কাতারে বিশ্বকাপ ফুটবলের উদ্বোধনী খেলায় সৌদি আরবের প্রভাবশালী যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান যখন ফিফা প্রেসিডেন্টের পাশের আসনে বসেন তখন তার ভাগ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আসে। এমনকি মঙ্গলবার আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে সৌদি দল সাফল্যের মুকুটে আরেকটি পালক যুক্ত করার আগেই তার সৌভাগের দুয়ার খুলে গেছে।
গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ বলে পরিচিত এই গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্টে ফিফা সভাপতির পাশে বসে খেলা দেখা যেকোন অতিথির জন্য সবচেয়ে ভালো অবস্থান। আর এই অবস্থান সৌদি আরবের ডি ফ্যাক্টো শাসককে পুনরায় আন্তর্জাতিক মঞ্চে ফিরিয়ে এনেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
বৈশ্বিক জ্বালানি নিয়ে শঙ্কা এবং পরাশক্তিগুলো ইউক্রেন যুদ্ধ এবং চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের উত্তেজনায় মনোযোগী। এমন অবস্থায় বিশ্বের শীর্ষ তেল রফতানিকারক দেশটি নিজেদের ভূরাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ পুনরায় হাজির করছে।
গত সপ্তাহে ২০১৮ সালের সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যায় যুক্তরাষ্ট্রে বিচার থেকে দায়মুক্তি এবং ইরানি হুমকির বিষয়ে সৌদি আরবের নিরাপত্তা নিয়ে প্রকাশ্যে সতর্ক করার মধ্য দিয়ে যুবরাজ যুক্তরাষ্ট্রের বিরাগভাজন হওয়ার পথ থেকে সরে এসেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অথচ মাত্র এক সপ্তাহ আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জুলাই মাসে তেল ইস্যুতে আলোচনার বিষয়ে সৌদি যুবরাজকে অভিযুক্ত করে ‘পরিণতি’ নিয়ে সতর্ক করেছিলেন। ওই বৈঠকের পর বাইডেন অঙ্গীকার করেছিলেন সৌদি আরবের ডি ফ্যাক্টো নেতাকে ‘একঘরে’ করা হবে।
চলতি মাসে মোহাম্মদ বিন সালমান কায়রোতে কপ২৭, বালিতে জি২০ এবং ব্যাংককে এপিইসি সম্মেলনে হাজির হয়েছেন। এসব সম্মেলনে তিনি অংশ নিয়েছেন কাতারে উপস্থিত হওয়ার আগে। কাতারি কর্মকর্তাদের অতীতের বক্তব্য অনুসারে, ২০১৭ সালে এই প্রতিবেশীকে দখলের কথা বিবেচনা করেছিলেন তিনি।
এমবিএস নামে পরিচিত যুবরাজ জুলাই মাসে প্যারিসে বৈঠক করেছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে। কিছুদিনের মধ্যে তিনি রিয়াদে স্বাগত জানাবেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে।
দেশে চলচ্চিত্র প্রেক্ষাগৃহ, কনসার্ট ও তরুণদের জন্য কর্মসংস্থানের উদ্যোগ নিয়েছেন যুবরাজ। মঙ্গলবার আর্জেন্টিনাকে ২-১ গোলে হারানোর ফলে সৌদি আরবের তার ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল হবে।
তবে পশ্চিমাদের সঙ্গে রাজনৈতিক বিরোধে এমবিএস জয় পেয়ে গেছেন বলার মতো সময় এখনও আসেনি। যুক্তরাষ্ট্র বা বেশিরভাগ ইউরোপীয় দেশে এখনও হয়ত তিনি অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন মঙ্গলবার বলেছেন, সৌদি যুবরাজের দায়মুক্তির বিষয়টি সৌদি আরবের সঙ্গে ওয়াশিংটনের সম্পর্ক পুনর্বিবেচনার কথা বলছে না, এই পুনর্বিবেচনা চলমান রয়েছে।
কিন্তু শীতকাল চলে আসায় পশ্চিমা অর্থনীতিগুলো জ্বালানি স্থিতিশীলতার জন্য মরিয়া। ফলে সৌদি আরবের সঙ্গে পশ্চিমাদের সম্পর্কের সবক্ষেত্রে সৌদি যুবরাজের ভূমিকা অস্বীকার করার উপায় নেই।