প্রতীকী ছবি
ফ্রান্সে আর কয়েকদিন বাদেই শুরু হবে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এ নির্বাচন দুই ধাপে হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এতে দেশটির প্রেসিডেন্ট ইম্যানুয়েল ম্যাক্রোঁ দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য প্রাণপণ লড়াই করছেন। খবর বিবিসির।
প্রার্থী কারা
ফ্রান্সের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মোট প্রার্থীর সংখ্যা ১২ জন। তাদের মধ্যে আটজন পুরুষ ও চারজন নারী। এর মধ্যে প্রধান ছয়জন প্রতিদ্বন্দ্বীর মধ্যে তিনজন ডানপন্থী ও দুজন বামপন্থী।
তবে ইম্যানুয়েল ম্যাক্রোঁকে মধ্যপন্থী হিসেবেই বিবেচনা করা হচ্ছে। তিনি রিপাবলিক অন দ্য মুভ পার্টির প্রতিনিধিত্ব করছেন। তার ডান ও বাম দুই শিবিরের ভোটারদের সমর্থন আছে। অন্যদিকে ভ্যালেরি পেক্রেস ডানপন্থী রিপাবলিকানদের, জ্যঁ-লুক মেলেশঁ অতি বামপন্থী ফ্রান্স আনবাউড থেকে এবং ইয়ানিক জাদো গ্রিন পার্টি থেকে প্রার্থী হয়েছেন।
ফ্রান্সের আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী
পর্যায়ক্রমে বেশ কিছু বড় ধরনের ধাক্কা খাওয়ার পর ফ্রান্সের ঐতিহ্যবাহী বাম রাজনৈতিক দলগুলো এখন আর আলোচনায় নেই। সোশ্যালিস্ট পার্টির ফ্রাঁসোয়া ওলাঁদ ২০১২ সাল থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু তারপর থেকে দলটির জনসমর্থন কমে গেছে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বাম শিবিরের এ বিভাজনের কারণে ইম্যানুয়েল ম্যাক্রোঁ লাভবান হতে পারেন। যদিও ডানপন্থীদের অভিযোগ, ইম্যানুয়েল ম্যাক্রোঁ তাদের নীতি অনুসরণ করছেন।
ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা নির্বাচনী প্রচারণায় বড় ধরনের জায়গা দখল করে নিয়েছে। তবে ভোটারদের কাছে প্রধান ইস্যু জীবন নির্বাহের খরচ বেড়ে যাওয়া।
ফ্রান্সে দুই পর্বের নির্বাচনের সময়সূচি
ফরাসি নির্বাচনী ব্যবস্থা কিভাবে কাজ করে?
ধারণা করা হচ্ছে, দুই দফায় ১৪ দিনের ব্যবধানে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। যদি কোন একজন প্রার্থী প্রথম দফার নির্বাচনে ৫০ শতাংশের বেশি ভোট না পান, তাহলে অপর যে দুজন প্রার্থী সবচেয়ে বেশি ভোট পাবেন তারা পরবর্তী ধাপে অর্থাৎ দ্বিতীয় রাউন্ডের নির্বাচনে অংশ নেবেন। ধারণা করা হচ্ছে, প্রথম দফার নির্বাচনে কেউই ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পাবেন না। প্রথম রাউন্ডের এ ভোট হবে ১০ই এপ্রিল এবং দ্বিতীয় রাউন্ডের ভোট ২৪ এপ্রিল।
ফ্রান্সে ৫০ বছরের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি
প্রধান প্রধান নির্বাচনী ইস্যু
নির্বাচনী প্রচারণার আগে ইউক্রেন যুদ্ধ ফ্রান্সের প্রধান ইস্যুতে পরিণত হয়। কিন্তু এর সঙ্গে সঙ্গে এখন দেশটিতে প্রধান নির্বাচনী ইস্যু হিসেবে জীবন নির্বাহের খরচকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এরপরেই রয়েছে স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, অবসর ভাতা, পরিবেশ ও অভিবাসন।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে ফ্রান্সের বার্ষিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি রেকর্ড পর্যায়ে পৌঁছায় যা দেশটির ৫০ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। পাশাপাশি করোনা মহামারিতে ফ্রান্সে থমকে যাওয়া অর্থনীতি আবারও ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। তবে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি ও মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি পাওয়ায় সর্বস্তরের মানুষের ওপর এর প্রভাব পড়েছে।
ফ্রান্সে বেকারত্বের হার কমে সাত দশমিক চার শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ইউরোজোনের গড় হারের তুলনায় এ হার সামান্য ওপরে রয়েছে। তবে ক্ষমতা গ্রহণের সময় প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন, বর্তমান হার তার খুব কাছাকাছি।
ফ্রান্সে অভিবাসীর সংখ্যা
অভিবাসনের বিষয়ে সরকারি পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, ২০২০ সালে ফ্রান্সে বসবাসরত অভিবাসীর সংখ্যা ছিল ৬৮ লাখ। তাদের এক তৃতীয়াংশ ইউরোপীয় যারা ইউরোপীয়ন ইউনিয়নের সদস্য এবং সদস্য নয় এমন দেশগুলো থেকে ফ্রান্সে গেছেন। মোদ্দাকথা, সবচেয়ে বেশি অভিবাসী ফ্রান্সে গেছেন আলজেরিয়া থেকে। আর তারপরেই মরক্কো ও পর্তুগালের অবস্থান। ডানপন্থী প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারণায় অভিবাসনের বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরছেন। জিম্যো তার নির্বাচনী প্রচারণায় ‘জিরো ইমিগ্রেশন’ নীতি বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। জিম্যোর এমন প্রতিশ্রুতির নিন্দা করেছেন মারি লা পেন। তবে তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ক্ষমতায় গেলে অভিবাসীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে আনার জন্য ‘গণভোট’ আয়োজন করা হবে। অন্যদিকে ফ্রান্সের বর্তমান প্রেসিডেন্ট ইম্যানুয়েল ম্যাক্রোঁ পুলিশ মোতায়েনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেন, তার শাসনামলে ফ্রান্সে অপরাধের বিস্তার কমেছে।
উল্লেখ্য, ফ্রান্সে সমসাময়িক সময়ে বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে। যার কারণে ভোটারদের কাছে নিরাপত্তার বিষয়টি বড় একটি ফ্যাক্টর।
ডি- এইচএ