স্কটল্যান্ডে রানি এলিজাবেথের ব্যক্তিগত বাসভবন ব্যালমোরাল প্রাসাদে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করেন কনজারভেটিভ পার্টির নবনির্বাচিত নেতা লিজ ট্রাস। ছবি : বিবিসি
যুক্তরাজ্যে কনজারভেটিভ পার্টির নতুন প্রধান লিজ ট্রাসকে পরবর্তী সরকারপ্রধানের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়েছেন রানি এলিজাবেথ। মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) স্কটল্যান্ডে রানির ব্যক্তিগত বাসভবন ব্যালমোরাল প্রাসাদে গিয়ে তার সঙ্গে দেখা করে দায়িত্ব গ্রহণ করেন কনজারভেটিভ পার্টির নবনির্বাচিত নেতা লিজ ট্রাস।
এর আগে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে রানির কাছে পদত্যাগের কথা জানান বরিস জনসন। খবর বিবিসির।
ফলে একাধিক কেলেঙ্কারি মাধ্যমে জনসনের রাজনৈতিক পতনের যে সূচনা হয়ছিল মাস দুয়েক আগে, তার আজ চূড়ান্ত পরিণতি দেখলো বিশ্ব।
ইউরোপে যুদ্ধ এবং যুক্তরাজ্যে গুরুতর অর্থনৈতিক সমস্যার মধ্যেই ব্রিটিশ সরকার পরিচালনার ভার নিলেন জনসন জমানার এই পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
এর আগে, বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন প্রথা অনুযায়ী ব্যালমোরাল প্রাসাদে গিয়ে রানির কাছে তার পদত্যাগপত্র জমা দেন। সেখান থেকে বেরিয়ে এক বক্তৃতায় তিনি করোনা মহামারি মোকাবিলা, ব্রেক্সিট চুক্তিসহ প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে নিজের অর্জনগুলো তুলে ধরেন। তবে যেসব কেলেঙ্কারির জন্য ক্ষমতা হারাতে হলো, সেসব বিষয়ে কোনো কথা বলেননি জনসন।
গত সোমবার ব্রিটিশ সময় বেলা সাড়ে ১১টায় (বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে ৫টা) ঘোষণা করা হয় যুক্তরাজ্যের নতুন প্রধানমন্ত্রীর নাম। সাধারণ ভোটারদের বদলে এবারের নতুন প্রধানমন্ত্রীকে বেছে নিয়েছেন ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির ১ লাখ ৬০ হাজার সদস্য।
এদিন ভোটের ফলাফল ঘোষণা করেন কনজারভেটিভ পার্টির নির্বাচন পরিচালনা কমিটির (১৯২২ কমিটি) চেয়ারম্যান স্যার গ্রাহাম ব্র্যাডলি। তিনি জানান, এবারের নির্বাচনে ভোট পড়েছে প্রায় ৮২ দশমিক ৬ শতাংশ। এতে ৮১ হাজার ৩২৬টি ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন লিজ ট্রাস। তার প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঋষি সুনাক পেয়েছেন ৬০ হাজার ৩৯৯ ভোট।
এর ফলে, সবশেষ ১১ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর (এডওয়ার্ড হিথের পর থেকে) মধ্যে সাধারণ নির্বাচনে জয়ী না হয়েই ডাউনিং স্ট্রিটে প্রবেশ করা ষষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী হলেন লিজ ট্রাস।
পুরো নাম মেরি এলিজাবেথ ট্রাস। ১৯৭৫ সালের ২৬ জুলাই ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ডে জন কেনেথ এবং প্রিসিলা মেরি ট্রাসের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ছোটবেলা থেকেই পরিচিত ছিলেন এলিজাবেথ নামে। ট্রাসের বয়স যখন চার বছর তখন তার পরিবার স্কটল্যান্ডে চলে আসে।
৪৭ বছর বয়সী ট্রাসের বাবা ছিলেন গণিতের শিক্ষক এবং মা নার্স। ট্রাস অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন, রাজনীতি এবং অর্থনীতি নিয়ে পড়াশোনা করেছেন। লেখাপড়া শেষ করে কিছুদিন অ্যাকাউন্ট্যান্ট হিসেবেও কাজ করেন তিনি। এরপর নামেন রাজনীতিতে। ট্রাস প্রথমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হন ২০১০ সালে।
তিনি প্রাথমিকভাবে ব্রেক্সিট, অর্থাৎ যুক্তরাজ্য ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার বিরুদ্ধে ছিলেন। পরে ব্রেক্সিটের নায়ক হিসাবে আবির্ভূত হওয়া বরিস জনসনকে সমর্থন করেন ট্রাস। ব্রিটিশ মিডিয়া প্রায়ই লিজ ট্রাসকে সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচারের সঙ্গে তুলনা করে থাকে।
টাইমের তথ্যমতে, ২০০০ সালের গোড়ার দিকে বয়সে ১০ বছরের বড় এক কনজারভেটিভ আইনপ্রণেতার সঙ্গে সম্পর্ক ছিল, এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পড়ে লিজ ট্রাসের। কিন্তু ২০১০ সালে দলটির পক্ষ থেকে জাতীয় নির্বাচনে লড়ে বিজয়ী হন এবং ক্রমে দলীয় পদে আসিন হন তিনি।
২০১৪ সালে যুক্তরাজ্যের কনিষ্ঠতম কেন্দ্রীয় নারী মন্ত্রী হিসেবে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের ভার পান ট্রাস। এরপর ২০১৯ সালে দেশটির নারী ও সমতা বিষয়ক মন্ত্রী এবং ২০২১ সাল থেকে পররাষ্ট্র, কমনওয়েলথ এবং উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। ডেভিড ক্যামেরন, থেরেসা মে এবং বরিস জনসনের অধীনে মন্ত্রিসভার বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন লিজ ট্রাস।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হলে দেশে জ্বালানি তেলের মূল্যের ঊর্ধ্বগতির রাশ টেনে ধরার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ট্রাস। তবে কীভাবে তিনি জ্বালানি তেলের মূল্যের ঊর্ধ্বগতি মোকাবিলা করতে চান সে বিষয়ে বিস্তারিত জানাননি। বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাস বলেছিলেন, জনগণ এবং দেশের অর্থনীতি উভয়ের জন্যই জ্বালানি বিল নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা ‘জরুরি’। প্রধানমন্ত্রী হতে পারলে জরুরি বাজেট ঘোষণা করে প্রায় তিন হাজার কোটি পাউন্ড কর কমিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি।
এমকে