ছবি: সংগৃহীত
সাত বছর প্রেমের পর প্রেমিকা বন্যা বরুয়াকে বিয়ে করেছেন বাংলাদেশি তরুণ অনির্বাণ চৌধুরী। গত ৩০ সেপ্টেম্বর আসামের ডিব্রুগড়ের জেরিগাঁওয়ে অনুপ চেটিয়ার বাড়িতে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন তারা। কনে ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন ইউনাইটেড লিবারেশন ফ্রন্ট অব আসামের (উলফা) প্রতিষ্ঠাতা গোলাপ বরুয়া ওরফে অনুপ চেটিয়ার মেয়ে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ডেকান হেরাল্ডের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উলফা নেতা অনুপ চেটিয়া বাংলাদেশের কারাগারে বন্দী থাকাকালীন ঢাকার একটি স্কুলে পড়ছিলেন তার মেয়ে বন্যা। সেই সময় স্কুলবন্ধু অনির্বাণের সঙ্গে পরিচয়ের পর তাদের মাঝে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। উভয় পরিবারের সম্মতিতে অনির্বাণ এবং বন্যার বিয়ে হয়েছে। ঢাকার মাস্টারমাইন্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে পড়াশোনা করেছেন তারা। যে সময় তাদের মাঝে প্রেমের সময় গড়ে ওঠে, সেই সময় আসামে উলফাদের বিদ্রোহ ছিল চরমে।
ডেকান হেরাল্ড বলছে, গত ৩০ সেপ্টেম্বর আসামের পূর্বাঞ্চলীয় ডিব্রুগড় শহর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত অনুপ চেটিয়ার জন্মস্থান জেরিগাঁও গ্রামে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন বন্যা বরুয়া ও অনির্বাণ চৌধুরী। আসামের বিদ্রোহী সংগঠন উলফার সঙ্গে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের শান্তি আলোচনায় অংশ নেওয়ার জন্য বন্যার বাবা অনুপ চেটিয়াকে বাংলাদেশ থেকে ফেরত পাঠানোর (২০১৫ সালে) সাত বছর পর এই বিয়ে অনুষ্ঠিত হলো।
উলফার সাধারণ সম্পাদক গোলাপ বড়ুয়া ওরফে অনুপ চেটিয়া বৃহস্পতিবার ডেকান হেরাল্ডকে বলেছেন, ‘আমি কারাগারে থাকায় তাদের সম্পর্কের কথা জানতাম না। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ আমাদের বিপ্লবে যে ধরনের সাহায্য করেছে, সেজন্য আমাদের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা আছে। তাই বিয়েতে আমাদের কোনো আপত্তি ছিল না।’
প্রসঙ্গত, ১৯৭৯ সালে অনুপ চেটিয়া এবং আরও কয়েকজন অসমীয়া যুবক প্রতিবেশি বাংলাদেশ থেকে আসা অবৈধ অভিবাসীদের কারণে সৃষ্ট সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে অস্ত্র হাতে তুলে নেন এবং উলফা গঠন করেন।
উলফা বলেছে, অরক্ষিত সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশিদের অবৈধ অভিবাসনের কারণে আসামের আদিবাসীদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়েছে। সেই সময় আসামে ভারতের সামরিক বাহিনী অভিযান শুরু করলে চেটিয়াসহ উলফার অন্যান্য নেতারা বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন। পরে বাংলাদেশে ক্যাম্প স্থাপন করে ভারতে কার্যক্রম পরিচালনা করে উলফা।
অনুপ চেটিয়া বাংলাদেশে দীর্ঘদিন থাকার পর ১৯৯৭ সালে গ্রেপ্তার হন। ২০১৫ সালে ভারতে ফেরত পাঠানোর আগে তিনি বাংলাদেশে কারাগারে বন্দী ছিলেন। ওই বছর ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে আলোচনার জন্য অনুপ চেটিয়াকে হস্তান্তর করে বাংলাদেশ।
মেয়ের বিয়েতে খুশি অনুপ চেটিয়া বলেন, ‘দুই দেশের মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য আসাম ও বাংলাদেশের ছেলে-মেয়েদের আরও বেশি বিয়ে হওয়া উচিত।’
আসামের অন্যতম আদিবাসী সম্প্রদায় মটোক জনগোষ্ঠীর সদস্য অনুপ চেটিয়া। উলফা নেতার মেয়ের সাথে বাংলাদেশি তরুণ অনির্বাণের বিয়ে মটোক সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী রীতিনীতি মেনে হয়েছে বলে জানিয়েছে ডেকান হেরাল্ড।
অনির্বাণ চৌধুরী বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন শহরে কর্মরত আছেন। আগামী ১৫ নভেম্বর মেলবোর্নের একটি মন্দিরে তাদের বিয়ের একটি অনুষ্ঠান হবে। বিয়ের পর এই দম্পতি মেলবোর্নে বসবাস করবেন বলে জানিয়েছেন অনুপ চেটিয়া।
এমকে