ফিলিস্তিনে অবস্থিত বিশ্বখ্যাত দুটি গণমাধ্যমে হামলার বিষয়ে কথা বলেছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহু। তিনি জানিয়ছেন, আল জালা টাওয়ারে সংবাদমাধ্যম কার্যালয়ে হামলা চালানোর আগে নিরীহ মানুষদের সরিয়ে নেওয়ার সময় দেওয়া হয়েছিল। অপরদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ফোন পাওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে হামলা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন নেতানিয়াহু।
গতকাল শনিবার নেতানিয়াহুর অফিস এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে। এতে আরও বলা হয়; প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘গাজায় হামাস ও অন্যান্য গোষ্ঠীর সঙ্গে জড়িত নয় এমন মানুষদের ক্ষতি করছে না ইসরাইলির বাহিনী।’
ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ঘোষণা দিয়েছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত না ইসরায়েলের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে ততক্ষণ পর্যন্ত হামাসের ওপর হামলা চলতে থাকবে।
ফেসবুক পোস্টে নেতানিয়াহু লিখেছেন, ‘আমি সন্ত্রাসবাদী মাথাগুলোকে বলি, তোমরা লুকিয়ে থাকতে পারবে না। মাটির উপরেও নয় এবং মাটির নিচেও নয়। কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না। আমরা সন্ত্রাসের টাওয়ার ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছি। এই টাওয়ারগুলো সন্ত্রাসী সংগঠনের সদর দপ্তর এবং অফিস হিসেবে ব্যবহার করা হতো। হামাস নেতাদের ঘরবাড়িও ধ্বংস করে দিচ্ছি। হামাস ও ইসলামী জিহাদের সন্ত্রাসীদের লক্ষ্যবস্তুতে আমরা আঘাত করছি। আমরা কোনো নিরাপরাধ মানুষকে হত্যা করছি না। যতদিন না আমরা আমাদের লক্ষ্য পূরণ করছি এবং ইসরায়েলের সকল নাগরিকদের শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছি ততদিন পর্যন্ত এই অপারেশন চলবে।’
গতকাল শনিবার মাত্র এক ঘণ্টার নোটিশে হামলা চালিয়ে ফিলিস্তিনের গাজায় মার্কিন গণমাধ্যম অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) ও কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার কার্যালয়কে গুঁড়িয়ে দেয় ইসরাইলি বাহিনী। ইহুদি রাষ্ট্রটির বিমান বাহিনী টুইট করে দাবি করে, ওই বহুতল ভবনটি মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হতো। সেখানে হামলার আগে সতর্ক করা হয়। হামাসের সশস্ত্র গোয়েন্দা শাখার সরঞ্জাম ওই ভবনে রাখা হতো।
হামলার প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জেন সাকি বলেন, ‘সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সর্বজনীন দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।’ এই প্রতিক্রিয়ার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহু। তার কার্যালয় থেকে দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ক্ষতি এড়াতে ইসরাইল এসব করছে বলে বাইডেনকে জানান প্রধানমন্ত্রী। এ সময় বাইডেন তাকে নিজ সমর্থনের কথা জানান। পরে হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের অব্যাহত হামলা সমর্থন দেওয়ার জন্য বাইডেনকে ধন্যবাদ জানান নেতানিয়াহু।
হামলার ঘটনার পর আল জাজিরার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘আল জাজিরাকে নীরব করা যাবে না। সে বিষয়ে এখন আমরা গ্যারান্টি দিতে পারি।’ এ বিষয়ে এপির প্রেসিডেন্ট ও সিইও গ্যারি প্রুইট বলেন, ‘এটি একটি অবিশ্বাস্যভাবে গোলমেলে ঘটনা। অল্পের জন্য আমাদের কোনো প্রাণ হারাতে হয়নি।’
হামলার ঘটনাটির একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। সেটিতে দেখা গেছে, ইসরায়েলের বিমান হামলায় কিছুক্ষণের মধ্যেই ভবনটি মাটির সাথে মিশে যায়। ধোঁয়ার কুণ্ডলীতে ছেয়ে যায় ভবনের চারপাশ। আল জাজিরার সংবাদকর্মী সাফওয়ান আল কাহালুত বলেন, ‘আমি ওই ভবনে ১১ বছর কাজ করেছি। ভবনটির ছাদ থেকে বহু লাইভ সম্প্রচার করেছি আমরা। চোখের সামনে তিনটি ক্ষেপণাস্ত্র এসে ভবনটিতে আঘাত করে। এরপরই হুড়মুড়িয়ে ধসে পড়ে। দুই সেকেন্ডের মধ্যে সবকিছুই শেষ হয়ে গেল।’
টানা ষষ্ঠ দিনের মতো ইসরায়েলি হামলায় এ পর্যন্ত ১৪০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া হামলায় আহত হয়েছেন হাজারের বেশি মানুষ। পাশাপাশি বহু ফিলিস্তিনিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।