ডেভলপমেন্ট অ্যান্ড গ্লোবাল স্টাডিজ, ঢাকার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের জনস্বাস্থ্য বিভাগ ও বাংলাদেশের আইসিডিডিআর,বির অ্যাজাংকট প্রফেসর ছিলেন।
এছাড়াও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের জেমস পি গ্র্যান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথের অধ্যাপক ও পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন। হেলথ সিস্টেমস কানাডিয়ান ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাজেন্সির (সিডা) প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন ড. আনোয়ার। তিনি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফ্যাকাল্টি অব লাইফ সায়েন্সেসের আন্তর্জাতিক উপদেষ্টা বোর্ডের সদস্য ছিলেন।