ফুটবলে আইন আছে ১৭টি। আন্তর্জাতিক ম্যাচ বা ঘরোয়া ফুটবলের সর্বোচ্চ আসরের জন্য ১৭টি আইনই নিশ্চিত করতে হয়। ভালো ফুটবলের জন্য ভালো মাঠের কোনো বিকল্প নেই বলে ১ নম্বর আইনেই রাখা হয়েছে খেলার মাঠকে।
এর জন্য আয়তনও নির্দিষ্ট করে দিয়েছে বিশ্ব ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা ফিফা। একটি আন্তর্জাতিক মাঠের দৈর্ঘ্য হতে হবে ১০০ থেকে ১১০ মিটার ও প্রস্থ ৬৪ থেকে ৭৫ মিটারের মধ্যে।
এ আইনটাকে সামনে আনা বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনা স্টেডিয়ামের মাঠকে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য। ইতিহাসের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে বসুন্ধরা কিংস ক্লাব ও তাদের মালিকানাধীন বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনা স্টেডিয়াম। আগামীকাল বিকেল তিনটায় বসুন্ধরা কিংস ও পুলিশ ফুটবল ক্লাবের বিপক্ষে ম্যাচে ‘কিক অফ’ হওয়ার মধ্য দিয়ে দেশের ক্রীড়া ইতিহাসে ঢুকে যাবে এ দুটি নাম।
নিজেদের মাঠে অনুশীলনের ফাঁকে জোনাথন ফার্নানদেজ , মাসুক মিয়ারা
নিজেদের মাঠে অনুশীলনের ফাঁকে জোনাথন ফার্নানদেজ , মাসুক মিয়ারাছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ ২০০৭ সালে খাতা–কলমে পেশাদার ফুটবলে পা রাখলেও এর অন্যতম শর্ত হোম ভেন্যু হিসেবে নিজস্ব মাঠ এত দিন বাংলাদেশের কোনো ক্লাবেরই ছিল না। বাংলাদেশের ইতিহাসে এবার প্রথমবারের মতো নিজেদের মালিকানাধীন মাঠে প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচ আয়োজন করতে যাচ্ছে বসুন্ধরা কিংস। কৌতূহলী ফুটবলপ্রেমীদের অনেকেরই প্রশ্ন, কিংস অ্যারেনা স্টেডিয়ামের মাঠের আয়তন কত?
দৈর্ঘ্য ১০৫ মিটার ও প্রস্থ ৬৮ মিটার। বিশ্বের অনেক বড় বড় ক্লাবের মাঠের আয়তনও এমনটাই। স্পেনের বিখ্যাত ক্লাব বার্সেলোনার স্টেডিয়াম ক্যাম্প ন্যু আর রিয়াল মাদ্রিদের স্টেডিয়াম সান্তিয়াগো বার্নাব্যুর মাঠের আয়তনও ১০৫*৬৮ মিটার। ইংল্যান্ডে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের ওল্ড ট্রাফোর্ড, ম্যানচেস্টার সিটির ইতিহাদ স্টেডিয়ামসহ আরও অনেক মাঠের আয়তনও তা-ই।
তবে এর চেয়ে দৈর্ঘ্য-প্রস্থে ছোট মাঠে খেলে লিভারপুল ও চেলসি। অ্যানফিল্ড স্টেডিয়ামের মাঠের প্রস্থ ৬৮ মিটার হলেও দৈর্ঘ্য ১০১ মিটার। চেলসির স্টামফোর্ড ব্রিজের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ যথাক্রমে ১০৩ ও ৬৭ মিটার।
দেশের ফুটবলপ্রেমীদের আপাতত সব আকর্ষণ কিংস অ্যারেনা স্টেডিয়াম নিয়ে। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় বসুন্ধরা স্পোর্টস কমপ্লেক্সের আওতাধীন ৫০ বিঘা জমির ওপর কর্মযজ্ঞ চলতে থাকা নতুন স্টেডিয়ামটির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য বুধবার দুপুরে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেছিল বসুন্ধরা কিংস।
স্টেডিয়ামের প্রবেশ মুখে স্বাগত জানানোর জন্য বিলবোর্ডে দাঁড়িয়ে আছেন তপু বর্মণ, রবসন দি সিলভারা। তাঁদের অভ্যর্থনার জবাব দিয়ে মাঠে ঢুকলেই চোখ জুড়িয়ে যাবে দেশীয় দূর্বাঘাসে কার্পেটের মতো বিছানো সবুজ মাঠটি দেখে। উন্নতমানের পানিনিষ্কাশন ব্যবস্থা রাখার জন্য ঘাসের নিচে আছে সাতটি স্তর। স্টেডিয়াম কর্তৃপক্ষের দাবি, মুষলধারে বৃষ্টি হলেও পানি জমার কোনো সম্ভাবনা নেই।
সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন বসুন্ধরা কিংস ক্লাবের সভাপতি ইমরুল হাসান
সংবাদ সম্মেলনে কথা বলছেন বসুন্ধরা কিংস ক্লাবের সভাপতি ইমরুল হাসানছবি: সংগৃহীত
ইউরোপিয়ান ফুটবলের আদলে তৈরি ড্রেসিংরুমে ঢুকলে চোখে পড়বে প্রশংসনীয় অন্দরসজ্জা। টাচলাইনের পাশে শোভা পাচ্ছে দৃষ্টিনন্দন ডাগআউট। মূল পরিকল্পনায় ১৪ হাজার আসনসংখ্যা থাকলেও বর্তমানে আছে ৭ হাজার।
কিংস অ্যারেনার মূল বিশেষত্ব হলো আধুনিক ফুটবল স্টেডিয়ামের মতো আছে আইস বাথের ব্যবস্থা। অর্থাৎ কঠোর অনুশীলন ও ম্যাচের পর দ্রুত ফুরফুরে হওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে মাঠেই। অথচ এমন স্টেডিয়ামকেই ভেন্যু হিসেবে বেছে নিতে অনেক নাটক উপহার দিয়েছে বাফুফে।
এ প্রসঙ্গ উঠতে বসুন্ধরা কিংসের সভাপতি ইমরুল হাসান বলেন, ‘পেশাদার লিগের প্রথম শর্ত হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে ম্যাচ হবে। সুতরাং হোম ম্যাচে হোম টিম সুবিধা পাবে, আমরাও সেটা পাব। শেষ পর্যন্ত বাফুফে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শুরুতে যে ভুলটুকু ছিল, তা শুধরে নিয়েছে।’ সবকিছু পেছনে ফেলে সামনে তাকাচ্ছেন ইমরুল হাসান, ‘দেশের প্রথম দল হিসেবে নিজেদের মাঠে খেলবে কিংস, এটা আমাদের জন্য ভীষণ গর্বের।’
করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে হচ্ছে খেলা। তবে কালকের ম্যাচে কয়েকজন আমন্ত্রিত অতিথির জন্য স্মারক টিকিটের ব্যবস্থা রেখেছে বসুন্ধরা।